কেন এই হরতাল?

তেমনি আমারও আছে । হরতালে জন জীবন বিভিন্ন ভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পশ্চিমা শিল্প প্রধান দেশগুলো প্রতিবাদের ভাষাসরূপ কর্মবিরতি বা স্ট্রাইক করে থাকে। আর আমাদের দেশে হরতাল করা হয়, ওদের দেশে সবাই অনুধাবন করে যে এখন প্রতিবাদের সময় আর আমাদের দেশের মানুষ সম্ভবত বোঝেনা কখন প্রতিবাদ করতে হবে। তাদেরকে বলে দিতে হয় তোমাকে কিন্তু গ্রাস করছে তোমার প্রতিবাদ প্রতিরোধ করা দরকার। তবুও তাদের না। আর একটা কারনে হরতাল হয় তা হলো বিরোধী দলের সার্থ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে, যার উপাদানে থাকেনা দেশের বড় কোনো স্বার্থ, থাকে নেতা নেত্রীদের সার্থ রক্ষা। তাদের হরতালের কারনে যেন পশ্চীমারা অখুশী হন এমন হরতাল তারা করেন না। এমনই হরতাল করল তেল, গ্যাস খনিজ সম্পদ, বন্দর রক্ষা জাতিয় কমিটির অর্ধ দিবস হরতাল। আমাদের  প্রধান দুই দল এ হরতালের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে এটা আবারও প্রমান করলো তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমেরিকানদের কত বেশি ভ’মিকাবান মনে করেন।

আসুন দেখি হরতালের বিষয় বস্তু কি? বাংলাদেশ সরকার মার্কিনি বহুজাতিক কোম্পানি কনকো-ফিলিপসর সাথে একটা চুক্তি সম্পাদন করেছে ওই চুক্তিতে বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রের ১০,১১ নং ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তলনের দায়ীত্ব দেয়া হয়েছে। এ চুক্তিতে যা আছে তা হলো বাংলাদেশ মোট গ্যাসের ২০ ভাগের বেশি দাবি করতে পারবে না। তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির বিধান আছে। বাপেক্স সহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গ্যাসের দাম প্রতি হাজার ফুট ২৫টাকা কনকো ফিলিপস থেকে কিনতে হবে ৩১০ টাকায়। প্রতি বছর কতটুকু গ্যাস উত্তলন করা হবে তা নিধারন করবে বিদেশী কোম্পানী। আইন অনুযায়ী জাতিয় সংসদে আলোচনার মাধ্যমে এমন চুক্তিতে অংশ নিতে হয়। কিন্তু সরকার সংসদে কোনো আলোচনা না করেই চুক্তি চুড়ান্ত করেছে। এবং তার বিষয় বস্তু গোপন রাখছে। কনকো-ফিলিপস প্রথমিক পযায়ে এ খাতে বিনিয়োগ করছে৭৭০কোটি টাকা , বাংলাদেশের জন্য কি এটা এমন কিছু টাকা যেখানে সরকার বিনিয়োগ করতে পারবে না? এ পর্যন্ত বাপেক্স ও পেট্রোবাংলা ১৭ টি কুপ খনন করে, ৯টি গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কার করেছে। তারপরও বিভিন্ন সময়ে আওমীলীগ-বি,এন,পি অসম চুক্তি করে ১২ টি গ্যাস ব্লক বিদেশীদের  হাতে তুলে দিয়েছে। ফলে বেশি দামে গ্যাস কিনে আমাদের লোকসান দিতে হচ্ছে ২৫০০ কোটি টাকা। যে কারনে গ্যসের দাম প্রতিনিয়তই বাড়ছে। স্থলভাগ থেকে গ্যাস তোলার জন্য বাপেক্স ২৭৭ কোটি টাকার  প্রস্তাব দিয়েছে কিন্ত সে প্রস্তাবে সারা না দিয়ে  নিজেদের টাকায় ২৮০ কিলোমিটার পাইপ লাইন বসিয়ে ইজারাদারদের কাছ থেকে গ্যাস ক্রয় কতটুকু যুক্তি যুক্ত? এই ২৮০ কি.মি. পাইপ লাইনের খরচ বহন করতে হবে আমাদেরকেই, তা আবার নির্মান করবে উত্তলনকারী কোম্পানি। আর একটা ব্যাপার হচ্ছে এত গভীর সাগর থেকে ওরা কি পরিমান গ্যাস তুলে নিয়ে যাচ্ছে সেটা পর্যাবেক্ষন করা অসম্ভব তবে বিজ্ঞানিরা ধারনা করছেন যদি কঠিন পর্যবেক্ষন সম্ভব হয় তাহলে ৮০ ভাগ গ্যাস মার্কিন কোম্পানির বেধে দেয়া মুল্যে কেনা সম্ভব, নতুবা তারা তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করবে। এ চুক্তি অন্যতম ঝুকিপূর্ন দিক হলো পেট্রোবাংলাকে এচুক্তির বাতিলের ক্ষমতা দেয়া হয় নাই।  তাই তারা এচুক্তির বাতিল করতে পারবে না।

এমন সব জন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সম্পৃক্ত কারনে যখন দাবি জানান হয় তখন সরকারের কাছ থেকে কোন রকম সারা পাওয়া যায়না, বরং তারা নিরবে এসব বিষয় ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। এত জনগুরুত্বপূর্ন বিষয়ের পাশ কাটিয়ে যখন আন্দলনকারিদের ধর মার শুরু করে তখন তো স্পষ্টই হয়ে যে এ চুক্তিতে তাদের কত স্বার্থ জড়িয়ে আছে। সরকার কেনইবা  এমন চুক্তি করবে, নিশ্চই এখানে সরকারের স্বার্থ আছে। সরকার আসলে আমেরিকাকে খুশি করতে চায়, কারন সরকার বিশ্বাস করে ক্ষমতার রাজনীতিতে জনগনের ভূমিকা নেই, আছে বিদেশী মহাজনদেও কারিশমা। অন্য দিকে আমেরিকা বিরোধী দলিয় নেত্রীকে তাদের দেশে আমন্ত্রন জানায়, এতে করে সরকারের ঘুম হারাম হয়ে যায়। আমেরিকাও মজার খেলায় মেতে ওঠে, বি,এন,পিকে হাতে রেখে সরকারের চাপ বারিয়ে দেয়। এছাড়া এদেশে বিদেশী কম্পানী গুলোর দালালেরাতো আছেই, যারা সরকারের ভেতরে বাইরে শক্ত অবস্থানেই আছে। কমিশন ভোগী এসব দালালদের বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবেই চেনে এবং এসব কর্তা ব্যক্তিদের একবার “ম্যানেজ” করতে পারলে সব ঠিক। তাই বিদেশীদের এসব খেলা খেলতে সমস্যা হয়না।

তেল, গ্যাস, বন্দর জাতিয় বিষয় নিয়ে যখন সরকার এমন নিজেদের সার্থনেস্বি খেলা খেলবে তখন দেশপ্রেমিক বসে থাকবে কেন? আন্দলনতো করবেই। এদেশের আন্দলনের চুড়ান্ত একটা রূপ হচ্ছে হরতাল, কারন সরকারতো এসব দেশ প্রেমিক, গুনিজনদের আন্দলনকে কোন রকম তোয়াক্কাই করে না। বরং তারা আন্দলনকে টোকাইদের আন্দলন বলে অবহিত করেন। আমার একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন জনগনের কাছে, ড. আনু মুহাম্মদ, রাজেকুজ্জামান রতন,অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসিমা আখতার হোসাইন এবং জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এরা সবাই কি টোকাই? যারা এসব মন্তব্য করে তারাতো দুর্বিত্ত থেকেও অধম কেননা তারাতো দেশের নিজেদের সম্পদকে বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে লজ্জা পান না। ৭১ সালে রক্তাক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের  রাজাকারদের সাথে এদের মৌলিক পার্থক্য কোথায়? ৭১ এর রাজাকারেরা মা, বোনদের ইজ্জত পাকসেনাদের হাতে তুলে দিতো আর এরাতো পারলে দেশকেই আমেরিকানদেও হাতে তুলে দেয়।

দেশের এমন ভয়াবহ করুন অবস্থায় প্রতিবাদের ভাষা সরূপ যৌক্তিক দাবিতে হরতাল করা কি খুব অন্যায়? জাতি কিন্তু দেখেছে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করে আওয়মীলীগ কত বার অযৌক্তিক হরতাল করেছে। মাত্র অর্ধ দিবস নিয়েই যাদের এত কথা তাদের ভূলে গেলে চলবেনা তারা কত বার অযৌক্তিক হরতাল করেছে কত মানুষের প্রান দিতে হয়েছে তাদের স্বার্থে।