“সারা বছরের সঞ্চয়-এখন পানির নিচে” চৌদ্দমেদা বিলের কৃষকদের কান্না থামাবে কে

সরেজমিনে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলায় চলতি ইরি-বেরো মৌসুমে ১০ হাজার হেক্টর জমি ইরি-বোরো চাষের আওতায় আনা হয়। এরমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজিহার ইউনিয়নের কাপাইন্না, চৌদ্দমেদা, বাশাইল ভেরিবাঁধের অভ্যান্তরে ২৫টি ইরি-বোরো ব্লকের আওতায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষ করা হয়।
স্থানীয় কৃষক ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব হাওলাদার জানান, গত তিনদিন পূর্বেও পানির অভাবে চৌদ্দমেদার বিল ফেঁটে চৌঁচিরছিলো। হঠাৎ করে রবিবার রাতে পূর্ণিমার জোয়ারের পানির চাপে সাজুরিয়া কাপাইন্না এলাকার ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ঢলের পানিতে মুহুর্তের মধ্যে গোটা বিল এলাকা তলিয়ে যায়। গৌরনদী উপজেলার ধানডোবা গ্রামের কৃষক নুরু হাওলাদার জানান, ওই বিলে তিনি ২’শ শতক জমিতে ইরি-বোরো চাষ করেছিলেন। রবিবার ভোরে জমিতে এসে তিনি দেখতে পান আধাপাকা ধানের ওপরে প্রায় একহাত পানি। কৃষানের অভাবে তিনি পানির নিচ থেকে ধান কেটে ঘরে নিতে পারছেন না। উপায়অন্তুর না পেয়ে তিনি তার আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বুকসমান পানির মধ্য থেকে ডুবিয়ে ডুবিয়ে ধান কাটছেন। বিল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দুরত্ব গৌরনদীর বিল্লগ্রামের ভ্যানচালক মুনসুর আলী সংসারের বাৎসরিক ভরন পোষনের জন্য বাড়ির গাছপালা, গবাদিপশু বিক্রি ও এনজিও থেকে ঋণ উত্তোলন করে চৌদ্দমেদা বিলে ৬০ শতক জমি বন্ধক রেখে ধান চাষ করেন। তার সমস্ত ধান ক্ষেত পানিতে ডুবে যাওয়ায় সে এখন পাগল প্রায়। তিনি বলেন, পোলাপান লইয়া এ্যাহন মুই কি খামু, ধান পামু কই। ঋণের টাহাই বা দিমু কোতাইত্তা। কৃষক বধূ হাছিনা বেগম বলেন, মোর ছয় পোলা-মাইয়া, ধানই মোর একমাত্র ভরসা ছিলো। তাওতো শ্যাষ হইয়া গ্যালো। এইবার না খাইয়া মরা ছাড়া আর কোন উপায় নাই।
প্রান্তিক কৃষক মোঃ ইলিয়াস তালুকদার জানান, দীর্ঘ ৩৫ বছর পূর্বে তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এতদাঞ্চলের কৃষকদের জমি চাষে উপযোগী করার লক্ষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় চৌদ্দমেদার পূর্ব গোয়াইল-কাপাইন্না-বাশাইল এলাকায় ভেড়ি বাঁধ নির্মান করেন। তিনি আরো জানান, ভেড়িবাঁধটি নির্মানের পর সংস্কার না হওয়ায় গত রবিবার পূর্ণিমার জোয়ারের পানির চাপে বাঁধটি ভেঙ্গে প্রায় ২ হাজার ৫’শ একর জমির ধান নষ্ট হয়ে যায়। কৃষকদের এ ক্ষতি অপুরনীয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধটি মেরামতের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
রাজিহার ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ মহিউদ্দিন জানান, প্রতিবছর চৌদ্দমেদার বিলে যে ধান ফলস হয় তা দিয়ে সারাবছর চলে এতদাঞ্চলের সহস্রাধিক কৃষক পরিবার। একমাত্র ফসল হারিয়ে চৌদ্দমেদা বিলের কৃষকদের এখন শুধু হাহাকার। কৃষকরা এ ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে উঠবে তা বুঝতে পারতেছিনা। তিনি চৌদ্দমেদা এলাকাকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষনার দাবি জানান।
আগৈলঝাড়া উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা খলিলুর রহমান ও সুভাষ মন্ডল ক্ষতিগ্রস্থ বিল পরিদর্শন করে জনকন্ঠকে বলেন, সাজুরিয়া কাপাইন্না এলাকায় ভেরিবাঁধ ভেঙ্গে পানি ডুকে গোটা এলাকা তলিয়ে যায়। যে ক্ষতি অপূরনীয়। আমরা মাইকিং করে কৃষকদের ধান উত্তোলনের জন্য সচেতন করেছি।