গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার কৃষি জলাভূমি থেকে নির্বিচারে শামুক নিধন

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন জলাভূমি ও কৃষি জমি থেকে বর্ষা মৌসুমে অব্যাহতভাবে শামুক নিধন চলছে। সংগৃহিত শামুকের খোলসের মধ্যের নরম অংশ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন চিংড়ি ঘেরে মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছে মালিকরা। নির্বিচারে শামুক নিধনের ফলে পরিবেশ হারাচ্ছে স্বাভাবিক ভারসাম্য আর জমিতে পড়ছে এর বিরূপ প্রভাব।

দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি নির্ভর এলাকা হচ্ছে বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা। এসব উপজেলায় রয়েছে বিস্তীর্ণ প্লাবিত কৃষি জমি। যার অধিকাংশ জমি বৈশাখ মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এসব জলাভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় শামুক। শামুক একটি নিরীহ জলজ প্রাণী হওয়ায় সহজেই তা ধরে কুড়িয়ে বিক্রি করছে একশ্রেনীর মুনাফালোভীরা। আর শামুক কুড়ানোর কাজ করছেন এখানাকার দারিদ্র পরিবারের শিশু, কিশোর ও নারী-পুরুষেরা।

আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার, বাকাল, আস্কর, বাগধা, কোদালধোয়া, বাশাইল, বাটরা, বাহাদুরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষি জলাভূমি ও বিল থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ টন শামুক সংগ্রহ করা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে শামুক বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি অতিরিক্ত আয়ের পথ বেছে নিয়েছেন এখানকার অনেকেই। ঘের মলিকের লোকজন স্থানীয়দের ২/১ জনকে সাথে নিয়ে সকাল ও বিকেলে নৌকায় করে গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে শামুক ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। ক্রমান্ময়ে বাটরা ও রামশীল এলাকায় শামুকের হাট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখানে প্রতি কেজি শামুক বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়। ব্যবসায়ীরা এসব শামুক কিনে বাগেরহাট, খুলনাসহ বিভিন্ন মোকাম ও মাছের ঘের মালিকদের কাছে বিক্রি করছে। এভাবে বর্ষা মৌসুমের আষাঢ় মাস থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত চলে শামুক কেনা বেচা। শামুক আহরণ ও কেনাবেচার মধ্যে ফড়িয়া থেকে শুরু করে আহরণকারীদের দাদন দিয়ে থাকে চিংড়িঘের ও মোকামের মালিকেরা। প্রতিদিন ছোট ছোট নৌকায় করে শামুক বিক্রি করতে আসে দরিদ্র পরিবারের স্কুল পড়ুয়া কিশোর-কিশোরীরাও। রোদের সময় শামুক পানির নিচের অংশে চলে যাওয়ায় তারা সকাল ও বিকেলে শামুক কুড়ানোর কাজ করে।

শামুক ব্যবসার সাথে জড়িত ফরিয়ারা সরাসরি চিংড়ি ঘের মালিকদের কাছে শামুক বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা লাভ করে। শামুক আহরণকারী সুভাষ মিস্ত্রি জানান, প্রতিদিন তারা শামুক বিক্রি করে ৫০ থেকে ১০০ টাকা আয় করে থাকেন। তবে পুঁজি না খাটিয়ে শামুক আহরণ করা যায় বলে অনেকেই এখন শামুক আহরণ করছে। আগে যেখানে এক নৌকা শামুক আহরণ করা যেত এখন সেখানে ১০ থেকে ১৫ কেজি শামুক আহরণ করাই কষ্ট হচ্ছে। কারণ আগের তুলনায় অহরহ শামুক দেখতে পাওয়া যায়না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিংড়িঘের মালিক এ প্রতিনিধিকে জানান, তৈরি ফিস ফিডের চেয়ে শামুক সুলভ ও মাছের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে তারা এলাকায় শামুক ব্যবসায়ীদের দাদন দিয়ে শামুক ক্রয় করে থাকেন।

আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেন্দ্র নাথ বাড়ৈ বলেন, শামুক পরিবেশ তথা কৃষির ক্ষেত্রে বেশ উপকারী। এলাকার দরিদ্র পরিবারের লোকজন বর্ষা মৌসুমে শামুক আহরণ করে বিক্রি করে থাকেন। আসলে তারা জানেননা যে শামুক নিধন পরিবেশের জন্য যে কতো ক্ষতিকারক। শামুক কৃষি জমিতে ফসল বিনষ্টকারী বিভিন্ন পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফসল সুরক্ষা করে। এ জন্য শামুক নিধন না করে বরং শামুক চাষের প্রয়োজন। এতে পরিবেশের ভারসাম্য সুরক্ষিত থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।