প্রোগ্রেসিভ ফোরামের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত

প্রোগ্রেসিভ ফোরাম নামে একটি সংগঠন। দীর্ঘদিন যাবৎ প্রবাসে সংগঠনটি রাজনৈতিক, সামাজিক, ও জাতীয় বিষয়য়ের ওপর বিভিন্ন কর্মকা- পরিচালনা করে আসছিল। তাদের ব্যতিক্রমধর্মী কর্মকান্ড প্রবাসে সকল মহলে যথেষ্ট সাড়া জাগায়। প্রবাসী মহলে গতানুগতিক চিন্তা-চেতনার বাহিরে নতুন করে ভাববার উদ্রেগ সৃষ্টি করে। এসব কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতায় গতকাল ১৭ই জুলাই এষ্টরিয়ার বনফুল রেষ্টুরেন্টে হয়ে গেল সংগঠনটির প্রথম কাউন্সিল ও সম্মেলন। এতে সভাপতিত্ব করেন ফোরামের অন্যতম নেতা আ, হা মহিউদ্দিন। প্রথমপর্বে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আলীম উদ্দীন এবং দ্বিতীয়পর্বে পরিচালনা করেন অন্যতম সদস্য গোলাম মর্তুজা। প্রায় ৪০জন কাউন্সিলার তাদের নাম রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। প্রথমে সদস্য সচিব বিগত দিনে সংগঠনের কর্মকান্ডের বিবরণ সম্বলিত একটি লিখিত রিপোর্ট কাউন্সিলাদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন। কাউন্সিলার ও অতিথিবৃন্দ রিপোর্টের ওপর বিশদ আলোচনা করেন। তারা আগামী দিনে কর্মকা- বিস্তৃতির মাধ্যমে আরও কর্মী, সমর্থক সংগহ ও সমবেত করে সংগঠনের প্রভাব ও গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। এছাড়াও বক্তাগন দেশের চলমান রাজনীতির কঠোর সমালোচনা করেন। তারা বলেন বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার নির্বাচনে জনগণকে দেওয়া তাদের প্রতিশ্রতি বা ওয়াদার চরম বরখেলাপ করেছেন। বহু অত্যাচার নির্যাতন, ঘাত প্রতিঘাতের পর বিগত নির্বাচনে পাহাড় সমান প্রত্যাশা নিয়ে দেশের যুবসমাজ ও জনগণ বর্তমান সরকারকে দৃই তৃতীয়াংশ ভোটে জয়যুক্ত করেছিল। তাদের আশা ছিল বর্তমান সরকার ও তার নেত্রী এবার ৭২-এর সংবিধান পুনর্বহাল করবে। সরকারের দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্টতা থাকায় সরকারের সামনেও একটি সুযোগ এসেছিল। কিন্তু সরকার জনগণের রায়কে চরমভাবে উপেক্ষা করে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির সাথেই সমঝোতা ও আপোষ করেছে। তারা জনগণের সাথে বেঈমানী করেছে। শুধু তাই নয় তারা ৭২-এর সংবিধান পুনর্বহাল না করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও বিসমিল্লাহ বহাল রেখে কেবল জনগণের সাথেই প্রতারণা বা বেঈমানী করেনি। তারা ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তারা আরো বলেন বর্তমান সরকারের এরূপ ভূমিকা কোনভাবে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরিচায়ক হতে পারেনা। সরকার অসাম্প্রদায়িক চরিত্র বিসর্জন দিয়ে চরম দক্ষিণপন্থী পথে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। এমনি অবস্থায় স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে বিএনপি ও মহাজোটের বাইরে একটি তৃতীয় শক্তির উন্মেষ ঘটানোর অভিপ্রায় ব্যক্ত করে দেশের প্রবাসের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবি, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি-গোষ্ঠী সকলের প্রতি আহ্বান জানান। কাউন্সিলার ও অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কলামিষ্ট ও প্রাক্তন টিভি প্রযোজক জনাব বেলাল বেগ, চিত্র পরিচালক কবীর আনোয়ার, অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিনি ওয়াহিদ, ড. নজরুল ইসলাম, সুব্রত বিশ্বাস, খোরশেদুল ইসলাম, শামসাদ হুসাম, মোখলেছুর রহমান, কাশেম আলী, ফজলুর রহমান, বাবুল পাল, শংকর নাথ, গিয়াস উদ্দিন বাবুল, রেজাউল করিম, মোহাম্মদ জাকির হোসেন, ওবায়দুল্লাহ মামুন, মুকিত চৌধুরী, লন্ডন থেকে আগত প্রাক্তন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ও কলাম লেখক ফারুক আহমদ যোশীসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। বক্তাগন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে একটি তৃতীয় শক্তির প্রকাশ সৃষ্টির ওপর জোর দেন। একই সাথে দেশের প্রগতিশীর সকল বাম শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। একটি কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে সভার পক্ষ থেকে সুব্রত বিশ্বাস, আলীম উদ্দীন, জাকির হোসেন, ফজলুর রহমান ও সৈয়দ রেজাউল করিমকে দিয়ে একটি সাবজেক্ট কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। তারা সভাপতি মন্ডলী এবং খোরশেদুল ইসলামকে সভাপতিমন্ডলীর সভাপতি ও আলীম উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন সদস্য কো-অপট করা সুযোগ রেখে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি কাউন্সিলরদের সমিপে উপস্থাপন করেন। কাউন্সিলররা সেটাকে সর্বসম্মতভাবে ধ্বনি ভোটে পাশ করেন।

সম্মেলনে কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাব পাঠ করেন জাকির হোসেন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ৭২-এর সংবিধান পুনর্বহাল, তেল গ্যাস আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ, জাতীয় স্বার্থবিরোধী তেল গ্যাসের অসম চুক্তি বাতিল, অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিল ও প্রকৃত মালিকের কাছে সম্পত্তি হস্তান্তর, আদিবাসীদের ভূমিতে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও আদিবাসী হিসেবে তাদের সাংবিধানিক স্কীকৃতি প্রদান, নারীদের সম্পত্তিতে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ফতোয়াবাজদের আরো কঠোর শাস্তির বিধান, গোলাম আযম সহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতার ও তাদের বিচার আরো দ্রুততর করা ইত্যাদি।
কমিটিঃ সভাপতিমন্ডলীঃ খোরশেদুল ইসলাম (সভাপতি)আ, হা মহিউদ্দিন, সুব্রত বিশ্বাস, কাশেম আলী, সৈয়দ রেজাউল করিম, মো. গিয়াসউদ্দিন বাবুল ও শামসাদ হুসাম।

সাধারণ সম্পাদকঃ আলীম উদ্দীন, সহসাধারণ সম্পাদক শোয়েব আহমদ, বাবুল পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক- সৈয়দ ফজলুর রহমান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক-মাহমুদ শাফী, কোষাধ্যক্ষ মো জাকির আহমদ বাচ্চু, প্রচার সম্পাদক হারুন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সুমন বসনিয়া, দপ্তর সম্পাদক আশীষ রায়, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা নাজনীন মামুন, কার্যকরী সদস্য গোলাম মর্তুজা, মো. হাফিজুর রহমান, মো. মুকিত চৌধুরী, প্রবীর কুমার গুণ, শংকর নাথ, মো. জহিরুল হক, মো. মামুন খান, মো. শামীম আহমদ, মো. আহমদ বাবু, মোখলেস মুন্তসীর।

এছাড়া ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়ঃ
১) বেলাল বেগ, ২) ড. ওয়ালেদ চৌধুরী ৩) ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ ৪) কাজী আজিজুল হক ৫) সউদ চৌধুরী ৬) অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম ৭) ড. নজরুল ইসলাম