মধ্যযুগীয় কায়দায় বসত ভিটে থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে এক দিনমজুরকে

আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার বুধবার পুলিশের উপস্থিতিতে তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় বসত ঘর ও পানের বরজ গুড়িয়ে দিয়েছেন এক দিনমজুরের। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ধুরিয়ারইল গ্রামে।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, ভূক্তভোগী পরিবার ও পুলিশের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার ধুরিয়ারইল গ্রামে দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন আব্দুল মজিদ গাজী ও তার পরিবার। ১৯৯০ সনে মজিদ গাজী মারা গেলে ওই বড়িতে তাকে দাফন করা হয়। মজিদের মৃত্যুর পরে তার বিধবা স্ত্রী মনোয়ারা বেগম তার দুই পুত্র ও কন্যাকে নিয়ে ওই বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। দিনমজুর মনির গাজী (৩৫) কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, পৈত্রিক সূত্রে গৌরনদী উপজেলার ধুরিয়াইল মৌজার ১ একর ১৭ শতক জমির মালিক হন। ওই জমির মধ্যে চৌচালা টিনের বসত ঘর ও পাশের জমিতে অর্ধশত পান বরজ নির্মান করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। মনির গাজী অভিযোগ করেন, ওই সম্পত্তির ওপর লোলুপ দৃষ্টি পরে একই গ্রামের বাসিন্দা ও বার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারের। মহাজোট সরকারের শুরু থেকে আওয়ামীলীগ নেতা রাজ্জাক তার দলবল নিয়ে বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার গাছ কেটে নিয়ে যায়। ওই সময় বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও থানায় অবহিত করেন। গতকাল বুধবার দুপুরে পুলিশের উপস্থিতে আব্দুর রাজ্জাক তার ভাড়াটিয়া শতাধিক সন্ত্রাসী নিয়ে ওই বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা মনিরের বসত ঘরে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে আতংক সৃষ্ঠি করে। এক পর্যায়ে তাদেরকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বসত ঘরসহ দুটি ঘর  সম্পূর্নভাবে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে পার্শ্ববর্তী রাস্তা ও ডোবায় ফেলে রাখে। মনিরের মা মনোয়ারা বেগম (৫৫) জানান, হামলাকারীরা এতেই ক্ষ্যান্ত হয়নি তারা বসত ঘরের ভিটে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। এবং একমাত্র জীবিকার অবলম্বন ৫০ খানা পান বরজ গুড়িয়ে দেয়।

বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সর্বস্ব হারিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া ভিটের ওপর বসে আর্তনাত করছে পুরো পরিবার। অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, ওই জমির বৈধ মালিক আমি। ৪০বছর পূর্বে জমি পাহারা দেয়ার জন্য মনিরের বাবা মজিদকে ঘর তুলে থাকতে দিয়েছিলাম। আমার জমি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হয়েছে। পুলিশের সহায়তায় উচ্ছেদের অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম বলেন, আদালতের নির্দেশে অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।