আগৈলঝাড়ায় পূঁজাকে সামনে রেখে মাদকের রমরমা বানিজ্য

আগৈলঝাড়া প্রতিনিধিঃ আগৈলঝাড়া এখন হাত বাড়ালেই ইয়াবা সহ মেলে বিভিন্ন মাদক। আসন্ন পূঁজা উপলক্ষে ইতোমধ্যেই এসে পৌছেছে মাদকের একটি বড় চালান। এমন তথ্যই পাওয়া গেছে মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীদের কাছ থেকে। তবে প্রশাসন এমন তথ্য মানতে নারাজ। গ্রেফতার বা পুলিশী অভিযান মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদে এতটুকু রুখতে পারেনি।

উপজেলার বিভিন্নস্থানে দীর্ঘদিন ধরে অবাধে গাঁজা, ভাং, ড্যান্ডি, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সহজলভ্য হওয়ায় উঠতি বয়সের তরুণও যুবসমাজ এর দিকে ঝুকে পড়ে মাদকের বশ্যতা শ্বিকার করেছে। অনেক আগেই এলাকায় ইয়াবার বিস্তৃতি লাভ করলেও পুলিশ ইয়াবার অস্তিত্ব  বারবার অস্বিকার করে আসছিল। গতকাল শুক্রবার আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট দীপংকর বিশ্বাস এর আদালত অশোকসেন গ্রামের তৈয়ব আলী মোলর ছেলে শাহিন মোল(৩০)কে ২ মাসের কারাদন্ড দিয়েছে। অবশেষে গত ৫ সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলার পয়সারহাট গ্রামের আ. রব মিয়ার ছেলে ঝন্টু মিয়াকে (২৪) প্রায় ২ কেজি গাঁজা ও ৮০ পিস ইয়াবা বিক্রির সময় পয়সারহাট ব্রীজের পশ্চিম পার্শ্ব থেকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঝন্টু গ্রেফতারের পর অল্প সময়ের জন্য এলাকায় স্বস্তি ফিরে এলেও অপর ব্যাসায়ীরা থেমে নেই। গ্রেফতারকৃত ঝন্টু পুলিশকে জানিয়েছে মাদক ব্যাবসার সাথে যুবলীগ যুগ্ম সম্পাদক স্থানীয় প্রভাবশালী ফিরোজ শিকদারের ছোট ভাই মিজান শিকদার জড়িত থাকলেও ঝন্টু গ্রেফতারের পর থেকেই মিজান পলাতক রয়েছে। ওই ঘটনায় এস.আই ইদ্রিস বাদি হয়ে থানায় মাদকদ্রব্য আইনে মামলা করেছেন। যার নং- ০৩ (০৬/৯/২০১১)। অপরদিকে ২৪ আগষ্ট উপজেলার সীমান্তবর্তী মাগুরা গ্রামের রায়হান মাতুব্বরের ছেলে এনায়েত মাতুব্বর (২৫) কে মাদক দ্রব্য অধিদপ্তর এর (গৌরনদী সার্কেলের) অতিরিক্ত দ্বায়ীত্বে থাকা পরিদর্শক  মো. সিরাজুল ইসলাম ও এএসআই নাসির নিজ বাড়ি থেকে গাঁজা সহ গ্রেফতার করে। এনায়েতের বিরুদ্ধে ১৯৯০ সালের ১৯,(১১) এর৭ (ক) ধারায় অপরাধ প্রমানিত হওয়ায় ভ্রাম্যমান আদালত এর বিচারক আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দীপংকর বিশ্বাস ১ বছরের কারাদন্ড রায় প্রদান করেন। এক মাসের ব্যাবধানে ২৪ সেপ্টেম্বর উপজেলার সুজনকাঠী গ্রামের আজাহার মোলর ছেলে মাসুম মোলা (২৫)কে উপজেলা সদরের কালিখোলা নামক স্থান থেকে গাঁজা ও ইয়াবা ট্যাবলেট সহ গ্রেফতার করে পুলিশ। মাসুমের বিরুদ্ধে ১৯৯০ সালের ১৯,(১১) এর ৭ (ক)/৯ এর(ক) ধারায় অপরাধ প্রমানিত হওয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক ও আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর বিশ্বাস মাসুমকে ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ১ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদন্ড দিয়েছেন ।

গত বছর ১১ আগস্ট পূর্ব সুজনকাঠি গ্রামের মতি সরদার গ্রেফতার হলেও মতির স্ত্রী রূবিনা বেগম ও মা হাসিনা বেগম এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এখানে অবাধে গাঁজা, ভাং, ফেনসিডিল ও হেরোইন সহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।  একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানাগেছে, আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলার প্রভাবশালী  ৩ নেতার ছেলে যশোরের শার্শা একটি পুলিশ ফাড়িতে হিরোইন সহ গ্রেফতার হয়েছিল। তারা গৌরনদীর প্রভাবশালী নেতার ছেলে হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে টাকার বিনিময় ছাড়িয়ে আনলেও আগৈলঝাড়ার যুবক এখনও খাটছেন বলে জানাগেছে। সূত্র মতে পূর্ব সুজনকাঠির জনৈক হাফিজ ঢাকায় হেরোইনের ব্যবসা করে ৩বার গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে এলাকায় নিজবাড়িতে বিলাসবহুল জীবনযাপন করলেও আড়ালে পূর্বের ব্যবসা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব মাদক পাশ্ববর্তি কোটালীপাড়া ও কালকিনি উপজেলার মাদকের ডেরা থেকে আনা নেয়ায় কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে স্থানীয় ভাড়ায় চালিত এক শ্রেনির মোটরসাইকেল ছালকদের। প্রশাসন মাঝে মধ্যে বিভিন্ন স্পট থেকে অভিযান চালিয়ে মাদকবিক্রেতাদের গ্রেফতার করলেও কয়েকদিনের মধ্যেই তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে নব উদ্দমে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। একারনে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনার বিচার সম্পন্ন করা হয়েছে। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, আগৈলঝাড়ায় ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিলের পাশাপাশি বর্তমানে ড্যান্ডি নামে নেশা জাতীয় দ্রব্য পাওয়া সহজলভ্য ও সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য মাদকের তালিকায় স্থান পেয়েছে। সব সরকারের সময় রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে কিছু সরকার দলীয় প্রভাবশালীদের মদদে উপজেলার বিভিন্নস্থানে মাদক বিক্রির সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। এসব স্থানে উঠতি কিছু রাজনৈতিক পাতি নেতা অবাধে মাদক বিক্রি ও সেবন করায় প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলেও ব্যবসা বন্ধ সহ হরহামেশাই তাদের গ্রেফতার করতে পারছেনা বলে প্রশামনের একটি দ্বায়িত্বশীল সূত্র জানান।

মাদক বিক্রি ও সেবনের কয়েকটি চিহ্নিত স্পট হচ্ছে- গৈলা হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা, গৈলা বাজারের ২/৩টি জায়গা, গৈলা এতিমখানার পাশে মতি সরদারের বাড়ি, উপজেলা সদরের হেলিপ্যাড, থানার উত্তরপাশের টেম্পোস্ট্যান্ডসহ ২/৩ জায়গা, সদরের কালি খোলা, পয়সারহাটের পূর্ব ও পশ্চিমপাড়ের ভ্যানস্ট্যান্ড, বাগধা, পাকুরিতা স্কুল এলাকা, নওপাড়া গ্রামে হেলান মোল¬¬ার ছেলে শুক্কুর, জোবারপাড়-নাঘিরপাড়ের ব্রিজ ও স্কুল এলাকা, বড়মাগরার উত্তরপাড়, আস্করের বাঁশতলায় আয়নাল ও কবির, কান্দিরপাড়ে সোহাগ মেকার, ছয়গ্রাম বন্দর, মিশ্রিপাড়া হাট ও ¯¬ুইজগেট, কালুরপাড়, সাহেবেরহাটে মন্টু ভুঁইমালি, রাজিহার, মাগুরা বাজার, ভালুকশি, রামেরবাজার, রামানন্দেরআঁকসহ আরও কয়েকটি জায়গায় প্রতিনিয়ত মাদকবিক্রি ও সেবন চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, টেকেরহাটে পুলিশ চেকপোস্ট বসার কারণে মাদক পাচারকারীরা আগৈলঝাড়ার আশেপাশে কোন পুলিশী চেকপোস্ট না থাকায় নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে এরুটটি অধিক নিরাপদ হিসেবে ব্যবহার করছে। যশোর-গোপালগঞ্জ থেকে মাদকের চালান পয়সারহাট-আগৈলঝাড়া হয়ে ভাড়াই চালিত মটরসাইকেলে করে বরিশাল সদরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পাচার করে আসছে। পয়সারহাটে মাদক সহ ঝন্টু গ্রেফতারের পর ব্যাবসায়িরা রামিশীল থেকে রাজিহার হয়ে চাঁদশী হয়ে গৌরনদী ও রাজিহার খেকে ঘোষেরহাট রুট বৗবহার করছে। গৌরনদীর ঘোষেরহাট ঠাকুর বাড়ি একটি বড় মাদকের অন্যতম একটি বিক্রয় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। ওই এলাকার বিক্রেতারা বাশাইল ওয়াপদা এলাকায় ভ্রাম্যমান মাদক বিক্রির ষ্পট গড়ে তুলেছে। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, আগৈলঝাড়ায় বর্তমানে মাদক গাঁজা, ফেন্সিডিলের পাশাপাশি নিষিদ্ধ ঘোষিত ইয়াবাও পাওয়া যাচ্ছে বলে একটি সূত্রে জানাগেছে। গত বিএনপির সময় ছাত্রদলের সহ সভাপতি রিপন ও তার ভাই জামাল ছিল মাদক ব্যবসার প্রধান নিয়ন্ত্রক। ওই নেতাদের সমন্ময়ে বর্তমানে ছাত্রলীগ নামধারিকতিপয় কর্মীরা এব্যবসার করছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।