দু’সর্দারের রোষানলে এক ডজন মামলায় বেঁদে পল্লীর ৩০টি পরিবার

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বিভিন্ন সময় দু’জন সর্দারের দাবিকৃত মোটা অংকের টাকা না দেয়ায় বরিশালের গৌরনদী পৌর এলাকার টরকীরচর মহল্লার স্থায়ী বেঁদে পল্লীর ৩০টি পরিবারের বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের নাগরিক ওইসব অসহায় পরিবারগুলোর নারী ও পুরুষেরা হয়রানি মূলক মামলার আসামি হয়ে পুলিশের গ্রেফতার আতংকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দীর্ঘদিন পর্যন্ত তাদের আয়ের পথ বন্ধ থাকায় ওইসব পরিবারের সদস্যরা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মিথ্যে মামলা ও প্রভাবশালী দু’জন সর্দারের রোষানল থেকে রেহাই পেতে বেঁদে পল্লীর ভুক্তভোগী নারী ও পুরুষেরা প্রসাশনের উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সরেজমিনে আড়িয়াল খাঁ নদীর শাখা পালরদী নদীর তীরবর্তী গৌরনদী পৌরসভার ২ নং টরকীরচর ওয়ার্ডে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে স্থায়ী ভাবে বসবাসকারী বেঁদে পল্লীতে গিয়ে ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা গেছে, বেঁদে পল্ল¬ীর সর্দার মোঃ নান্নু মিয়া ও সাবেক এ পল্লীর বাসিন্দা, বর্তমানে ঝালকাঠীর কৃষ্ণকাঠী বেঁদে পল্লীর সর্দার আব্দুর রহিম ওরফে সর্পরাজ রহিম সরদার (নান্নু মিয়ার নিকট আত্মীয়) কারনে অকারনে বেঁদে পল্লীর বাসিন্দাদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে আসছে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত ৩ বছরে গৌরনদীর স্থায়ী বেঁদে পল্লীর ৩০টি নিরিহ পরিবারের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা দায়ের করা হয়।

বেঁদে পল্লীর বাসিন্দা জাহাঙ্গীর সরদার, পিন্টু সরদার, আলম হাওলাদার, আবুল কাসেম, শহিদুল ইসলাম, আব্দুল মালেক, হানিফ সরদার অভিযোগ করেন, উল্লেখিত দু’সর্দার ও তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সামচুল হক সরদার, নাসির সরদার, সেলিম সরদার ও রুহুল আমীন বিভিন্ন সময় বেঁদে পল্লীর নারী ও যুবতী কন্যাদের কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হয়ে প্রতিবাদ করায় প্রভাবশালীরা আরো ক্ষিপ্ত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে উল্লেখিত ব্যক্তিরা বেঁদে পল্লীর বিধবা সাজেদা বেগমকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নদীর পারে নিয়ে ধর্ষনের চেষ্ঠা চালায়। এসময় সাজেদার ডাকচিৎকারে পল্লীর লোকজন এগিয়ে এসে বিবস্ত্র অবস্থায় বিধবা সাজেদাকে উদ্ধার করে।

বেঁদে পল্লীর বাসিন্দা বাদল হাওলাদার, সিদ্দিকুর রহমান, মনির হোসেন, কামরুল ইসলাম ও স্বপন সরদার অভিযোগ করেন, কারনে অকারনে তাদের কাছে দাবিকৃত মোটা অংকের টাকা না দেয়ায় গত তিন বছরে নান্নু মিয়া, রহিম সরদার ও সামচুল হক বাদি হয়ে ঝালকাঠী থানা ও আদালতের মাধ্যমে ১২টি মিথ্যে ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করেন। ওইসব মামলায় বেঁদে পল্লীর ৩০ টি পরিবারের নারী ও পুরুষদের আসামি করা হয়। পুলিশের গ্রেফতার আতংকে তারা রিতিমতো আয় রোজগার ছেড়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্নস্থানে তারা আয় রোজগারের জন্য গেলে নান্নু ও রহিম সর্দার ওইসব এলাকার থানা পুলিশকে মিথ্যে তথ্য দিয়ে তাদের কাজে বাঁধা প্রদানসহ হয়রানি অব্যাহত রেখেছে।

বেঁদে পল্লীর এসব সমস্যা সমাধানের জন্য গৌরনদী পৌরসভার মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান হারিছ, গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএমসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিরা একাধিকবার উদ্যোগ নেয়া সত্বেও নান্নু ও রহিম সরদার তারিখ মোতাবেক ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকে একের পর এক মিথ্যে মামলা দায়ের করা অব্যাহত রেখেছে। ভুক্তভোগী অসহায় বেঁদে পল্লীর বাসিন্দারা দু’সর্দারের দায়ের করা মিথ্যে মামলা ও তাদের রোষানল থেকে রেহাই পেতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রসাশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

উল্লেখিত অভিযোগের ব্যাপারে অভিযুক্ত সর্দার নান্নু মিয়া ও রহিম সরদারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা কোন সদূত্তর না দিয়ে অসৌজন্য মূলক আচারন করে ফোনের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন।