রাজাপুরে শিক্ষক হত্যার ঘটনায় ছাত্র-শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

আহমেদ আবু জাফর, ঝালকাঠি ॥ ঝালকাঠিতে গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগীতা হ্যান্ডবল খেলা নিয়ে রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া দু’ উপজেলার শিক্ষার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে  শিক্ষক নিহতের ঘটনায় রবিবার আটককৃত ৬ ছাত্র শিক্ষককে আসামী করে রাজাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত স্কুল শিক্ষক আলমগীর খলিফার পুত্র কাওছার হোসেন নয়ন বাদী হয়ে মামলা (নং-৬) দায়ের করেন।

রাজাপুর থানার ওসি তোফাজ্জেল হোসেন মামলার সত্যতা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন আটককৃত ৬ জনের মধ্যে ৫ জনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।  মামলার আসামীরা সকলেই কাঁঠালিয়া উপজেলার ছাত্র শিক্ষক বলে তিনি জানান। গত শুক্রবার বিকেলে ঝালকাঠি পুরাতন ষ্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হ্যান্ডবল খেলা প্রতিযোগিতা নিয়ে দুই উপজেলার শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধেঁ। এরই জের ধরে রাজাপুর উপজেলার সমর্থকরা কাঠালিয়ার খেলোয়ারদের পিংড়ি নামক স্থানে থানা পুলিশের সামনে পুনরায় শিক্ষার্থী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে উভয় উপজেলার ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়। এর মধ্যে রাজাপুর পিংড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আলমগীর খলিফা গুরুতর আহত হন।  রাতে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে তিনি মারা যান। এ ব্যাপারে গত শুক্রবার রাতেই রাজাপুর থানা পুলিশ কাঁঠালিয়া থেকে ৬ ছাত্র-শিক্ষককে আটক করে।

এদিকে রাজাপুরের পিংড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা  শনিবার থেকে ক্লাশ বর্জন শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপকালে জানায়, তাদের প্রিয় শিক্ষক হত্যার সঠিক বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাশ বর্জন কর্মসূচী ও পরবর্তীতে উপজেলা জুড়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষনা দেয়া হবে। এদিকে বিদ্যালয়ের আয়োজনে সহকর্মি হত্যার বিচারের দাবীতে আজ সোমবার সকালে উপজেলার সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচীর ঘোষনা রয়েছে।

এখনও নিহত শিক্ষক আলমগীর হোসেনর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আত্মীয়-স্বজন, ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকাবাসী ভিড় করছে তার বাড়িতে। তাদের একটাই দাবী দোষিদের দ্রুত আটক করে বিচারের আওতায় আনা হোক। অন্যদিকে কাঁঠালিয়ায় চলছে গ্রেফতার আতংক। সংশ্লিষ্ট স্কুলের ছাত্র-শিক্ষক ও এলাকাবাসী সকলেই ভুগছে গ্রেফতার আতংকে। উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গতকালও ছিল অঘোষিত বন্ধ।  আটককৃত ছাত্র-শিক্ষকদের মুক্তির দাবীতে তারাও আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ঘটনার দিন ষ্টেডিয়াম থেকে খেলা শেষে বের হয়ে রাজাপুরের খেলোয়াররা ঝালকাঠি থানা ও প্রেসক্লাব মধ্যবর্তী মোড় এলাকায় কাঠালিয়ার খেলোয়ারদের ওপর হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে উভয়পক্ষ নরম সুরে কথাকাটাকাটি করলেও পরে রাজাপুরের খেলোয়াররা কাঠালিয়ার খেলোয়ারদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এবং  এক ছাত্রকে রাস্তার  ওপর ফেলে এলোপাথারি লাথি  মারতে থাকে। তখন কতক ছাত্র ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখলে রাজাপুরের গ্র“পটি দৌড়ে ঝালকাঠি থানার সামনে ষ্টেডিয়াম গেটে টেম্পুতে উঠে নিরাপদ আশ্রয় নেয়। পরে ক্রীড়া সংস্থার  দু’নেতার হস্তক্ষেপে উভয়পক্ষ গন্তব্যে চলে যায়।  অপর একটি সুত্র জানায়, রাজাপুরের গ্র“পটি পুনরায় কাঠালিয়ার গ্র“পকে ঝালকাঠি কলেজ মোড় এলাকায় আটক করে মারধরের চেষ্টা চালায়। ঐ স্থানে তেমন সুযোগ করতে না পেরে তারা রাজাপুরের পিংড়ি এলাকায় টেম্পুযোগে দ্রুত গিয়ে কাঠালিয়ার বাসটির গতিরোধ করে। হামলার আশংকার খবর পেয়ে পূর্বেই পুলিশ পিংড়ি এলাকায় উপস্থিত হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে দু’ উপজেলার সমর্থক, শিক্ষক ও ছাত্রের মাঝে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটে। এতে ঐ শিক্ষকের মাথায় ইটের আঘাত লেগে আহত হলে বরিশাল শেবাচিমে তিনি মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, এ সময় রাজাপুরের গ্র“পটি বাসের মধ্যে থাকা মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রীদের কটুক্তি ও অশোভন আচরনের শিকার হয়েছে।