শাবি ক্যাম্পাসে বাহারি ইফতার

রমজানের শেষের দিকে ছুটি হয়ে থাকে। রমজানে ক্লাস ও পরীক্ষাও চলে নিয়মিতভাবে। পরিবারের সাথে একত্রে ইফতার করা থেকে বঞ্চিত হলেও এখানকার শিক্ষার্থীরা সহপাঠীদের নিয়েই ইফতার করছে। আনন্দঘন পরিবেশেই আয়োজন করা হয়ে থাকে প্রতিদিনের ইফতার। হলের শিক্ষাথীরা হলে আর মেসের শিক্ষাথীরা মেসেই সাধারণত ইফতার করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক দুটি হল শাহপরাণ ও দ্বিতীয় ছাত্র হলে হলের শিক্ষার্থীদের ইফতারির আয়োজনও বেশ আনন্দময়। ছাত্রীদের জন্য আবাসিক প্রথম ছাত্রীহলেও উৎসবমুখর পরিবেশে ইফতার করছে ছাত্রীরা। তবে প্রতিদিনই ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনের ক্লাস রুমে অথবা নির্দিষ্ট স্থানে একত্রে ইফতার করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জেলা ভিত্তিক সংগঠন, বিভাগের উদ্যোগে বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে, ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের বিভিন্নরকম সংগঠনের সদস্যদের সংগঠনের ইফতার পার্টি। রমজান উপলক্ষে প্রতিদিনের ইফতার পার্টিতে অতিথি হিসেবে যোগ দিচ্ছেন সংগঠনগুলোর উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ। দেশের নানা স্থানে নানা রকমারি ইফতার সামগ্রির মতো সিলেটেও পাওযা যায় নানা পদের ইফতার সামগ্রী। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আখনিই প্রধানত এখানকার ইফতারির প্রধান আইটেম। এটা যেন এখানকার মানুষের ইফতারির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সে হিসেবে ক্যাম্পাসের ইফতারির আয়োজনে আখনিকেই প্রধান উপাদান হিসাবে রাখছে পাশাপাশি খেজুর, আলুর চপ, বেগুনি, জিলাপি, ছোলা বুট, শশা, পানীয় শরবতসহ নানা পদের খাবার ইফতারিতে খাওয়া হয়। ইফতার সামগ্রী সাধারণ নগরীর মদিনা মার্কেটে অবস্থিত বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট থেকে অর্ডার দিয়ে আনা হয়। নগরীর নানা হোটেল যেমন-হলিউড বলিউড, আকাশ কিংবা বৈশাখী রেস্টুরেন্ট কেউবা বনফুল ও স্বাদ মিষ্টি জাতীয় দোকান থেকেও ইফতার সামগ্রী অর্ডার দিয়ে থাকে। দোকানিরা সেভাবেই অর্ডার সরবরাহ করে । তাই শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টির আয়োজন করতে পারছে।  শাহপরাণ হলের ক্যাফেটরিয়া ও ক্যান্টিনে আয়োজন করা হয় ইফতারির। নানা রকম আইটেম সম্বলিত ইফতারিতে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। সারা দিনের রোযা রাখার ক্লান্তি যেন নিমেষেই দূর হয়ে যায়। কেউবা রুমে নিয়ে আসে ইফতার সামগ্রী। রুমমেটদের নিয়ে একত্রে বসে হয় ইফতার খাওয়া। এ যেন আর এক পরিবার। যেখানে  আপনজন নেই কিন্তু বাধন অনেক মজবুত, সম্পর্কটা আত্মার। এ তো শুধু ক্যাম্পাস জীবনেই সম্ভব। বন্ধুর সাথে খাবার ভাগাভাগি করে ত্যাগের মহিমার জ্বলন্ত উদাহরণ সৃষ্টি হয় ক্যাম্পাসে। আবাসিক হলের নৃবিজ্ঞান বিভাগের  ছাত্র মো. সাইফুল ইসলাম ফরহাদ জানায়, আমরা পরিবার থেকে অনেক দূরে আছি। কিন্তু বন্ধুদের নিয়ে বেশ ভালোই আছি। ইফতারিতে বেশ আনন্দই হয়। হলের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাক জানায়, হলে কিংবা ক্যাম্পাসের ইফতার সত্যিই অনেক আনন্দের। পরিবারের সদস্যদের মিস করছি, এখানে সবার সাথে ইফতার করছি কিন্তু কষ্ট মনে হয় না। ক্যাফেটরিয়ার কর্মচারি কাশেমের মতে, ছাত্রদের জন্য ইফতারি তৈরি করা এবং বিতরণ বেশ ভালোই লাগে। আমাদের মতো তারাও পরিবার থেকে  দূরে। হলে কিংবা ক্যাম্পাসে ইফতার করে বেশ সন্তুষ্ট রসায়ন বিভাগের মো. শফি। তার মতে, ক্লাস চলছে তাই বাড়িতে যেতে পারছিনা। তবে ইফতার কিংবা সেহরিতে তেমন খারাপ লাগে না। কারো কারো মতে ক্যাফেটরিয়ার খাবারের মান আরো উন্নত হলে ভালো হতো। মিনি অডিটোরিয়াম কিংবা ক্লাস রুমে বিভিন্ন সংগঠনের  ইফতার পার্টিও জমজমাট আড্ডায় পরিণত হয়। নতুন পুরাতন সদস্যরা একত্রে বসে ইফতার করে নিজেদের মধ্যে নতুন সম্পর্কের সৃষ্টি করে থাকে। ইফতার পরবর্তী সময়ে সন্ধ্যায় চলে জোছনা আলোয় আড্ডা। কারো কারো মুখ থেকে তখন অতীত কোন ইফতারির স্মৃতি কিংবা এই মুহূর্তে বাড়িতে থাকলে কেমন ইফতার হতো সেরকমও অভিব্যক্তি প্রকাশ পায়। কিছুক্ষণ চলে জম্পেশ আড্ডা। ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতিগুলো সবারই ভবিষ্যতে মনে জাগবে। তখন হয়তো এগুলো রোমন্থন করে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও ফিরে যাবে অতীত স্মৃতিতে। ক্যাম্পাস জীবনের সুখ আর দুঃখ গুলোই ভেসে উঠবে জ্বলজ্বল করে এমনটিই প্রত্যাশা এখানকার শিক্ষার্থীদের।