সালিশদের বেত্রাঘাতে স্কুল ছাত্র গুরুতর আহত

এক ছাত্রকে বেত্রাঘাত করে গুরুতর আহত করা হয়েছে। এছাড়াও জরিমানা করা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। জরিমানার টাকা পরিশোধের জন্য কথিত সালিশরা স্কুল ছাত্রের দিনমজুর পিতাকে বিভিন্ন ধরনের চাপ প্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত ছাত্র শিপন হাওলাদারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের ভর্তি হওয়ার পর প্রভাবশালীদের অব্যাহত হুমকির মুখে আজ শনিবার দুপুরে আহত ছাত্র হাসপাতাল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। কথিত সালিশদের বেত্রাঘাতের কারনে আহত স্কুল ছাত্র স্কুলের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার দুটি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারেননি। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় প্রভবাশালী একটি মহল উঠে পরে লেগেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের দক্ষিণ শিহিপাশা গ্রামে। ওই গ্রামের দিনমজুর নুরুল হক হাওলাদার জানান, অতিসম্প্রতি কেরামবোর্ড খেলাকে কেন্দ্র করে শাওন শাহর সাথে পাশ্ববর্তী রাজেরবাড়ি গ্রামের মোশারফ হোসেনের বাকবিতন্ডা হয়। ওই ঘটনার জেরধরে রাজেরবাড়ি গ্রামের প্রভাবশালী জামাল সরদার তার (নুরুল হকের) পুত্র ও গৈলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র শিপন হাওলাদারকে (১৬) অভিযুক্ত করে মারধর করে। পরবর্তীতে গত ২৭ জুলাই এ ঘটনায় উভয়ের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত ২ আগস্ট সকালে গৈলা ইউনিয়ন পরিষদের সভা কক্ষে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। কথিত সালিশ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য হানিফ সরদার, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নুর মোহাম্মদ গাজী, সালাউদ্দিন বেপারী, সাবেক ইউপি সদস্য জলিল সরদার। ওই সালিশ বৈঠকে স্কুল ছাত্রকে অভিযুক্ত করে এক’শ ঘা বেত্রাঘাত করা হয়। আহত শিপন জানায়, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নুর মোহাম্মদ গাজী অন্যান্য সালিশদের নির্দেশে তাকে বেত্রাঘাত করে। ১০/১৫টি বেত্রাঘাত করার পর সে জ্ঞানশূণ্য হয়ে পরে। দিনমজুর নুরুল হক হাওলাদার বলেন, জ্ঞানশূণ্য হওয়ার পরেও নুর মোহাম্মদ আমার পুত্রকে অমানুষিক ভাবে পিটিয়ে বেতের লাঠি ভেঙ্গে ফেলেছে। কথিত ওই সালিশ বৈঠকে স্কুল ছাত্র শিপন হাওলাদারকে পিটিয়ে আহত করে উল্টো আরো ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ওই টাকার জন্য শুক্রবার (গত ৫ আগস্ট) সময় নির্ধারন করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে বেত্রাঘাতে আহত স্কুল ছাত্র শিপনকে আগৈলঝাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বেত্রাঘাতে আহত হওয়ায় শিপন দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার শেষের দুটি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারেনি। অপরদিকে সালিশদের বেঁধে দেয়া তারিখ মোতাবেক (শুক্রবার) জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় সালিশরা দিনমজুর নুরুল হককে বিভিন্ন ধরনের চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে বলে নুরুল হক হাওলাদার অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

সালিশ বৈঠকে বেত্রাঘাতে স্কুল ছাত্র গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সত্যতা স্বীকার করে আগৈলঝাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি অশোক কুমার নন্দি বলেন, লোকমুখে খবর পেয়ে থানার এস.আই নাসির উদ্দিনকে ঘটনাস্থলসহ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিলো। এ ব্যাপারে আহত স্কুল ছাত্রের পরিবারের পক্ষ থেকে মৌখিখ ভাবে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে কতিথ সালিশদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সালিশ বৈঠকে বেত্রাঘাতের সত্যতা স্বীকার করে গৈলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন লাল্টু বলেন, আমি ঘটনার দিন ইউনিয়ন পরিষদের উপস্থিত ছিলাম না। বেত্রাঘাতের বিষয়টি দুঃখজনক বলে তিনি মন্তব্য করেন।

কথিত সালিশদ্বার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নুর মোহাম্মদ গাজী বেত্রাঘাতের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সালিশ বৈঠকে উপস্থিত সকলের সিদ্ধান্তক্রমেই শিপনকে সামান্য কয়েকটি বেত্রাঘাত করা হয়েছে।