ধামাচাপা পরে যাচ্ছে গৌরনদীর আলোচিত শামীম হত্যা মামলা

শামীম বেপারীর হত্যা মামলাটি ক্রমেই ধামাচাপা পরে যাচ্ছে। এ মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করলেও তার কাছ থেকে তেমন কোন তথ্য উদ্ধার করতে পারেননি। অপরদিকে মামলা উত্তোলনের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীদের অব্যাহত হুমকির মুখে মামলার বাদি নিহত শামীমের ভাই আক্তার হোসেন বেপারী এখন চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন। তিনি তার ভাইয়ের হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়, প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।  

মামলার বাদি আক্তার বেপারীর অভিযোগ- বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দক্ষিন বাউরগাতি গ্রামের আকবর আলী বেপারীর পুত্র আক্তার হোসেন বেপারী অভিযোগ করে বলেন, আমার ছোট ভাই পান ব্যবসায়ী শামীম বেপারী (২৫)। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল দুপুরে শামীম পাশ্ববর্তী টরকী বন্দরে যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হয়। রাতে শামীম বাড়িতে না ফেরায় বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুজি করেও তার কোন সন্ধান পাইনি। এ ঘটনার চারদিন পর (৪ মে সকালে) পাশ্ববর্তী আনন্দপুর গ্রামের আলম সরদারের পানবরজ থেকে পুলিশ রক্তাক্ত অবস্থায় আমার নিখোঁজ ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আমি বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে গৌরনদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করি (যার নং-০৪/০৪-৫-২০১১ ইং)। গৌরনদী থানা পুলিশ আমার ভাই শামীমের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল মর্গে প্রেরন করে। ময়নাতদন্তের রির্পোটে আমার নিহত ভাইয়ের শরীরের বিভিন্নস্থানে ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। যা থেকে পুরোপুরি ধারনা করা হচ্ছে অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতকারীরা অপহরনের পর পরিকল্পিত ভাবে আমার ভাই শামীমকে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে গেছে। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে ইতিপূর্বে জুয়েল তালুকদার নামের এক যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আক্তার হোসেন আরো অভিযোগ করেন, মামলাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তিরা উঠেপরে লেগেছে। আমার ভাইয়ের লাশ উদ্ধারের পর পরই স্থানীয় সাদ্দাম তালুকদার (২০), জুয়েল বেপারী (২৩), হান্নান মোল্লা (২৪), শাহাদাত হাওলাদার (২০) আত্মগোপন করেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনে এখন আত্মগোপনে থেকে বিদেশে পাড়ি জমানোর জন্য আপ্রান চেষ্ঠা চালাচ্ছে।  আত্মগোপনে থাকা ওইসব ব্যক্তিদের প্রভাবশালী আত্মীয়-স্বজনেরা মামলা উত্তোলনের জন্য আমাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। তাদের অব্যাহত হুমকির মুখে আমি এখন চরম নিরাপত্তহীনতার মধ্যে রয়েছি। কান্নাজড়িত কন্ঠে আক্তার হোসেন বলেন, শেষ পর্যন্ত কি আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার পাবো, নাকি আমার ভাইয়ের মতো ওরা আমাকেও মেরে ফেলবে। বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পরেন আলোচিত শামীম হত্যা মামলার বাদি আক্তার হোসেন বেপারী। তিনি তার ভাইয়ের হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বক্তব্য- আলোচিত শামীম হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গৌরনদী থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক এস.আই শাহজালাল খলিফা বলেন, ময়না তদন্তের রির্পোটে ব্যবসায়ী শামীমকে যে হত্যা করা হয়েছে তার স্পষ্ট প্রমান পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের রির্পোট পেয়ে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে ইতোমধ্যে জুয়েল তালুকদার (২৫) নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রকৃত হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে অতিশীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।

গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসির বক্তব্য- গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম বলেন, সত্য কোনদিন চেপে রাখা যায়না, হত্যাকারীরাও বেশিদিন পালিয়ে থাকতে পারেনা। হত্যার প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য অসংখ্য সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই আলোচিত শামীম হত্যার মূল ঘাতকদের চিহ্নিত করা হবে। বাদিকে বিভিন্ন লোকের হুমকি দেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ ব্যাপারেও খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।