বরিশাল লঞ্চের কেবিন নিয়ে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি

শাহীন হাসান, বরিশাল ॥ ঈদকে পুজি করে বরিশালে রোটেশন পদ্ধতি ও দালাল চক্রদের কারনে বরিশাল টু ঢাকা এবং ঢাকা টু বরিশালগামী যাত্রীদের ভোগান্তি এবার কেবিন ক্রয় যুদ্ধে পরিনত হয়েছে। এ পদ্ধতি বাতিল না হলে এই রুটের যাত্রীদের ভোগান্তি কোনদিনই শেষ হবেনা। কিন্তু এ পদ্ধতিতে লঞ্চ মালিকদের ১দিন অন্তর অন্তর প্রতিটি লঞ্চ এ রুটে চলাচলের কথা থাকলেও একমাত্র পারাবাত লঞ্চ প্রতিদিন চলছে। এই লঞ্চের মালিক নৌ-পরিবহন মন্ত্রির আতœীয় হওয়ায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষের রুটেশন পদ্ধতি তারা মানে না। সূত্র বলছে, এভাবে প্রত্যেকদিন লঞ্চ মালিকরা তাদের লঞ্চ চলাচলের সুযোগ পেলে যাত্রীদের এই ভোগান্তির ইতি ঘটানো সম্ভব।
তবে এবার ঈদকে সামনে রেখে অতিরিক্ত ট্রিপ দেয়ার ব্যাবস্থা থাকলেও সেগুলো রয়েছে লঞ্চ মালিকদের আদলে লালিত কেরানি, বুকিং কাউন্টারের বুকিং ক্লার্ক, লঞ্চ  ম্যানেজার, সুপার ভাইজার ও দালালদের দখলে। এক্ষেত্রে দালালদের উপর দোষারুপ করা হলেও তাদের ব্যাবহার করছেন খোদ লঞ্চ মালিক কর্তপক্ষ। এ ছাড়া প্রত্যেকটি লঞ্চগুলোর সরকারী বেসরকারী কোঠাগুলোকে দালালদের দিয়েই বিক্রি করাচ্ছেন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। স্বরজমিন ঘুরে জানাগেছে, কেরানিদের দখলে রয়েছে প্রথম ১০টি কেবিন। এ ছাড়া প্রত্যেকটি লঞ্চ থেকে ১টি ডবল ও ১টি সিঙ্গেল কেবিন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্টানগুলোর জন্য প্রতিদিন বরাদ্দ থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান গুলোর বরাদ্দকৃত কেবিনগুলো বেশীর ভাগই স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের দালাল দের মাধ্যমে বিক্রি হয়ে থাকে। উলে¬খযোগ্য এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লঞ্চ মালিক সমিতির কেবিন বিক্রি করছে পিওন মুকুল, অফসোনিন ঔষধ কোম্পানীর কেবিন বিক্রি করছে অপসোনিনের স্টাফ আলতাফ ওরফে দালাল আলতাফ,রেফকো র্ফামাসিটিক্যালসের কেবিন বিক্রি করছে রেফকোর মাল টানার কাজে নিয়োজিত সালাউদ্দিন, কেমিষ্ট র্ফামাসিটিক্যালসের কেবিন বিক্রি করছে কোম্পানির ঔষধ ঢাকায় আনানেয়ার দায়িত্বে থাকা লালু এবং স্যাইভ দ্যা চিল্ড্রেনের কেবিনের কেবিন বিক্রি করছে  আলাউদ্দিন। এছাড়া নৌ-ফারী পুলিশের জন্য বরাদ্দ কেবিন বিক্রি করছেন টি এসআই মোশারেফ নিজেই দালালদের কছে। তবে একমাত্র র‌্যাব অফিসের জন্য বরাদ্ধ কেবিন র‌্যাব সংশি¬ষ্টরা ব্যাবহার না করলে তা ফেরৎ দেয়া হয়। তাছাড়া ডিসি অফিস সহ বাকী সব সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কেবিন সহ বিভিন্ন নামে যে সব কেবিন দালালদের দখলে তারা হল পারাবাত লঞ্চের জাসিম, ইব্রাহীম (পদ্মাপতি), ইমাম, কীর্ত্তনখোলা-দ্বীপরাজ লঞ্চের বাবু  ছাড়াও হেলাল, সেলিম, মুরাদ, খোকন, টিপু সহ অনেকে। এরা প্রকাশ্যে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে সদর ঘাট ও লঞ্চ অভ্যন্তরে বরিশালে বসে ঢাকার কেবিন ব¬াকিং করছে। ও দিকে ঈদ উপলক্ষে ঢাকা টু বরিশাল রুটে কেবিন প্রতি লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ২শ টাকা হারে কেবিন ভাড়া বৃদ্ধি করলেও ২৪ আগষ্ট থেকেই লঞ্চের বুকিং কাউন্টারগুলো সাফ জানিয়ে দিয়েছে কোন কেবিন খালি নেই। কিন্তু স্বরজমিন দেখছে ভিন্ন চিত্র। ঈদ উপলক্ষে বৃদ্ধি করা ৮শ টাকার সিঙ্গেল কেবিন বিক্রি হচ্ছে ২হাজার থেকে ২২শ টাকায়, ১৪শ টাকার ডবল কেবিন ২৫শ থেকে ৩ হাজার টাকায়, ১৫শ টাকার ভিআইপি কেবিন (মিনি) ৩-৪হাজার টাকায় এ ছাড়া ভিআইপি (বড়) ব¬াকিং এ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায়। রুটেশন পদ্ধতির নেপথ্যে যারা ভূমিকা পালন করছেন তারা হল সুরভী ,সুন্দরবন, পারাবাত,র্কীত্তনখোলা-দ্বীপরাজ ও এম ভি কালাম খান লঞ্চ মালিকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালিক সমিতির বিশ্বস্ত একটি সূত্রের দাবী,  লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষের যোগ সাজেশেই আই ডবি¬উ টি এ কর্তৃক  এই রুটেশন পদ্ধতি অনুমদিত হয়েছে। সুন্দরবন লঞ্চের মালিক সাইদুর রহমান রিন্টু এক সাক্ষাৎকারে রোটেশন পদ্ধতি সম্পর্কে এই প্রতিবেদকে জানান, রোটেশন পদ্ধতি সম্পূর্ন আই ডব¬উটি’র ব্যাপার। যদি তারা আমাদের ডাকে তবে অবশ্যই আমরা বসব। জনগনের স্বার্থে আমরাও চাই এ পদ্ধতি বাতিল হোক। এ বিষয়ে আইডবি¬উ টি এর পরিচালক শফিকুজ্জামান এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বরিশালে রোটেশন পদ্ধতি বলতে কিছুই নাই। লঞ্চ মালিক সমিতি যদি লিখিত কোন অভিযোগ করে তবে আমারা সেটা দেখব। তাছাড়া ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের ভেরিফিকেশনের ভিত্তিতে যে কোন ব্যাবস্থা গ্রহন কারা হবে। তবে রোটেশন পদ্ধতি না থাকলে কি কারনে এই ৫ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি গঠন হয়েছে এ প্রশ্ন করার সাথে সাথে তিনি মোবাইল ফোন কেটে দেন। তবে এখন পর্যন্ত আলোর মুখ না দেখায় আই ডবি¬উ টি’র কার্যক্রম নিয়ে জনমনে নিন্দা দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য, সারা বাংলাদেশে ১০৪টি লঞ্চ পূর্বে চলাচল করত। বর্তমানে যা ৬০টিতে এসে ঠেকেছে। তম্নোধ্যে বরিশাল টু ঢাকা রুটে পূর্বের ৬/৭টি লঞ্চর স্থলে বর্তমানে চলছে ৩টি লঞ্চ। রুটেশন পদ্ধতি বাতিলের দাবীতে নগরীতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কমসূচি পালিত হলেও তদুপরি আই ডবি¬উ টি এ সমস্যা সমাধানে কোন পদক্ষেপ নেননি। এমনকি রুটেশন পদ্ধতির কারনে রাজহংস নামক লঞ্চটিকেও বন্ধ করে দেয়া হয়েছ। লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সাথে দালালচক্রের যোগসাজেশ থাকার কারনে প্রশাষন বহু চেষ্টার পরও দালাল উৎখাত করতে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহন করেও তা বাস্তবে রুপ দিতে পারেনি। যে কারনে দালাল চক্র নয় বরং এই চক্রকে মদদদাতাদের চিহ্নিত করার দাবী গোটা বরিশালবাসীর।