মেয়র হিরনের বাঁধার মুখে শ্রমিকলীগ সভাপতি আফতাব

হোসেন স্ব-দলীয় প্রতিপক্ষের আধিপত্য বিস্তারের কারনে নিজ বাড়িতে ফিরতে না পারায় আ’লীগের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। পুলিশ ও প্রতিপক্ষ প্রধান বিসিসি মেয়র মহানগর আ’লীগের আহবায়ক শওকত হোসেন হিরন বাহিনীর তোপের মুখে বাড়ির দ্বার প্রান্তে এসেও শ্রমিক নেতাকে ফিরে যেতে হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। মেয়রের এহেন আধিপত্য বিস্তারে আ’লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

মেয়র হিরন বলেছেন আফতাব কি এমপি না মন্ত্রি? আফতাব একজন নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী বাক্তি। কেন তিনি ৩ শতাধিক গাড়িবহর নিয়ে বরিশালে আসবেন। এভাবে বাসভবনে ফিরাটা দলের জন্য নেতিবাচক বা ক্ষতিকারক। তাছাড়া এতে আইন শৃংঙ্খলার অবনতি হতে পারে।বিপরীতদিকে যুবলীগের সিনিয়র দুই নেতা তারিক বিন ইসলাম ও মোয়াজ্জেম হোসেন চুন্ন জানিয়েছেন আফতাব হচ্ছেন মহানগর শ্রমিক লীগের নির্বাচিত সভাপতি। তিনি দল থেকে বহিস্কারও হয়নি। তিনি জামিন পেয়ে বরিশালে আসবেন এটা খুবই স্বভাবিক। তার শ্রমিকরা তাকে অভ্যার্থনা জানাতে গাড়ি বহর নিয়ে তাকে রিসিভ করতে যেতেই পারে। আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে মেয়রের এমন যুক্তিকে তারা খোরা যুক্তি বলে মন্তব্য করেছেন। শ্রমিকলীগ নেতা আফতাব হোসেন বলেন মেয়র হিরনের পেটোয়া বাহিনী দিয়ে আমাকে বরিশালে প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করা হয়েছে। তারা পুলিশের সামনে  প্রকাশ্যে অস্ত্র উচিয়ে মহড়া প্রর্দশন করছে।

জানা যায়, মহানগর শ্রমিকলীগের আহবায়ক আফতাব হোসেন ও তার সমর্থকদের নিয়ে শুক্রবার ভোরে রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে ব্যাপক শোভাযাত্রায় সজ্জিত হয়ে নগরীতে প্রবেশের চেষ্টা করে। নগরীর প্রবেশদ্বার গড়িয়ারপাড় সংলগ্ন ছয়মাইল নামক স্থানে বেলা ১১টায় আফতাবের বহরটি পৌছে। এসময় পূর্ব থেকে অবস্থান নেয়া হিরন সমর্থকরা ৩ রাউন্ড ফাকা গুলি বর্ষন করে অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে আফতাবের বহরকে ধাওয়া দেয়। একই সঙ্গে মহাসড়কে গাছ ফেলে রাখে যাতে আফতাব গাড়ি বহর নিয়ে সহসাই শহরে ঢুকতে না পারে। উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে আফতাবের বহরটি পিছু হটতে বাধ্য হয়। তাদেরকে বরিশাল শহরে প্রবেশ করতে দেয়নি হিরন সমর্থকরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করতে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। একই সঙ্গে আফতাব নগরীতে প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করে পুলিশ। এরপর আফতাব রাজধানী ঢাকায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়।

প্রসঙ্গত বরিশালের আওয়ামী রাজনীতিতে দুটি গ্রুপে প্রকাশ্য বিভক্ত। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেয়র শওকত হোসেন হিরন। অপর গ্রুপের হলেন সাবেক চীফ হুইফ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। হাসানাতের ঘনিষ্ঠ হলেন আফতাব হোসেন। তিনি বরিশাল জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। গত ১ ফেব্রুয়ারী দুপুরে নির্বার্হী ম্যাজিষ্টেট কামরুজ্জামান এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী পরিচালক জহিরুল ইসলাম নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে ফিটনেসবিহীন ও অবৈধ যানবাহন আটকিয়ে জরিমানা আদায় করতে ছিল। ওই সময়ে জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক শাহ আলম জরিমানা কম করার জন্য অনুরোধ করে। এতে তেলে বেগুনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ভ্রাম্যমান আদালত। এরপরই পুলিশ শ্রমিক নেতা শাহ আলমকে বেদম মারধর করে। এ ঘটনায় শ্রমিক-পুলিশ সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে। সংর্ঘষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি দ্রুত বিচার আইন ও অপরটি পুলিশ আক্রান্ত আইনে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দুটিতে জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আফতাব হোসেন ও সাধারন সম্পাদক শাহ আলমসহ ৫’শ জনকে আসামী করা হয়েছে। ওই দিন বিকেল থেকেই মেয়র হিরন সমর্থকরা টার্মিনাল এলাকায় অবস্থান নিয়ে আফতাব বিরোধী মিছিল সমাবেশ করে আসছে। তারা আফতাব মুক্ত টার্মিনালের দাবী তুলে টার্মিনাল দখলে নেয়। এ ঘটনার পর থেকে আফতাব ঢাকায় নিরাপদে অবস্থান নেয়। আইনী জটিলতার অবসান শেষ হওয়ার পর তিনি শুক্রবার বরিশালে ফিরে আসার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু বিধি বাম! তবুও সু কৌশলী শ্রমিক নেতা আফতাব নিজের জন্য ভাল মনে করে মেনে নিয়েছেন। কারন হিসাবে বেড়িয়ে এসেছে মেয়র হিরনের গ্রুপিং রাজনীতিতে অতিষ্ঠ হাসানাত ভক্তরা।

বলা যায়, হিরন ভক্তদের সকলেই নিজ মাতৃভূমিতে আফতাবকে নিয়ে আসতে সজ্জিত বহরের জন্ম নেয়। মুলত বরিশালে প্রবেশে মেয়র হিরন প্রতিবন্ধকতার ভূমিকা পালন করতে পারেন এরকম মনোভাব থেকে আফতাব এক বুদ্ধি আটে। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি বহরের সঙ্গে কয়েক জন ক্যামেরাম্যানও নিয়ে আসেন। হিরন সমর্থকদের দাপুটে শক্তি প্রর্দশনে ন্যাক্করজনক বিষয়টি ভিডিও চিত্রেও নিক্ষুতভাবে ধারন করে। এটা প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও আ’লীগের প্রভাবশালী নেতাদের অবহিত করে মেয়র হিরনের বিরুদ্ধে নেগেটিভ ধারনা তৈরি করে শাসকদলে থাকার শক্তি খর্ব করার পরিকল্পনা নেয় আফতাব। এরপর মেয়রের আগ্রাসী পথচলা বন্ধ করে হাসানাত সমর্থকরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে বলে দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।