টার্গেট ৪ আগস্ট – জোট সম্প্রসারনে বিএনপি মহাসচিবের দৌঁড়ঝাপ

দ্রুত এগুচ্ছে বিএনপি। ঐদিন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্মানে বিএনপি আয়োজিত ইফতার পার্টিতে সব দলের অংশগ্রহন নিশ্চিত করার লক্ষেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত কয়েকদিন যাবত দৌড়ঝাপ করছেন।

দলটির নেতৃত্বে বৃহত্তম রাজনৈতিক জোট গঠন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পাদন করতেই রমজান শুরু হওয়ার আগেই ইফতারের তারিখ ও স্থান নির্ধারন করা হয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালসহ নানা ইস্যুতে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন বেগবান করতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আহ্বানের প্রেক্ষিতে বৃহত্তর জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে বিএনপি।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ জুলাই বিকল্প ধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ১৯ জুলাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীরউত্তম), ২০ জুলাই লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্ণেল (অব.) অলি আহমদ, ২৭ জুলাই কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিম বীরবিক্রম ও সমমনা ৮ দলের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির নেতৃত্বে পরিচালিত ৪ দলীয় জোটের সম্প্রসারিত অংশে অন্তর্ভূক্ত হতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই সম্মতি রয়েছে বলে পৃথক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব দল ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে।

তবে নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেও  আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে থাকা ও একসঙ্গে কাজ করতে সুবিধা অসুবিধাগুলো চিন্থিত করে তা ও জানিয়ে দিয়েছে এলডিপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা দল। কাদের সিদ্দিকী অবশ্য ৩টি শর্তও জুড়ে দিয়েছেন। এ সব বিষয় নিয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটি ও চারদলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ফখরুল জানান, এসব দলের সঙ্গে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক কোনো দল যদি বিএনপির সঙ্গে জোটে আসে সে দলকেও স্বাগত জানানো হবে। তিনি অবশ্য খোলাসা করে বলেননি কোনো দল তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে কিনা।

ফখরুল বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশের সব রাজনৈতিক দলকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অনেক দল তার আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে এলডিপি আমাদের সঙ্গে কাজ করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ আন্দোলনে কিভাবে কাজ করা হবে সে বিষয়ে তারা কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন। জামাতের ব্যাপারে এলডিপির পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি করেনি বলে জানান তিনি।

এলডিপির মহাসচিব অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম বলেন, সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে কাজ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এলডিপি। একই সঙ্গে বিএনপির আন্দোলনে মাঠে থাকারও সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।

তিনি আরও বলেন, আমরা এক সময় বিএনপিরই কর্মী ছিলাম। এখন দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আবার বিএনপির সঙ্গে কাজ করার নীতিগত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি।

৮ সমমনা দলের একটি বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে আমাদের ৮টি দলের বৈঠক হয়েছে। আমরা চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, সরকারবিরোধী বৃহৎ ঐক্য গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন দলের সঙ্গে যে বৈঠক চলছে, তারই ধারাবাহিকতায় কল্যাণ পার্টির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে বিএনপি।

ইবরাহিম আরো বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল ও পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের জন্যর ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে খালেদা জিয়ার আহ্বান নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আমাদের কাছে এসেছেন। এ সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল, সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস এবং ৭ (খ) ধারা নিয়ে  খোলামেলা আলোচনা হয়। কল্যাণ পার্টি মনে করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে নির্বাচন হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীতে বেশকিছু বিতর্কিত অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে। যা কখনও মানা যায় না। এসব বিষয়ে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে আমাদের নৈতিক ও রাজনৈতিক সর্মথন থাকবে। এছাড়াও এসব ইস্যুতে বৃহৎ ঐক্যগঠনের রূপরেখা কি হবে, কিভাবে আমরা বিএনপির সঙ্গে থাকব তা নিয়ে পরে আরও আলোচনা করে নির্ধারণ করা হবে।

উল্লেখ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল ও পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলসহ অন্যান্য ইস্যুতে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গঠনের লক্ষ্যে আলোচনার জন্য জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মহাজোট ও চারদলীয় জোটের বাইরে থাকা দলগুলোকে চিঠি দেয়া হয়। সে চিঠির পরই শুরু হয় বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা। সে আলোচনাকে ফলপ্রসু করার লক্ষেই চলছে আন্ত:যোগাযোগ।

জানা গেছে, আগামী ৪ আগস্ট বিএনপি আয়োজিত ইফতার পার্টিতেই এসব দল যোগ দিয়ে তাদের বৃহত্তর  ঐক্যের ঘোষণা দিতে পারেন।