লীগ নেতার বিরুদ্ধে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

সহসভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য কামাল ফকিরের বিরুদ্ধে জমি অধিগ্রহনের নামে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও তিনি প্রভাব খাটিয়ে সরকারি গাছ কর্তন, টল ঘর, রাস্তার ইট লুটে নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীরা উল্লেখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

সরেজমিনে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল জোনের পরিচালনায় ও সংরক্ষণ বিভাগের অধীনে গত বছর ১ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ভূরঘাটা বাসষ্ট্যান্ড থেকে বাদুরতলা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ভেড়িবাঁধ নির্মাণ করার জন্য ভূরঘাটা খালের দক্ষিন পাড়ে  জমি অধিগ্রহন করা হয়। ভূরঘাটা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এস.এম মনজুর ইলাহী বলেন, ভূমি গ্রহনের জন্য ১০/১৫ জন করে জমির মালিকদের ২০ টি গ্র“প তৈরি করা হয়। এসব গ্র“পের সদস্যদের সনাক্ত করার জন্য স্থানীয় তৎকালীণ ইউপি সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা কামাল ফকিরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। সে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে শতকরা ২৫ টাকা কমিশন নিয়ে কাগজপত্রে স্বাক্ষর গ্রহন করেন।  তিনি আরো বলেন, জমি অধিগ্রহন বাবদ আমি ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা পেয়েছি। সেই টাকা থেকে কামাল মেম্বার ১ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা জোর পূর্বক নিয়ে গেছে। একই গ্রামের মৃত জব্বার হাওলাদারের স্ত্রী পারুল বেগম বলেন, আমার ক্ষতিপুরনে টাকা উত্তোলনের সময় কামাল মেম্বার আমার সাথে ইসলামী ব্যাংক টরকী শাখায় যান। টাকা উত্তোলনের পর ব্যাংকে বসেই জোরপূর্বক অফিস খরচের কথা বলে ৬৭ হাজার টাকা তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন। ইউনুস সরদার জানান, তার ৯১ শতক জমির বিপরীতে ১৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। বরাদ্দকৃত টাকার উত্তোল করে কালামকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। স্থানীয় রিপন হাওলাদার, মাজেদ আকন, হালান আকন, জলিল সরদারসহ অসংখ্য ভুক্তভোগীরা জানান, একইভাবে তাদের কাছ থেকে কামাল হোসেন জোড়পূর্বক প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় একাধিক ব্যক্তিকে লাঞ্চিত হতে হয়েছে।

হারুন বেপারী জানান, গত বছর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ভেড়ি বাঁধ নির্মানের সময় খাঞ্জাপুর বাজার থেকে পোস্ট অফিস পর্যন্ত আঁধা কিলোমিটার রাস্তার ইট তুলে কামাল ফকির তার বাড়ি নিয়ে ঘরের ভিটি পাকা করেছেন। এ ছাড়া ভূরঘাটা পান বাজারের দু’টি টলঘর ও পোস্ট অফিস ঘর ভেঙ্গে কামাল নিয়ে যায়। এর কিছুদিন পর প্রকাশ্যে সে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পার্শ্বের সরকারি মেহগনি গাছ ও ভূরঘাটা বাজারের  বিশাল আকৃতির দু’টি রেন্ট্রি গাছ কেটে নিয়েছেন। স¯প্রতি ভূরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি বিশাল রেন্ট্রি গাছ কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির প্রভাব খাটিয়ে কামাল ফকির ৬২ হাজার টাকায় বিক্রি করে তা আত্মসাত করেছেন। তার এসব অপকর্মের বাঁধা দিতে গিয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন উপসহকারী প্রকৌশলী কাসেম সরদার, সমাজসেবক শাহ্জাহান সরদার, মান্নান হালাদারসহ অনেকে। এছাড়াও কামাল ফকির কারনে অকারনে মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানি করেন চুন্নু মজুমদার, ছোট্ট হাওলাদারকে। যে কারনেই সম্প্রতি অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে কামাল ফকির পরাজিত হন।    

অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য কামাল ফকির বলেন, একটি কু-চক্রী মহল আমাকে সমাজে হেয়পতিপন্ন করার জন্য এ সব মিথ্যে ঘটনা রটিয়ে বেড়াচ্ছে।

এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উল্লেখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ভুক্তভোগীরা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।