পাঁচ’শ বছরের পুরনো মনসা মন্দিরের বাৎসরিক পূজা আজ

কবি বিজয় গুপ্তের প্রতিষ্ঠিত মনসাকুন্ড বলেখ্যাত বরিশালের তৎকালীন গৌরনদী বর্তমান আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত প্রায় পাঁচ’শ বছরের পুরনো মনসা মন্দিরের বাৎসরিক পূজা আজ বৃহস্পতিবার।

এ উপলক্ষে মন্দির কমিটির উদ্যোগে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে আসতে শুরু করেছে মন্দিরের ভক্তবৃন্দরা। বাৎসরিক পূজাকে ঘিরে ওই এলাকায় এখন উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও মন্দির উন্নয়নের পূর্ণতা পেলে তীর্থস্থান গৈলার মনসা মন্দিরটির ইতিহাস ঐতিহ্য অমর হয়ে থাকবে।

আজ বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দরা মা মনসার মন্দিরের বাৎসরিক পূজা উদ্যাপনের জন্য দেশ-বিদেশের আগত ভক্তবৃন্দদের নিরবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তা বলয় ও প্যান্ডেল তৈরির কাজে মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

মধ্যযুগের প্রখাত্য কবি বিজয় গুপ্তের বংশধর দেশবরেন্য সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্ত জানান, মনসা দেবীর স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে নিজবাড়ির সম্মুখের দীঘিতে স্বপ্নে পাওয়া পূজার ঘট পেয়ে গৈলা গ্রামের নিজবাড়ির সম্মুখে কবি বিজয় গুপ্ত প্রায় পাঁচ’শ বছর পূর্বে মা মনসার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে অদ্যবধি ওই মন্দিরে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর শ্রাবনের সংক্রান্তি তিথীতে বাৎসরিক পূজা উদ্যাপিত হয়ে আসছে। তিনি আরো জানান, বাংলা সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক অভিবক্ত বাংলার ভারত বর্ষের শাসক তৎকালীন সুলতান হোসেন শাহ্র রাজত্বকালে ১৯৯৪ খ্রীষ্টাব্দে কবি বিজয় গুপ্ত মনসা মঙ্গল রচনা করে মহাকবিতে অধিষ্ট হন। পরবর্তীতে প্রায় পাঁচ’শ বছর পূর্বে তিনি (কবি বিজয় গুপ্ত) নিজ বাড়ির সম্মুখে প্রতিষ্ঠা করেন মা মনসার মন্দির। মহাকবি বিজয় গুপ্তের পিতা সনাতন গুপ্ত ও মাতা রুক্সনী দেবী।

মন্দির রক্ষণা বেক্ষন কমিটির সাধারন সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল দাস গুপ্ত অমর সৃষ্টি মনসা মঙ্গল কাব্য গ্রন্থের একটি অংশ থেকে বলেন, নমস্তে বিষহরী সর্ব্বদুঃখনাশিনী-সৃষ্টি স্থিতি প্রলয় তুমি, তুমি মূলধারিনী। তিনি জানান, দীর্ঘদিন পর বিগত ২০০৮ সনে ঢাকাস্থ হিন্দু সম্প্রদায়, বিদেশে অবস্থানরত মা মনসার মন্দিরের ভক্তবৃন্দদের আর্থিক অনুদানে মহাকবি বিজয় গুপ্তের বংশধর দেশবরেন্য সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্তের প্রচেষ্ঠায় কবির স্বপ্নে পাওয়া পূজার ঘটের সম্মুখে পিতলের তৈরি মনসা দেবীর প্রতিমা স্থাপন করা হয়। পিতলের তৈরি একটন ওজনের মনসা দেবীর প্রতিমা স্থাপন কালে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তী।

মন্দির কমিটির সভাপতি শংকর লাল বাড়ৈ বলেন, মন্দিরের উন্নয়ন কাজ এখনো চলছে। এ বছর মা মনসার মন্দিরের বাৎসরিক পূজা উপলক্ষে পূজা অর্চনা, বলিদান, ভোগের প্রসাদ বিতরনের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার-এ বাক্যকে ধারন করে জাতি ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে এ বছরের বাৎসরিক পূজা উপলক্ষে ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের ভক্তবৃন্দরা আসতে শুরু করেছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও পূজা উপলক্ষে পূজার্ঘ্য নিয়ে মানত দিতে দেশ-বিদেশের হাজার-হাজার ভক্তবৃন্দদের সমাগম ঘটবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আগতদের নিরবিছিন্ন নিরাপত্তা দিতে মন্দির ও পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি থানা পুলিশের পক্ষ থেকেও ব্যাপক নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। একদিনের বাৎসরিক পূজা উপলক্ষে মন্দিরের পাশ্ববর্তী এলাকায় গতকাল বুধবার থেকেই মেলা বসেছে।