গাইনী ডাক্তারের অমানবিকতায় ক্লিনিকে সিজারে মৃত জোড়া শিশু ভূমিষ্ট

ঝালকাঠি অফিস: ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের গাইনী বিশেজ্ঞ মৃনাল কান্তির বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলায় ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই দুটি জোড়া শিশুর মৃত্যু হওয়ার অভিযোগ করেছে অভিভাবকরা।  হাসপাতালে আনার পরেও প্রসব বেদনায় কাতর এক গৃহবধূর সিজার না করায় এ অভিযোগ করা হয়। সকাল সাড়ে ১২ টা থেকে প্রায় ৪ ঘন্টা হাসপাতালে চিৎকার ও কষ্ট দেখে সাধারন মানুষ অতিষ্ট হলেও ডাক্তার তার কাছেই আসেনি। অথচ একই ডাক্তার বিকেলে টাকার বিনিময়ে শহরের মৌমিতা ক্লিনিকে নিয়ে গৃহবধূর সিজার অপারেশন করেছেন। তখন গৃহবধূর গর্ভ থেকে মৃত জোড়া শিশু বের করা হয়। এ নিয়ে গৃহবধূ শাহনাজের স্বামীসহ নিকট আত্মীয়রা ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরেন। অবস্থা বেগতিক দেখে ডাক্তারের পরামর্শে ক্লিনিক মালিক বৃহস্পতিবার সন্ধায় তড়িঘড়ি করে মৃত শিশু দুটিসহ পিতাকে ক্লিনিক থেকে নামিয়ে দেন। তবে এ ঘটনায় সদর হাসপাতালের গাইনী ডাক্তার মৃনাল কান্তি ও কর্তব্যরত নার্সের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় পিতা ফরিদ আইনের আশ্রয় নিবেন বলে জানিয়েছেন।

গৃহবধূর স্বামি ফরিদ জানান, তার স্ত্রী শাহানাজ (২৮) এর গর্ভে জোড়া লাগানো দুটি সুস্থ্য সন্তান ছিলো। গত বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশার আলীপুর গ্রাম থেকে মাকে সঙ্গে নিয়ে অসুস্থ স্ত্রীসহ বেলা সাড়ে ১২ টায় হাসপাতালে আসি। এসেই ডা. মৃনালের সাথে দেখা করে স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করার কথা জানাই। তখন আমার কাগজপত্র দেখে ডাক্তার মৃনাল জানতে চান কেন শাহানাজকে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ডাক্তার দেখিয়েছি। আমি এক সপ্তাহ আগে স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তার মৃনালকে এ হাসপাতালেই টিকিট করে দেখিয়ে যাই। কিন্তু এরপর আমার  স্ত্রী আরো অসুস্থ হয়ে পড়ায় মাঝখানে ঝালকাঠি মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রের ডাক্তার দেখিয়ে আলট্রাসনোগ্রাম করেছিলাম। এসব কাগজপত্র দেখে হাসপাতালে বসে ডাক্তার মৃনাল আমার সাথে দূর্ব্যবহার করেন। কেন অন্য ডাক্তার দেখালাম জানতে চেয়ে একটু পরে  স্ত্রীকে দেখবেন বলে জানান।  ডাক্তারের আশ্বাসে প্রসব বেদনায় তখন শাহানাজ কাতরালেও আমি বাড়িতে চলে যাই। স্ত্রীর কাপড়সহ যাবতীয় মালামাল নিয়ে বাড়ি থেকে বিকেল সাড়ে ৪ টায় হাসপাতালে ফিরে আসি। এসে শুনতে পান তখন পর্যন্ত ডাক্তার শাহানাজকে দেখতে আসেননি। তাই রাগ করে হাসপাতাল থেকে শেষ পর্যন্ত মূমর্ষ অবস্থায় স্ত্রীর প্রাণ বাচাতে  শহরের মৌমিতা ক্লিনিকে নিয়ে যাই। ক্লিনিকের নীচে মৃত সন্তানকে কোলে নিয়ে আহাজারি করে ফরিদ বলেন, ভূলেও যদি বুঝতাম হাসপাতালের ঐ ডাকাত আমার স্ত্রীর সিজার করবে তাহলে সে মরে গেলেও এখানে আনতাম না।

তিনি আরো জানান, গত শনিবার স্ত্রীকে নিয়ে ফরিদ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ডাক্তারের পরামর্শে গর্ভবতী সন্তানের অবস্থান জানতে আলট্রাসনো করিয়ে ছিলেন। তখনই তিনি জানতে পারেন তার স্ত্রীর গর্ভে জোড়া লাগানো সন্তান। এরপর তার স্ত্রী প্রসব বেদনায় গুরুতর অসুস্থ হলে গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি করান। অন্য ডাক্তার দেখিয়ে আল্ট্রাসনো করার প্রতিশোধ নিতেই দালালের মাধ্যমে কৌশলে শেষ পর্যন্ত ক্লিনিকে এনে ডাক্তার মৃনাল কান্তি সাড়ে ৮ হাজার টাকা চুক্তিতে অপারেশন করেছেন বলে ফরিদের অভিযোগ।

গৃহবধূর পিতা ছায়েদ আলী, স্বামি ফরিদসহ আত্মীয়রা জানান, সিজারের পর মৃত সন্তান বের করা হলেও ডাক্তার মৃনাল তা গোপন রাখেন। তিনি বাচ্চা দুটি জীবিত, অপুষ্টিতে ভূগছে এবং দ্রুত বরিশাল হাসপাতালে পাঠাতে হবে বলে জানান। তখনও তারা বুঝতে পারেনি জোড়া বাচ্চা দুটি মৃত। জোড়া বাচ্চার  খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ক্লিনিকে গিয়ে শিশু দুটি জীবিত না মৃত এবং হাসপাতালে সকালেই তিনি সিজার করলেন না কেন জানতে চাইলে ডাক্তার মৃনাল কান্তি  কোন সদুত্তোর না দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে যান। তখন বাচ্চা দুটি মৃত বলে জানতে পারে স্বজনরা।