আর্কাইভ

জমিদার মোহন লাল সাহার বাড়ি হতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র

খ্যাতিমান জমিদার মোহন লাল সাহার স্মৃতিবিজরীত ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়িটি আজ জৌলস হারিয়ে ফেলেছে। জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে একশত একষট্টি বছরের পুরনো দূর্গা মন্দির ও রুগ্ন ভবন। ব্যবহারে অযোগ্য হয়ে পড়ার পড়েও ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতে বসবাস করেছে জমিদার বাড়ির উত্তরসুরীরা। বাড়ির প্রবেশ দ্বারে প্রচীন সু-বৃহৎ দূর্গা মন্দিরটিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগত পর্যবেক্ষক ও ভক্তরা পূজা অর্চনা করছেন। এতদাঞ্চলের মধ্যে এ দূর্গা মন্দিরটি সর্ববৃহৎ হওয়ায় প্রতিবছরই মহাধুমধামের সাথে এ মন্দিরে দূর্গা পুজা হয়ে থাকে।  

সরেজমিনে জমিদারবাড়ির উত্তরসূরীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১ হাজার ফুট দূরত্বে আড়িয়াল খাঁ নদীর প্রশাখা গৌরনদী-মীরের হাট নদীর তীরে প্রায় দেড়’শ বছর পূর্বে জমিদার মোহন লাল সাহা এ বাড়িটি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। বাড়ির সামনেই রয়েছে সান বাঁধানো সু-বিশাল একটি দীঘি। জমিদার থাকতেন প্রসন্ন ভবনে। বর্তমানে প্রচীনতম ক্ষয়িষ্ণু ভবন ও মন্দিরটি থাকলেও তাতে নেই কোন জৌলস। বাড়ির দেওয়ালের প¬াষ্টার খসে খসে পড়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও আগাছার সৃষ্টি হয়ে প্রচীনতম ভবনের স্বাক্ষী হিসাবেই দাড়িয়ে রয়েছে। বাড়ির সামনেই রয়েছে প্রাচীনতম একটি মন্দির।

স্থানীয়রা জানান, তৎকালীন সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ মন্দির হিসেবে এ মন্দিরটিতে ভক্ত দর্শনার্থীরা পূজা অর্চনা করতে ভীড় করতেন। ৩০গজ দৈর্ঘ্য ২০ গজ প্রস্থ মন্দিরটিতে রয়েছে ৪৫টি স্তম্ভ। ১৮৫০ সনের দিকে জমিদার প্রসন্ন কুমার সাহা মন্দিরটি নির্মান করেছেন বলে বাড়ির লোকজন জানায়। জমিদার প্রসন্ন কুমার সাহা ছিলেন জমিদার মোহন লাল সাহার পিতা। কারুকার্জ খচিত ঐতিহাসিক এ মন্দিরের ছাঁদে ফাটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়ছে ভবনের দেয়ালের আস্তর। বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। জমিদার বাড়ির উত্তরসূরী সুনিল সাহা, বাদল সাহা, উজ্জল সাহা সমির সাহা ও রাজা রাম সাহা জানান, ১৯৭১ সনে পাক হানাদার ও তাদের স্থানীয় সহযোগী রাজাকাররা এ বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট করেছিলো। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলো পাইক পেয়াদাদের ঘরবাড়ি। গুড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো দূর্গা মন্দিরের ছাঁদের ওপরের চারিপার্শ্বের সিংহ মূর্তিগুলো।

জমিদার মোহন লাল সাহার পুত্র স্বর্গীয় মানিক লাল সাহার স্ত্রী ও স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী অরুনা সাহা জানান, তিনি কিশোরী বয়সে এ বাড়িতে বউ হয়ে এসেছিলেন। তৎকালীন সময়ে তার শশুর মোহন লাল সাহার প্রভাব প্রতিপত্তি সবই ছিলো। ছিলো অসংখ্য পাইক পেয়াদা। তাকে গায়ের ওজনের সমান স্বর্ণা অলংকার জড়িয়ে পালকিতে করে নিয়ে আসা হয়েছিলো। অযত্ন ও অবহেলায় সে পালকিটি আজো কালের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে।

এলাকাবাসি জানান, একসময় এ বাড়িতে এ অঞ্চলের মানুষের বিনোদনের জন্য যাত্রা, জারি, সারী ও পালা গানের আয়োজন করা হতো। হাজার-হাজার মানুষের পদচারনায় মূখরীত ছিল এ বাড়িটি। আজ তার কিছুই নেই।

জমিদার মোহন লাল সাহার বিভিন্ন জনকল্যাণ মূলক কাজের মধ্যে অন্যতম স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে, বাড়ির পাশ্ববর্তী আশোকাঠী নামক স্থানে নির্মিত পালরদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ১৯৩৫সনে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এ বিদ্যাপিঠটি বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে একটি অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বাড়িতে বসবাসকারী জমিদারের উত্তরসূরীরা অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী একটি মহল জমিদার বাড়িটি দখল করে আত্মসাতের জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারা সরকারি উদ্যোগে ইতিহাস ঐতিহ্য সম্মৃদ্ধ এ জমিদার বাড়িটি রক্ষনাবেক্ষন করারও দাবি জানিয়েছেন। এলাকাবাসীরা জানান, রক্ষানাবেক্ষনের মাধ্যমে জমিদার মোহন লাল সাহার বাড়িটি হতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র।

আরও পড়ুন

Back to top button