গৌরনদীতে কাবিটা ১৩টি প্রকল্পের অর্ধ কোটি টাকা লোপাট

সংস্কার (কাবি টিা) কর্মসূচীর আওতায় বরিশাল -১ নির্বাচনী এলাকার গৌরনদী উপজেলার জন্য  বিশেষ বরাদ্ব ১৩টি  প্রকল্পে বাস্থবায়নে অর্ধ কোটি টাকা বরাদ্ব করা হয়। উক্ত প্রকল্প বাস্থবায়নের নামে চলছে হরিলুট । প্রকল্প চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতারা নামে মাত্র কাজ করে হাতিয়ে নিয়েছেন বরাদ্বকৃত টাকা। স্থানীয়দের অভিযোগ আওয়ামীলীগ নেতারা প্রকল্প বাস্থবায়নের নামে সাধারন মানুষের আরো দূর্ভোগ বাড়িয়েছে।  

সরেজমিনে গিয়ে ,স্থানীয় লোকজন , প্রকল্প চেয়ারম্যান  ও সংস্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলা ২০১০ -২০১১ইং অর্থ বছরের গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার  (কাবি টিা) কর্মসূচীর আওতায় বিশেষ বরাদ্ব হিসেবে ত্রান পূর্নবাসন মন্ত্রনালয় বরিশাল -১  গৌরনদী –আগৈলঝাড়া দুটি উপজেলার জন্য  প্রায় কোটি টাকা বরাদ্ব করা হয়। গৌরনদী উপজেলার বরাদ্বকৃত ৫০ লক্ষ টাকায় গৌরনদী উপজেলায় ১৩ টি প্রকল্প বাস্থবায়নের জন্য  কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারদেরকে এসব প্রকল্পের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।  গত ৩০ জুন এসব প্রকল্পে বরাদ্বকৃত টাকা তুলে নিয়েছেন প্রকল্প চেয়ারম্যানরা। সরজেমিনে ১৩টি প্রকল্প পরিদর্শনে গেলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, কাবিটার প্রকল্প বাস্থবায়নের নামে চলছে হরিলুট। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা সড়ক সংস্কারের নামে তাদের ভাগ্য সংস্কার করে উন্নয়ন ঘটিয়েছে। নামে মাত্র কাজ করে রাস্তার মাটি রাস্তায় ফেলে জনসাধারনের  পথ চলাচলে আরো দূর্ভোগ বাড়িয়েছে। বরিশাল জেলা ত্রান ও পূর্নবাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কাবিটা প্রকল্পের পুরাতন রাস্তার সংস্কারের জন্য নিয়মানুযায়ী রাস্তার টপ ১২ ফুট , দুপাশে ঢাল ২৪ ফুট , উচ্চতা ৪ফুট থাকার কথা থাকলেও কোন প্রকল্পেই তা পাওয়া যায়নি। মাহিলাড়া ইউনিয়নের বেজহার কুববত সরদারের বাড়ির ব্রীজ হইতে গুয়াবাড়িয় হয়ে কেবলার ভিটা পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পে ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্ব করা হয়। (কাবিটা প্রকল্প নং- ৩) প্রকল্পটি বাস্থবায়নের জন্য মাহিলাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ আবুল কালাম মৃধাকে প্রকল্প চেয়ারম্যান করে একটি প্রকল্প কমিটি গৌরনদী উপজেলা ত্রান ও পূর্নবাসন কার্যালয়ে দাখিল করা হয়।  সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পটি বাস্থবায়নে তিন জন শ্রমিক কাজ কেরেছে। রাস্তার দক্ষিন পাশে খাল এবং উত্তর পাশে বাড়ি ঘর ও ফসলি জমি। মাটি ফেলে রাস্তা সংস্কার কাজের জন্য মাটি সংগ্রহের কোন জায়গা নেই । পুরাতন রাস্তা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। যে কারনে শ্রমিকরা রাস্তার উচূ স্থানের মাটি অপসারন করে নিচু স্থানে দিচ্ছে। বেজহার গ্রামের আব্দুর রহমান (৫০) শরীফাবাদ গ্রামের গফুর (৫৫) জাফর হোসেন (৩০) হাপানিয়া গ্রামের মোঃ আনিছুর রহমান (৩২)সালাউদ্দিন (৫২) প্রকল্পের প্রায় ১ কিলোমিটার স্থানে কোন কাজ করা হয়নি। রাস্তায়  মাঝে মধ্যে উচূ স্থানের মাটি কেটে নিচূ স্থানে ফেলে সমান্তরাল করা হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে সামান্য কিছু মাটি ফেলা হয়েছে। রাস্তার টপ ১২ ফুট, ঢাল ২৪ ফুট থাকার স্থানে রাস্তার কোন ঢাল নেই । রাস্তার উচ্চতা ৪ফুট স্থলে   ৩/৪ইঞ্চি মাটি ফেলা হয়েছে। শরীফাবাদ গ্রামের মোসলেম আলী ফকির (৬৫)সহ এলাকাবাসী জানান, রাস্তা সংস্কারের নামে জনসাধারনের দূর্ভোগ বাড়িয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্ব থাকলেও এক লক্ষ টাকাও রাস্তায় ব্যায় করা হয়নি। প্রকল্প চেয়ারম্যান আওয়ামীলগি নেতা মোঃ আবুল কালাম মৃধা প্রকল্পের বরাদ্বকৃত অর্থ  হাতিয়ে নিয়েছেন। স্থানীয় একটি সূত্র জানান, প্রকল্প চেয়ারম্যান কালাম মৃধা প্রকল্পটি বাস্থবায়নে জন্য আগৈলঝাড়া উপজেলার  দত্তেরাবাদ গ্রামের জনৈক লাল মিয়া নামের এক মাটি কাটা সর্দারকে কাজটি এক লক্ষ টাকায় ঠিকা দেয়। অভিযোগের ব্যাপারে মোঃ আবুল কালাম মৃধার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ,আমার বিরুদ্বে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। আমি নিয়ম মোতাবেক প্রকল্পটি বাস্থবায়ন করেছি।  আমার প্রতিপক্ষ একটি মহল আমার বিরুদ্বে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। বাটাজোর ইউনিয়নে দুটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়। জয়শুরকাঠী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হইতে ঘেয়াঘাট হয়ে সংযোগ সড়ক শাহী মসজিদের  পাশ দিয়ে সিএন্ডবি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত এবং বাটাজোর সিএন্ডবি হইতে আনন্দ সমাদ্দারের বাড়ি হয়ে মোল্লা বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মান। (কাবিটা প্রকল্প নং -১) এ প্রকল্পে বরাদ্ব করা হয় সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা। বাটাজোর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রব হাওলাদারকে প্রকল্প চেয়ারম্যান করে প্রকল্প কমিটি গঠন করা হয়। সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা  অভিযোগ করেন , রাস্তা সাচা ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি। নামে মাত্র কাজ করে পুরো প্রকল্পের টাকা আত্মসাত করেছে সংস্লিষ্ট প্রকল্প কমিটির সদস্যরা । ঘেয়াঘাট গ্রামের বাবুল (৪৫) দেওপাড়া গ্রামের কৃঞ্চকান্ত রায় (৬০) অভিযোগ করেন, এটি একটি প্রাচীন সড়ক এ রাস্তায় সাচা ছাড়া আর কিছুই হয়নি। কোন মাটি ফালানো হয়নি। প্রভাতী রঞ্জন দাস (৪২) দীপালী রানী (৩২) ভবতোষ মন্ডলসহ অনেকেই   বলেন , রাস্তা বানানোর নামে রাস্তা সাইচচা বান্দা মাডি আলগা কইরা রাস্তায় ক্যাঁদা করা ছাড়া নেতারা আর কি করছে ? এই টাহায় মোগো কোন সুবিধা অয় না , অয় নেতাগো পেট ভরা । সরকার কেন যে টাহা দেয় ? । অভিযোগ প্রসংগে  বাটাজোর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রব হাওলাদারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, অভিযোগের কোন সত্যতা নেই । প্রকল্পের ডিজাইন অনুসরন করে প্রকল্প বাস্থবায়ন করা হয়েছে।  এ ছাড়া খাঞ্জা পুর ইউনিয়নে ৩টিপ্রকল্পে ১০লক্ষ টাকা  , নলচিড়া ইউনিয়নে ১টি প্রকল্পে ৩লক্ষ টাকা ,চাদশী ইউনিয়নে ১টি প্রকল্পে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা  , বার্থী ইউনিয়নে ৩টি প্রকল্পে ১৩ লক্ষ টাকা  , সরিকল ইউনিয়নে ২টি প্রকল্প ৮ লক্ষ টাকা বরাদ্ব করা হয় । উপজেলার সকল ইউনিয়নে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায় প্রকল্প বাস্থবায়নের একই চিত্র। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রকল্প চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতারা প্রকল্প বাস্থবায়নের নামে এসব প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের খাঞ্জাপুর সিএন্ডবি রোডের মৃধা বাড়ি হইতে পূর্ব দিকে ডঃ ননী গোপাল দাসের বাড়ি পর্যন্ত সড়ক মেরামত প্রকল্পে ৫লক্ষ টাকা বরাদ্ব করা হয়(কাবিটা প্রকল্প নং- ১১)। এ প্রকল্পে চেয়ারম্যান হিসেব রয়েছেন খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অখিল চন্দ্র দাস।

অপর একটি প্রকল্পে চেয়ারম্যান হচ্ছেন খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ মোতালেব হোসেনের ভাতিজা যুবলীগ নেতা সোহেল  (প্রকল্প নং ১২) । প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নাম সর্বস্ব প্রকল্প বাস্থবায়নের একই চিত্র। খাঞ্জাপুর গ্রামের মোহাম্মদ ফকির (৪০)আকরাম ফকির (২২)লালন র্মধা(৩০) অভিযোগ করেন , রাস্তায় মাটি সমান্তরাণ করা হচ্ছে। রাস্তা সংস্কার নয় নেতাদের ভাগ্যের সংস্কার হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে মার খেতে হয়। প্রকল্প চেয়ারম্যান সভাপতি মোঃ মোতালেব হোসেন সাধারন সম্পাদক অখিল চন্দ্র দাসের কাছে অভিযোগ প্রসংঙ্গে জানতে চাইলে তারা বলেন, ত্রান ও পূর্নবাসন বিভাগের নীতিমালা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্থবায়ন করা হয়েছে। অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা এটি অপপ্রচার মাত্র। বার্থী ইউনিয়নের বার্থী মহব্বত আলী মেম্বরের বাড়ি হইতে উত্তর মাদ্রা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তা মেরামত (প্রকল্প নং -১০) বার্থী ইউনিয়ন  আওয়ামীলীগের   সাবেক সভাপতি  আঃ রাজ্জাক হাওলাদারের পুত্র ছাত্রলীগ নেতা মোঃ সোহাগ হাওলাদারকে প্রকল্প চেয়ারম্যান করা হয়। বার্থীর অপর একটি প্রকল্প রাজাপুর ব্রীজের গোড়া হইতে উত্তর দিকে মৈস্তারকান্দি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত (প্রকল্প নং-৮) প্রকল্পটি  করেন বার্থী ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি নিতাই মন্ডল । এ দুটি প্রকল্পে বরাদ্ব করা হয় সাড়ে ১১লক্ষ টাকা। প্রকল্প এলাকায় গেলে স্থানীয়রা জানান, এ রাস্তায় তেমন কোন কাজ হয়নি । কয়েকজন লেবার নিয়ে কয়েকদিন রাস্তা ঘষা মাজা করা হয়। রাস্তার মাটি কেটে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ফেলা হয়। নিতাই মন্ডলসহ প্রকল্প চেয়ারম্যানদের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা অভিযোগ অস্বীকার করেন। 

গৌরনদী উপজেলা ত্রান ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা মোঃ কবির উদ্দিনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম দিকে কাজের মান  কিছুটা খারাপ ছিল ,পরবর্তিতে তা সংশোধন করা হয়। বর্তমানে তেমন কোন সমস্যা নেই। তাছাড়া প্রকল্প এলাকায় মাটি না পাওয়া ,বৃষ্টি  এবং রাস্তার দুপাশে ঢাল দেয়ার জায়গা না থাকাসহ নানা প্রতিক’লতা থাকা সত্বেও শতভাগ কাজ আদায় করে নেয়া হয়েছে। গৌরনদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা  আওয়ামীলীগের  প্রভাবশালী নেতা মোঃ শাহ আলম খানের কাছে অভিযোগ প্রসংগে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।