ঠিকাদারের অনিয়মকে বাঁধা দেয়ায় বিদ্যালয় নির্মাণ কাজ বন্ধ

একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ গত প্রায় ৫মাস ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। ভবন না থাকায় খোলা আকাশের নিচে ও বৃষ্টিতে ভিজেও পাঠদান চালু রাখায় শিক্ষক ও কোমলমতী শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোঁহাতে হচ্ছে। এলজিইডি, শিক্ষা অফিস ও ঠিকাদারের উদাসীনতায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম এখন বন্ধের পথে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের সমিতির হাটে ৩২ নং কালাই সরদারের চর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য এলজিইডি বিভাগ দরপত্র আহবান করলে কাজ পায় ঠিকাদার মীর ফেরদাউস। গত ৬মাস পূর্বে ঠিকাদার ভেঙ্গে ফেলা ভবনের পুরনো ইট ও লোহা নতুন ভবনে ব্যবহার করতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয়রা বাঁধা দেয়। ঠিকাদার মীর ফেরদাউস উপজেলা চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুকের ছোট ভাই হওয়ায় ক্ষমতার দাপটে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পুরনো ইট ও লোহা নতুন ভবন নির্মানে ব্যবহার করেন। এর বিরুদ্ধে এলাকাবাসী তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুললে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়ে ঠিকাদার বাকী ইট ভেঙ্গে খোয়া ও সেখান থেকে অন্যত্র সরিয়ে রেখেছেন। পুরনো ভবনের কোন ইট সেখানে সরেজমিনে গিয়ে পাওয়া যায়নি। নতুন ভবনে ব্যবহৃত ইট ও লোহাসহ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা পুরনো ভবনের অন্যান্য মালামালের বৈধতা দেয়ার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাগজে-কলমে নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্নের চেষ্টা করছেন বলে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ের পুরনো ভবনের ইট ও লোহাসহ যাবতীয় মালামাল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সম্পদ। তারা ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি নিয়মানুযায়ী উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে বিক্রয় বা নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র অনুযায়ী নতুন ভালো মানের ইট ব্যবহার করতে হবে। সেখানে পুরনো বা সরকারী কোন সম্পদ ব্যবহার করা যাবে না।

উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারকে কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে অন্য জায়গায় কাজে ব্যস্ত থাকায় ওই বিদ্যালয়ের কাজ সম্পন্ন করতে পারছেনা। তাছাড়া অর্থ সংকটও রয়েছে। তার বিল এখনো দিতে পারিনি। তারপরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সে শীঘ্রই কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে।

ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি জালাল সরদার বলেন, ভবন নির্মাণে পুরনো ইট ব্যবহার করায় বাঁধা দেয়া হয়েছিল। ঠিকাদারের ক্ষমতার দাপটের কারণে এখন বিদ্যালয়ে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছি। পুরনো ইট নেই একখানাও, লোহা-লক্করের কোন হদিস নেই। ঠিকাদার সবই গায়েব করেছে। পুরনো ভবনের ইট নতুন ভবনে ব্যবহার করলেও এলজিইডি ও শিক্ষা অফিস ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি আরো বলেন, ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখায় খোলা আকাশের নিচে বেঞ্চ বসিয়ে শ্রেণীকক্ষ তৈরী করা হয়েছে। আগে পাঠদান চললেও এখন বৃষ্টির কারণে প্রায় দিনই বন্ধ থাকে। অনেক কোমলমী শিশু শিক্ষার্থীরা এখন স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। মৌখিকভাবে বিষয়টি ইউএনও, এলজিইডি প্রকৌশলী ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।

প্রধান শিক্ষিকা বলেন, বর্ষায় খোলা আকাশের নিছে পাঠদান কার্যক্রম চালানো অসম্ভব। বিদ্যালয়ের আরেকটি ভবনে ২/৩টি শ্রেণীর ক্লাশ নেয়া হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীদের কষ্টের কথা উপরোস্থ কর্মকর্তাদের কাছে একাধিকবার বলেও সুফল পাইনি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, পুরনো ভবনের যাবতীয় মালামাল নিলামে বিক্রয় করার প্রস্তুতি চলছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করেই দ্রুত কাজ সম্পন্নের জন্য প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঠিকাদার মীর ফেরদাউসের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।