২ যুগ ধরে বেদখল ঝালকাঠি বাস টার্মিনাল

সাল থেকেই বেদখল হয়ে আছে। বাস টার্মিনালে যাত্রীদের কোন ধরনের দখল নেই বললেই চলে। কারন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতি এবং শ্রমিক সংগঠনের একাধিক অফিস বানিয়ে দখল করে নিয়েছেন কর্তা ব্যক্তিরা। নিয়মানুযায়ী বাস টার্মিনালটি যাত্রীদের সুবিধার্থে পৌরসভা নির্মান করলেও তা নিয়ে সেখানে চলছে রীতিমত রাজনীতি। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে যাত্রীরা এসে টার্মিনালে গিয়ে দাড়াবার স্থান টুকুও খুঁজে পায়না। কারন সেখানটিতে রয়েছে বাসের কর্তা ব্যক্তিদের গর্জিয়াস অফিস। ঝালকাঠি যাত্রী কল্যান সমিতিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন অবিলম্বে বাস টার্মিনালটির অবৈধ দখলমুক্ত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

জানাগেছে, ১৯৮৮ সালে বাসষ্ট্যান্ডের দক্ষিনপাশে পৌরসভার অর্থায়নে কয়েকটি কক্ষ বিশিষ্ট টার্মিনাল নির্মিত হলে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আলতাফ হোসেন এটি উদ্বোধন করেছিলেন। কিন্তু সেখানে যাত্রীরা আজ পর্যন্ত দাড়াবার স্থানটুকুও পাচ্ছেনা। গত জোট সরকার আমলে তৎকালীন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর জিয়া উদ্দিন মিজান বাস মালিক সমিতির সেক্রেটারী থাকাকালে অফিস কার্যালয়টি টার্মিনালের বাইরে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে অফিসটি পরিবর্তন করে বাস টার্মিনালে ফিরিয়ে নিয়ে যান কর্তা ব্যক্তিরা।

সূত্রমতে, ঝালকাঠি বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতি প্রতিষ্ঠার পর ৩-৪জন কর্তা ব্যক্তি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সভাপতি- সেক্রেটারীর পদ আকড়ে ধরে রাখছেন। যার ফলে সমিতিতে নতুন মুখের আবির্ভাব না ঘটায় মানষিকতার পরিবর্তন ঘটেনি। প্রতিদিন ঝালকাঠি বাসষ্ট্যান্ড থেকে হাজার হাজার যাত্রী দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়া আসাকালে এ বিড়ম্বনায় পড়ে থাকেন। তারা ব্যাগ ব্রিফকেস নিয়ে টার্মিনালে গিয়ে পুনরায় ফিরে আসতে বাধ্য হন। ঝালকাঠির বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন বাস টার্মিনালটি দখলমুক্ত করে যাত্রীদের স্বার্থে উম্মুক্ত করার দাবী জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব এ্যাডভোকেট খাঁন সাইফুল্লাহ পনির বাস টার্মিনালের দূরাবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, এটি বাস মালিক কিংবা কোন শ্রমিক সংগঠনের নয়। এটি সাধারণ যাত্রীদের জন্য উম্মুক্ত থাকার কথা। তিনি দখলদারদের উম্মুক্ত করে দেয়ারও দাবী করেন। ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর বলেন, বাস মালিক ও শ্রমিকদের কাছে এখানকার যাত্রীরা জিম্মি। এছাড়া জোড়পূর্বক অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যাত্রী হয়রানীতো রয়েছেই। তিনি এ থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী করেন। ঝালকাঠি সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইঞ্জি: মোস্তফিজুর রহমান বলেন, বাসষ্ট্যান্ড আধুনিকীকরনের জন্য ইতোমধ্যে এমপি মহোদয় ডিও লেটার পাঠিয়েছেন। কিন্ত বাস টার্মিনালটিতে যাত্রী সেবা না পাওয়ার প্রসঙ্গে বলেন, যেহেতু বাস মালিক সমিতির সভাপতি আমাদের জেলা আওয়ামীলীগেরও সভাপতি। তাই তার কাছে জনগনের স্বার্থে সুন্দর পরিবেশে যাত্রী সেবা পাওয়ার আশা করছি। ঝালকাঠি আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকন বলেন, যেহেতু যাত্রীদের জন্যই বাস টার্মিনাল। সেখানটিকে দখল করে রাখা আইনের চোখে অন্যায়। তিনি দ্রুত এটি দখলদার মুক্ত করে যাত্রী সেবার জন্য উম্মুক্ত করার দাবী জানান। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কল্যান সংস্থার ঝালকাঠি জেলার সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ (অব: সেনা) বলেন, বাস টার্মিনালটি যাত্রীদের জন্য নির্মান করা হয়েছিল, এটি যাত্রীদের জন্য উম্মুক্ত করা উচিৎ। ঝালকাঠি অটো টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, ওখানে যাত্রীরা কোন ধরনের সুবিধা পাচ্ছেনা। বাস মালিক সমিতি ইচ্ছোমত ভাড়া বৃদ্ধি, ইচ্ছেমত আইন তৈরী করে যাত্রীদের নির্যাতন করছে। তিনি আরো বলেন, কেউ এর প্রতিবাদ করলে শ্রমিক দিয়ে এ্যাকশন করা হচ্ছে। গত দেড় বছর আগে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তরুন কর্মকার শ্রমিকদের হাতে লাঞ্ছিতও হয়েছিল। তিনি দ্রুত দখলমুক্তের দাবী করেন। ঝালকাঠি নাগরিক ফোরাম আহবায়ক আহমেদ আবু জাফর বলেন, বাস মালিক সমিতি এখানকার সচেতন মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে পৌর পরিষদকে ভুল বুঝিয়ে কিছু আর্থিক ফাঁয়দার মাধ্যমে দখল করে রেখেছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান গনতান্ত্রিক সরকার নাগরিক সুবিধায় বিশ্বাসী। তাই তিনি দ্রুত ঐ সকল দখলদারদের মুক্ত করার আহবান জানান। ঝালকাঠি পৌর মেয়র আফজাল হোসেন রানা জানান, বাস মালিক সমিতি ও একটি শ্রমিক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে টার্মিনালটি দখল করে রেখেছে। আমি যাত্রীদের নিরাপত্তা ও বসার স্থান নির্ধারিত করার জন্য চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি বাসের টোলের টাকা পৌর কর্তৃপক্ষ আদায়কালে হঠাৎ সমিতি ধর্মঘট ডেকে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তবে এখন টোল আদায় বন্ধ রয়েছে। টার্মিনালটির আধুনিকিকরনসহ অবৈধ স্থাপনা সরানোর প্রক্রিয়া নেয়া হচ্ছে। ঝালকাঠি বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব সরদার মো: শাহ আলম জানান, রুপাতলী, নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালেও বাস মালিক সমিতির অফিস রয়েছে। এছাড়া ঝালকাঠি-বরিশাল ১৫মিনিটের রাস্তায় কোন যাত্রীই টার্মিনালে ওঠেনা। তাই ওখানে আমরা অফিস করেছি। ঝালকাঠি যাত্রী কল্যান সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: আবুল হোসেন বলেন, যাত্রীদের জন্যই টার্মিনাল, তাই ওখানে যাত্রীদের স্থান থাকবেনা এটা অযৌক্তিক। তিনি দ্রুত দখলমুক্ত করে যাত্রী সুবিধা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।