এ্যতনা হিম্মত!

আবিদ রহমানঃ বিভিন্ন কারণে আবারো সংবাদ শিরোণাম হছে টাকার কুমীর রাজনৈতিক মৌলবাদ জামায়াত। যুদ্ধাপরাধে সক্রিয়ভাবে জড়িত ও নেতৃত্বদানকারী জামায়াত জাতীয় নেতৃত্বের রাজনৈতিক দূর্বলতার সুযোগে আবারো প্রকাশ্য। ঘৃণ্য অপরাধের কারণে জেগে ওঠা গণরোষের কারণে কিছুদিন আত্মগোপনে যাওয়া জামায়াত সবসময় সমান্তরালভাবে টাকা রোজগার ও ধর্মের ছায়ায় মসজিদ-মাদ্রাসার আধিপত্য কায়েমের লক্ষ্যে কাজ করেছে। দুই লক্ষ্যেই জামায়াত `কামিয়াবী’ অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, আদালত ও কারাগারগুলোতে জামায়াত সুপরিকল্পিতভাবে নিজেদের দলীয় কর্মী, বিশ্বস্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের বসিয়েছে। এরশাদের জমানায় বড় দু’টি রাজনৈতিক দল, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র আচঁল ধরে জামায়াত রাজনৈতিক প্রকাশ্যে আসে।

তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের শুভ সূচনা ঘটায় জিয়ার `গণতান্ত্রিক’ উদার ছত্রছায়ায়। বিএনপি’র গেল ক্ষমতার ’হাওয়া’ যুগে, জাতীয়াবাদীরা যখন লুটপাট আর দূর্নীতিতে ব্যস্ত, জামায়াত তখন নিবেদিত প্রশাসন দখল আর যুদ্ধাপরাধের প্রমানচিহ¡ গায়েবে। জামায়াত খুব বেশী টাকার পেছনে ছোটেনি, কারণ ইতোমধ্যেই ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, ঔষধ কোম্পানী, রীয়েল এস্টেট, আদম ব্যবসা, এনজিও, গার্মেন্টস, হিরোইন-ইয়াবা ইত্যাকার ব্যবসায় জামায়াত বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। বাৎসরিক কুড়ি-বাইশ হাজার কোটি রোজগার। এর বাইরে আছে মধ্যপ্রাচ্য ও সউদীদের জাকাত ডোনেশন। প্রবাসে ঈদের নামাজগুলোতে ফেৎরা-জাকাত-কোরবাণীর নামে উঠা ডলারগুলো জামায়াতী চ্যানেলে বিলি-বন্টন হয়।

দেশের প্রায় পাঁচশ’ টি উপজেলার নেতা-কর্মীদের জামায়াত অনায়সে মাসে পাঁচ কোটি টাকা মাসোহারা দিতে পারে। ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিল জামায়াতের আরেক রিক্রুটিং মাধ্যম। ওয়াজের `মধ্য গগণে’ জামায়াতী হুজুর চিৎকার করে জানতে চান, আপনারা হাসিনা-খালেদার আইন চান, নাকি আল্লাহ র সুলের আইন চান?`। সংগত কারণের ধর্মপ্রাণ উপস্হিতিরা আল্লাহ-রসুলের আইন কামনা করেন। আর মানুষের এই ধর্ম ভীরুতার সুযোগে-আল্লাহ-রসুলের আইনের নামে `জামায়াতী’ আইনের ফাঁদ পাঁতা হয়। এভাবেই জামায়াত আজ অর্থ-লোকবলে বলীয়ান।

যুদ্ধাপরাধে আটক জামায়াতের চার শীর্ষ নেতা চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী। তাদের অপরাধের জলজ্যান্ত প্রমান মেলে ১৯৭১-এর পত্র-পত্রিকায়। তবুও প্রমান সংগ্রহের নামে এদিকে চলে সময় ক্ষেপন অন্যদিকে কারাবন্ধী জামায়াত নেতারা থাকেন জেলের ভিআইপি সেলের রাজকীয় আপ্যায়নে। আশ্চর্য, স্বাধীন বাংলাদেশের কারাগারে মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারীকারী থাকে আরাম-আয়াশে। আর মুক্তিযোদ্ধারা? গুজব আছে, এক বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নাকি সাঈদীর `খেদমতে’ নিয়োজিত। কয়েকদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম, বিনা ডিভিশনের কাদের মোল্লা বিনানুমতিতে ভিআইপি সেলে নেতাদের সাথে খোশগল্পে-মিটিংয়ে ব্যস্ত। কারারুদ্ধ জামায়াতীদের কাছ থেকে ’ইস্তেমাল’ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি মোবাইল। জেলের নিরাপদ আশ্রয়ে থেকেই এইসব যুদ্ধাপরাধী দলীয় কর্মীদের পরিচালিত করে, দিক-নির্দেশনা দেয়। বিভিন্ন ’ডেটে’ আদালতে হাজিরার নামে আত্মীয়-স্বজন, দলীয় নেতা ও উকিলদের সাথে প্রকাশ্য মিটিংয়ের ব্যবস্হা হয়।

’রাজনৈতিক’ গলির ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা জামায়াত সরকারী নিস্ক্রিয়তায় (ও অপ্রকাশ্য পৃষ্ঠপোষকতায়) সোমবার হঠাৎ রাজপথে তান্ডব চালিয়ে প্রমান দিলো, ষড়যন্ত্রের মৃত্যু নেই। টাকার জোর ম্লান হয়না। কেবল মিটিং-মিছিলে সীমাবদ্ধ থাকলে হয়তো বিস্তারিত বলার অবকাশ হতোনা। জামায়াত স্ট্রাইক ক’রেছে পূর্ণ-উদ্যমে। সহিংসভাবে। যুদ্ধাপরাধের মামলার শাস্তির ভয়ে যাদের চুপ করে থাকার কথা তারা আজ প্রকাশ্য রাজপথে মামলা বাতিলের দাবীতে সোচার। তাদের এতনা হিম্মত!

চলতি বছরের গোড়ার লন্ডন থেকে কনেস্প্রসি থিয়োরিটিশিয়ানদের একজন ফোনে জানিয়েছিলেন যে, সউদী সরকারের সংগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে এক সমঝোতা হয়েছে। সমঝোতানুযায়ী, গোলাম আযমকে `টাচ’ করা হবেনা। গোলাম আযমের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা যাবেনা। যুদ্ধাপরাধ বিরোধী মামলার চার্জশীটে গোলাম আযমের নাম থাকতে পারবেনা। যেভাবে বঙবন্ধু হত্যা মামলার চার্জশীট থেকে মৃত খন্দকার মুস্তাকের নাম বাদ পড়েছিলো, সেই প্রক্রিয়ার পূনরাবৃত্তি ঘটবে গোলামের ক্ষেত্রে।

জামায়াতের হালের দুঃসাহসিক কার্যক্রম দেখে কনেস্প্রসি থিয়োরিটি সত্যি মালুম করতে `দিল’ চায়।