হারিয়ে যাচ্ছে লাল শাপলা

খাল-বিল ও জলাশয় ভরাটের কারনে বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে লাল শাপলা। এক সময়ে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই এ দু’উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খাল-বিলে ফুটে থাকতো নয়নাভিরাম লাল শাপলা। বর্ষা থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত বিল-ঝিল জলাশয় ও নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মাতো শাপলা। মানুষের খাদ্য তালিকায় আবহমানকাল থেকে যুক্ত ছিল শাপলা। কয়েক বছর আগেও বর্ষা এবং শরতকালে খাল-বিলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকত অগণিত শাপলা। সকালের দিকে জলাশয়ে চোখ পড়লে রং-বেরংয়ের শাপলার বাহারী রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। এখন খাল-বিল ও জলাশয় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে লাল শাপলা।

শাপলার ভেষজ গুণও কম নয়। গৌরনদীর ভেষজ গবেষক মোঃ আহছান উল্লাহ বলেন, সাধারণত শাপলা লাল ও সাদা রঙ্গের হয়ে থাকে। এরমধ্যে সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে ও লাল রঙ্গের শাপলা ঔষধী কাজে ব্যবহৃত হয়। শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। সাধারণ শাক-শবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুন খুব বেশি। শাপলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাতগুন বেশি। তিনি আরো বলেন, শাপলা চুলকানী ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী। প্রতি ১’শ গ্রাম শাপলার লতায় রয়েছে খনিজ পদার্থ ১.৩ গ্রাম, আঁশ ১.১ গ্রাম, খাদ্যপ্রাণ ১৪২ কিলো, ক্যালোরি-প্রটিন ৩.১ গ্রাম, শর্করা ৩১.৭ গ্রাম, ক্যালশিয়াম ৭৬ মিলিগ্রাম। আবার শাপলার ফল দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খৈ ভাজা যায়। যেটি গ্রামগঞ্জে ঢ্যাপের খৈ বলে পরিচিত। মাটির নিচের মূল অংশকে (রাউজোম) আঞ্চলিক ভাষায় শালুক বলে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বিল-ঝিল-হাওড়-বাঁওড়-পুকুরের পানি যখন কমে যায় তখন শালুক তুলে খাওয়া যায়। খেতেও বেশ সুস্বাদু। তবে আমাশয়ের জন্য এটি খুবই উপকারী বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সবজি হিসেবেও শাপলার কদর রয়েছে বেশ। সহজলভ্য হওয়ায় গ্রামের মানুষ প্রতিদিনই শাপলা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করতো। গৌরনদী উপজেলার পিঙ্গলাকাঠী গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি মোঃ সামচুল হক ফকির জানান, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জলাশয়ে অগনিত শাপলা ফুল ফুটে থাকতো। কিন্তু বর্তমানে আগের মত আর শাপলা ফুল দেখা যায় না। তবে আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত বীলাঞ্চলে এখনো ফুটে থাকতে দেখা যায় নয়নাভীরাম লাল শাপলা। ওইসব লাল শাপলার বিলে ছুঁটে চলেছেন প্রকৃতি প্রেমীরা।

গৌরনদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, খাল-বিল ও আবদ্ধ জলাশয়গুলো শুকিয়ে রাখার কারনে শাপলা জন্মানোর ক্ষেত্র নষ্ট হলেও সরকারিভাবে অনুকূল পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।