ছবি ও নাম ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন-কৃষকের নামে ওয়ারেন্ট

কোনো ঝামেলায় নাই। মুই কিচ্ছু জানি না, মুই কোন খারাপ কামের লগে নাই, মোর নামে মামলা অইবে ক্যা? পুলিশ মোরে বিছরায় ক্যা ? কথাগুলো বলছিলেন গৌরনদী উপজেলার গোবর্দ্ধন গ্রামের হোসেন আলী (৫৪)। এ কথা শুধু হোসেন আলীর নয় একই কথা জানালেন কৃষক আকবর আলী (৫০)আবুল মোল্লা (৪৫)। গৌরনদী অগ্রনী ব্যাংকের ঋন কর্মকর্তা ওই সব দিনমজুর ও কৃষকের নাম ও ছবি ব্যাবহার করে ঋন তুলে নিয়ে নিজেই তা আত্মসাত করেন। ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ না করায় ঋন খেলাপীর অভিযোগে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দুই  দিন মজুর ও তিন কৃষকের নামে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করা হয়েছে।

দিন মজুর ,কৃষকদের অভিযোগ ও সংস্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে অগ্রনী ব্যাংক গৌরনদী শাখার ঋৃন অফিসার মোঃ নাসির উদ্দিন আকন গৌরনদী উপজেলার গোবর্দ্ধন গ্রামের পিতা মৃত আছির উদ্দিন হাওলাদারের পুত্র মোঃ হোসেন আলী (৫৪), দক্ষিন গোবর্দ্ধন গ্রামের আবুল মোল্লার পুত্র নুর মহাম্মদ (৪৫) মৃত কদম আলী খানের পুত্র আকবর আলী, কালকিনি উপজেলার রমজানপুর গ্রামের মোঃ সেলিম ও শাওড়া গ্রামের মোঃ ইব্রাহিম সিকদারের নাম ও ছবি ব্যাবহার করে ৯৬ হাজার কৃষি ঋন উত্তোলন করে নিজেই তা ভোগ করেন। মোঃ হোসেন আলী জানান, গৌরনদী অগ্রনী ব্যাংকের নোটিশ পাওয়ার  জানতে পারেন  তিনি ২০০৪ সালে ২০ হাজার টাকা ঋৃন নিয়েছেন। যাহা দীঘ দিনে পরিশোধ না করায় কেন তার বিরুদ্বে মামলা করা হবে না নোটিশ পান। পরে ব্যাংকে গিয়ে খোজ খবর নিয়ে তিনি জানেন তৎকালীন গৌরনদী অগ্রনী ব্যাংকের ঋন অফিসার মোঃ নাসির উদ্দিন আকন এ কাজটি করেছেন। ওই টাকা পরিশোধ না করায় বর্তমানে সুদ আসলে ৪০ টাকা হয়েছে। যাহা পরিশোধ না করায় তার বিরুদ্বে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করা হয়েছে। মোঃ ইব্রাহিম সিকদার জানান, তার নামেও ২০ হাজার ঋন উত্তোলন করেন মোঃ নাসির উদ্দিন আকন। বিষয়টি তিনি জানতে পারার পর নাসিরের ওপর চাপ সৃষ্টি করলে ওই ঋনের টাকা শোধ করা হয়। আকবর আলী অভিযোগ করেন, নাসির উদ্দিন তার নামে ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করে নিয়ে আত্মসাত করেন যা বর্তমানে সুদ আসলে ৪০ হাজার টাকা হয়েছে। তিনি বিষয়টি জানার পর নাসিরকে টাকা পরিশোধ করতে বললে নাসির টাকা পরিশোধ না করে তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দেয়। ভূক্তভোগীরা জানান, তারা   একাধিক নোটিশ পাওয়া ও তাদের বিরুদ্বে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করার পরেই তারা জানতে পারেন তাদের নামে ঋন তুলে নেয়া হয়েছে।

অভিযোগের ব্যাপারে অগ্রনী ব্যাংক শেখের হাট শাখায় বর্তমানে কর্মরত, তৎকালীন গৌরনদী অগ্রনী ব্যাংকের ঋন অফিসার মোঃ নাসির উদ্দিন আকনের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করলেও এক পর্যায়ে, মোঃ হোসেন ও আকবর আলীর অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওই সময় আমি একটি বিপদে ছিলাম টাকার প্রয়োজন হওয়ায় এ কাজ করেছি। তবে মিথ্যা জালিয়াতির আশ্রয় নেয়নি। খুব শীঘ্রই ব্যাংকের পাওনা শোধ করে দেয়া হবে। এ ব্যপারে গৌরনদী অগ্রনী ব্যাংকের ম্যানেজার মোঃ মাহাবুব আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি খেলাপীদের বিরুদ্বে সার্টিফিকেট মামলা দায়েরের কথা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যপারে আমি কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি অবহিত নই। ঋন খেলাপীদের ব্যাপারে সংস্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা বিভাগের দেয়া তালিকা মোতাবেক আমরা ব্যাবস্থা নিয়ে থাকে।