আষাড়ে খাল খনন, পানি মেপে বিল

কাটায় বার পয়সারও কামে আহে নাই , আষাড়ে খাল কাটা দুই পাশের লতাপাতা  সাইচ্চা পানি মাইপপা বিল নিছে। এই খাল কাডনে মোগো কৃষকগো কোন লাভ অয় নাই । খাল কাডার নামে মোগো সর্বনাশ কইররা গেছে। কথাগুলো বলছিলেন শাহজিরা গ্রামের শামছুল আলম চকিদার (৮০)। বরিশালের, গৌরনদী  উপজেলার সরিকল  ইউনিয়নের পশ্চিম শাহজিরা বটতলা থেকে  আগরপুর ব্রিজ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার  খাল খনন কাজে ব্যাপক দূর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খাল খননের নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাতিয়ে নিচ্ছে  ১২ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা। ঠিকাদারের বিরুদ্বে সংস্লিস্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেয়ার পরেও কোন ব্যাবস্থা নেননি কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদারী  প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সিডিউল মোতাবেক খাল খনন না করে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতি করার বিরুদ্বে কোন ব্যাবস্থা না নেয়ায়  বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের শাহজিরা ,সাকোকাঠী ,ও পাশ্ববর্তী এলাকার শত শত  কৃষকেরা সম্প্রতি বিক্ষোভ  করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসী, স্থানীয় লোকজন, বিক্ষুব্দ কৃষক ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের পশ্চিম শাহজিরা বটতলা থেকে আগরপুর ব্রিজ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার খালটি গত কয়েক বছর ধরে নাব্যতা হারিয়ে ভরাট হয়ে যায়। বোরো মৌসুমে পানি না থাকায় ওই ইউনিয়নের ৭টি গ্রামের ৩ হাজার কৃষক সেচ সংকটের কারনে বোরো চাষ করতে পারছিল না। ফলে কৃষকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। শাহজিরা গ্রামের মোঃ মোতালেব হাওলাদার (৭৫),সাকোকাঠী গ্রামের মোঃ মনির খন্দকার (৩৫) মোঃ মামুন জমাদ্দার (৩৫) আঃ জব্বার হাওলাদার (৫৪) হেমায়েত উদ্দিন, আলী হাসানসহ এলাকাবাসী জানান, খালটি খননের জন্য তারা পানি উন্নয়ন বোর্ড, এল জি ই ডি ও বরিশাল কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে কাছে আবেদন করে বার বার ধর্না দেন। কিন্তু কোন বিভাগই খালটি খননের উদ্যোগ গ্রহন করেননি। পরিশেষে বরিশাল কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বি এ ডি সি) খালটি খননের জন্য ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে বরিশাল ঝালকাঠী উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় বরিশালের, গৌরনদী উপজেলার সরিকল  ইউনিয়নের পশ্চিম শাহজিরা বটতলা থেকে আগরপুর ব্রিজ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার খাল খনন একটি প্রকল্প গ্রহন করেন। দুই কিলোমিটার খাল খনন প্রকল্পটি বাস্থবায়নর জন্য ১২ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা প্রাককলিত ব্যায় ধরা হয়। গত ২৬ নভেম্বর প্রকল্পটি বাস্থবায়নে দরপত্র আহবান করা হয়। গত ২০ জানুয়ারী  মেসার্স এমডি মউির রহমান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠনকে প্রকল্পটি বাস্থবায়নের জন্য কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে কাজটি সমাপ্ত করার কথা ছিল। ২০ ফেব্রুয়ারী খালের খনন কাজ শেষ করার কথা ছিল । ঠিকাদার কার্যাদেশ পেয়ে কাজ ফেলে রাখে। গত ২১ এপ্রিল কৃষি সচিব সি, কিউ, কে মুসতাক আহম্মেদ ও বিএডিসির চেয়ারম্যান ডঃ এস এম নাজমুল ইসলাম খাল কনন কাজের উদ্ধোধন করেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উদ্ধোধনের পরে কাজ বন্ধ করে রাখেন। অবশেষে আষাড়ে (২০ জুন ) খাল খনন কাজ শুরু করেন বলে এলাকাবাসি জানান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত ৩০ জুন বিল তুলে নেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বি এ ডি সি)র  একজন কর্মকর্তা  জানান, প্রকল্পটি বাস্থবায়নের নিয়ম অনুযায়ী খালটির তলদেশে ১৫ফুট পাশে, সাড়ে ৪ফুট গভীর করার কথা রয়েছে। গত সোমবার (১৮ জুলাই ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খালটির কোথাও খনন কাজের কোন চিহ্ন নেই। খালের দুপাশে খাল থেকে তোলা মাটিও নেই। স্থানীয় মোঃ সেকেন্দার হোসেন হাওলাদার (৫০)মোঃ মোতালেব হাওলাদার, মোঃ মোশারফ হোসেন মুন্সি অভিযোগ করেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খালটির কোন খনন কাজই করেননি। তারা শুধূ খালের দুই পাশের লতা পাতা  সেচে (লেবেল করে) ঢাল নামিয়ে পানিতে ফেলে দিয়েছেন। মাঝে মধ্যে   খালের ওপরের অংশে কাঁদামাটি হাত দিয়ে কোন রকম ছড়িয়ে দায়সারাভাবে কাজ শেষ  করেন। তারা আরো জানান, এ খালটি স্থানীয় কৃষকদের বাঁচা মরার উপর নির্ভর করে। এ খালটি খনন না হলে কৃষকদের না খেয়ে মরতে হয়। এ বিষয়গুলো বুঝিয়ে ঠিকাদারকে খালটি নিয়ম অনুযায়ী খনন করার জন্য অনুরোধ জানানো হলেও ঠিকাদার  প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা আকবর হোসেন ফারুক তাদের অনুরোধ আমলে নেননি। খাল খননে অনিয়মের প্রতিবাদ করলে মার খেতে হতো। পরে গত ১২ জুলাই  সুবিধাভোগী কৃষক ও স্থানীয়রা খাল খননে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ করে বরিশাল কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বি এ ডি সি) উচ্চতর উপ সহকারী প্রকৌশলী মতিলাল রায়ের বরাবরে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন বলে বিক্ষুব্দরা জানান। এতেও কোন ব্যাবস্থা নেননি কর্তৃপক্ষ। না নেয়ায় খাল খননে অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্বে ব্যাবস্থা না নেয়ার প্রতিবাদে এলাকাবাসি উপকারভোগী কৃষক ও স্থানীয় লোকজন সম্প্রতি এলাকায় বিক্ষোভ  করে।  স্থানীয় মোঃ মোশাবফ হোসেন  বিক্ষোভ করার কথা স্বীকার করে বলেন, এটা কোন খাল কাটার মধ্যে পড়ে না। এটা এক কথায় বলা চলে সরকারী অর্থ লুটপাট। সাকোকাঠী গ্রামের মনির হোসেন বলেন, খাল কাটার নামে দুই পাশের জঙ্গল পরিস্কার করা হয়েছে। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (১ নং ওয়ার্ড) সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, এ খালে কোন কাজ হয়নি। এলাকাবাসির পক্ষে কথা বলতে গিয়ে ঠিকাদারের লোকজনের দ্বারা আমাকে লাঞ্চিত হতে হয়েছে। আষাড়ে খাল কাটা আর পানি মেপে বিল দেয়া একই কথা। কোন কাজ করতে হয় না। তিনি আরো অভিযোগ করেন, শাহজিরা হারুন মোল্লার বাড়ি থেকে আগরপুর বাজার ব্রিজ পর্যন্ত কোন কাজই করেননি। স্থানীয় কৃষকরা জানান, আগামি ইরিা বোরো মৌসুমে সরিকল ইউনিয়নের শাহজিরা, সাকোকাঠী, শিংগা, মহিষা, আধুনা গ্রামের ১০টি বোরো ব্লকের তিন হাজার কৃষক চাষ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। এলাকার কৃষকরা কৃষি সচিব ও বিএডিসির চেয়ারম্যানের কাছে খাল খনন কাজটি পরিদর্শনের জন্য দাবি জানান। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক এমডি মতিউর রহমানের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গৌরনদীর আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ আকবর হোসেন ফারুক আমার লাইসেন্সের নামে কাজটি নিয়ে সে নিজেই কাজ সম্পাদন করেছেন এ কাজ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। পরবর্তিতে গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির প্রভাবশালী সদস্য মোঃ আকবর হোসেন ফারুকের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্প এলাকার মানুষের অসহযোগীতার কারনে কাজটি ঠিকমত করা যায়নি। অভিযোগের কারনে কর্তৃপক্ষ আমার আড়াই লক্ষ টাকার বিল কর্তন করে চূড়ান্ত বিল প্রদান করেছে। আষাড়ে (বর্ষায়) খাল কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কারনে নয়, কর্তৃপক্ষের কারনে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারে বরিশাল কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বি এ ডি সি) উচ্চতর উপ সহকারী প্রকৌশলী মতিলাল রায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি  কৃষকদের অভিযোগের আংশিক সত্যতা রয়েছে স্বীকার করে বলেন, এ জন্য ঠিকাদারকে ৭৬% বিল প্রদান করা হয়েছে। যেখানে এলাকাবাসির অভিযোগ প্রকল্পটিতে কোন কাজ হয়নি সেখানে ২৪% বিল কর্তন করে ৭৬% বিল পরিশোধ করেই ঠিকাদারের বিরুদ্বে ব্যাবস্থা নিয়েছেন? এ প্রশ্নের জবাবে মতিলাল বলেন, ১ কিলো মিটার খারাপ, ১ কিলোমিটার ভাল  কাজ হয়েছে। তাছাড়া খনন কাজের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে ঠিকাদারের অনেক টাকা ব্যায় হয়েছে।