অর্থ লুটপাট হয়ে যাওয়ায় সড়ক-মহাসড়ক নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে -বিএনপি

পৌঁছেছে বলে দাবি করে বিএনপি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ঈদের আগে মেরামতের টাকাও লোপাট হবে। গতকাল সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ, রুহুল কবির রিজভী, সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ, সহ দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন, শামীমুর রহমান শামীম, সহ সমাজকল্যান সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে গত পৌনে ৩ বছরে ১ হাজার ৭৩৪ কোটি ৪২ লাখ টাকার কোনো কাজ হয়নি বলেই মহাসড়ক-আঞ্চলিক ও জেলা সড়কগুলোর এ নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় লুটেরা বাহিনী ওই অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে।

অর্থ ও যোগাযোগমন্ত্রীর বাগযুদ্ধের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, আমরা মন্ত্রীদের এরকম বাহাস শুনে বিস্মিত হই। খোদ মহাজোটের সিনিয়র নেতারা এরকম ন্যাক্কারজনক বির্তকের নিন্দা করলেও ওই সব মন্ত্রীরা কেউই পদত্যাগ করেননি।

তিনি বলেন, তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনিরসহ সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রচুর মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সেজন্য বর্তমানের সড়ক ব্যবস্থাপণা ও সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। সরকারের মন্ত্রী সভাব সুলভ ভঙ্গিতে হাসি হাসি মুখে কথা বলছেন।

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ সরকার ব্যর্থ মন্ত্রীদের সরকার। গোটা মন্ত্রিসভাই ব্যর্থ। তাই তাদের পদত্যাগ করা উচিৎ। নইলে গণবিস্ফোরণেই এ সরকারের পতন ঘটবে।

দেশের বিভিন্ন সড়কের বেহাল অবস্থার চিত্র তুলে ধরে ফখরুল বলেন, গত ৪০ বছরের মধ্যে সড়কের এমন দশা কখনো হয়নি। তিনি বলেন, যোগাযোগ মন্ত্রীর প্রতি করুণা করা ছাড়া আমাদের আর কিছু বলার নেই। দেশের সড়ক যোগযোগ ব্যবস্থা ১৯৭১ সালেও এত খারাপ ছিলো না। মানুষজন শান্তিতে ও নিরাপদে বাড়ি ফিরে ঈদ উৎসব করতে পারবে কি না, এ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০০৮-০৯ থেকে ২০১০-১১ অর্থবছর পর্যন্ত সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ১৬৬৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং সড়ক সংস্কার ও মেরামতের জন্য বিশেষ প্রকল্পে ১০৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সর্বমোট ১৭৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা যথাযথভাবে ব্যয় হলে মহাসড়কগুলো বেহাল হতো না।

অর্থপ্রাপ্তি সাপেক্ষে ঈদের আগে বিধ্বস্ত সড়ক মেরামত শেষ হবে যোগাযোগমন্ত্রীর এ আশ্বাসকে ‘মিথ্যা’ অভিহিত করে ফখরুল বলেন, এর অর্থই হলো বিনা টেন্ডারে দলীয় লোকদের মধ্যে কাজ বণ্টন করা। যাতে দলীয় লোকেরা কোনো কাজ না করে অথবা নাম মাত্র কাজ করে সব টাকা লুট করে নিয়ে যাবে।

ঈদের আগে ৭/১০ দিনের মধ্যে নিন্মমানের ইট-ঝামা নিক্ষেপ করে কিছু খানাখন্দ দিয়ে আপাতত গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা হয়তো করা যাবে, কিন্তু এ ধরনের কাজ টেকসই হবে না। এতে লুটেরাদের পকেট পুরবে, কিন্তু জনগণের ভোগান্তির শেষ হবে না।

তিনি বলেন, দেশের সকল মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক ও জেলা সড়কগুলো বর্তমানে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে কয়েক মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ নিহত হয়েছে। গত এক মাসেই নিহত হয়েছে শতাধিক। ট্রাফিক জ্যামে পণ্য পরিবহনে খরচ অতি মাত্রায় বেড়ে গেছে। মহাখালী থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিলো। দুজন মন্ত্রীর দেন দরবারে আবার চালু হলেও বেশি দিন চলতে পারবে বলে মনে হয় না।

তিনি বলেন, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ড অংশের তিন কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খুব খারাপ। শিগগিরই মেরামত না করলে ওই সড়কেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। মেরামতের অভাবে কুমিল্লা-বি.বাড়িয়া, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের বনপাড়া-হাটিকুমরুল অংশ। যশোর-খুলনা মহাসড়কের অবস্থাও খারাপ। এক কথায় সংস্কারের অভাবে সাড়া দেশের মহাসড়ক  ও জেলা সড়কগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা মুখ থুবরে পড়েছে।

তিনি বলেন, এনিয়ে সরকারের কোনো মাথা ব্যথা নেই। পদ্মা সেতু, উড়াল সেতু, পাতাল রেলের মত বড় বড় প্রকল্প নিয়ে তারা ব্যস্ত। খোদ সরকারি দলের নেতারাই বলেছেন, বৃহদাকার কমিশন পাওয়া যাবে বিধায় ছোট ছোট সংস্কার ও মেরামতের কাজের পরিবর্তে বৃহদাকার প্রকল্পের দিকে সরকারের নজর বেশি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়ক মেরামত একটি রুটিন প্রক্রিয়া। সড়ক ও জনপদ বিগত তিন বছর কোনো সংস্কার কাজ না করায় বর্তমানে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।  

তিনি বলেন, সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মনিরের মতো ব্যক্তিত্বের মৃত্যুর  পরও সরকারের টনক নড়েছে বলে মনে হয় না। প্রধানমন্ত্রী তার চিরন্তন অভ্যাস বসত মূল সমস্যা বিএনপির ঘাড়েই চাপিয়ে যেতে চান। অথচ প্রায় ৫ বছর আগে বিএনপি ক্ষমতা ছেড়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপি আমলে সড়কের সঠিক মেরামত করার কারণে কোনো ব্যঘাত ঘটেনি। ২০০৭ সাল হতে এখন পর্যন্ত ৫বছরে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যথা সময়ে সড়ক সংস্কার মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম গৃহিত হলে সারাদেশে সড়ক যোগাযোগ ক্ষেত্রে আজকের এ দুর্বিসহ বেহাল দশা হতো না।

তিনি দাবি করেন, বিএনপির আমলে সারা দেশে সড়ক যোগাযোগে অনেক উন্নয়ন হয়েছিলো। ২০০১-২০০২ হতে ২০০৬-২০০৭ অর্থবছরে ১২০৯০.৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় বিবিধ উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। তারমধ্যে দ্বিতীয় কর্নফুলি সেতু, দপদপিয়া সেতু, তিন্তা সেতু, দ্বিতীয় শীতলক্ষা সেতু, যমুনা সেতু-হাটিকুমরুল মহাসড়ক উল্লেখযোগ্য।  বিএনপির সময় প্রবল বন্যা সত্তেও যোগযোগ ব্যবস্থা খুব ভালো ছিলো।

তিনি বলেন, সংসদে যোগাযোগ ও অর্থমন্ত্রীর বাহাস শুনে আমরা বিস্মিত হই। সড়ক যোগযোগের এহেন ত্রাহি অবস্থায় মন্ত্রীরা সড়ক মেরামতের পরিবর্তে একে অপরের উপর দোষ চাপিয়ে পার পাওয়ার নির্লজ্জ ও উলঙ্গ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। খোদ মহাজোটের সিনিয়র নেতারা এই ন্যাক্কারজনক বাহাসের তীব্র নিন্দা করে তাদের পদত্যাগের দাবি করেছেন।

যোগাযোগ মন্ত্রী নিজেকে বাচানোর প্রয়াসে ট্রুথ কমিশনে আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ সড়ক ও জনপদের প্রধান প্রকৌশলীকে কৌশলে পদত্যাগ করিয়েছেন। জাতি এর সবই লক্ষ্য করছে। স্পট টেন্ডারের মাধ্যমে সড়ক সংস্কার কাজ সম্পাদন করা হবে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় হতে রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বরাদ্দকৃত ৬৯০ কোটি টাকা পুরোটাই চলে যাবে লুটেরাদের পকেটে। মাত্র ৭/১০ দিনের মধ্যে দেশব্যাপি এত বড় মেরামতযজ্ঞ শেষ করা আদৌ সম্ভব নয়।

নৌমন্ত্রী শাহজাহান খানের সুপারিশে ২০ হাজারের অধিক ব্যক্তিকে বিনা পরীক্ষায় ভারী যানবাহনের লাইসেন্স দেয়াকে ‘ঠান্ডা মাথায় হত্যার লাইসেন্স’ দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, দেশের বিচারালয়ে নৈরাজ্য চলছে। পুরো জাতি আজ সাংবিধানিক সংকটে নিপতিত। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল ও দলীয় সরকারের আওতায় নির্বাচন এদেশের জনগণ কখনো মেনে নেবে না।

ঈদের পরে গণআন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপরসন খালেদা জিয়া। তিনি সকলকে ঈদ পরবর্তী গণ আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণের উদাত্ত আহ্বান জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা আলমগীর বলেন, জনগণের সমস্যা সমাধানের জন্য রমজান মাসে হরতাল দিলে জনগণেরই সমস্যা হবে সেজন্য হরতাল দেয়া হয়নি।