নানা অনিয়ম আর দূর্নীতির মাধ্যমে ১’শ একর খাস জমি বরাদ্ধ

আহমেদ আবু জাফর, ঝালকাঠি ॥ রাজাপুরের চরপালট মৌজার চরের প্রায় ১শ একর সম্পত্তি নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বন্দোবস্ত নিয়ে দখল করছে প্রভাবশালীরা। প্রকৃত ভূমিহীনরা জমি বন্দোবস্ত না পেয়ে সম্প্রতি ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক বরাবরে অনিয়মের চিত্র তুলে অভিযোগ করেছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে মৌজার প্রায় ১শ একর সম্পত্তি তৎকালীন দু’চেয়ারম্যান প্রকৃত ভূমিহীনদের নাম বাদ দিয়ে একই পরিবারে একাধিক ধর্নাঢ্য ব্যক্তি, সরকারী বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সেনা সদস্য, নাবালক ও ব্যবসায়ীর নামে বরাদ্ধ দিয়েছেন। এলাকার ভূমিহীনরা ১৪ পরিবারের নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্ধের দাবী জানিয়েছে।

অভিযোগ ও এলাকাবাসি সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানাগেছে, রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের পালট মৌজার বেলায়েত হোসেনসহ ৩ নাবালক পুত্র যথাক্রমে শামিম খান, ইমাম খান ও আমির খানের নামে ৫ একর ৯০ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত নেয়। একই গ্রামের এনজেদ আলী খা ও তার পুত্র ঢাকার প্রবাসী ও ব্যবসায়ী নুরুল হক সেলিমের নামে ৪ একর ৯৫ শতাংশ সম্পত্তি বন্দোবস্ত নেয়। এমনকি নুরুল হক তৎকালীন সময়ে নাবালক থাকাবস্থায় বড় ভাই আইউব আলীর স্ত্রী খাদিজা বেগমকে নিজের স্ত্রী দেখিয়ে জমি বন্দোবস্ত নেন। আরেক বন্দোবস্তপ্রাপ্ত কাজেম আলী খা পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তিনি নিয়েছেন ৩ একর ১৫ শতাংশ।

এদিকে এনজেদ আলী, নুরুল হক সেলিম, কাজেম আলী ও মুনসুর আলী একই পরিবারের হওয়া সত্ত্বেও তথ্যগোপন ও অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে আরো ৩ একর ৯০ শতাংশ বন্দোবস্ত নিয়ে গেছেন। একই গ্রামের আ: রহমানের পুত্র প্রধান শিক্ষকের স্বামী স্কুল শিক্ষক আবু ছালেক তালুকদার বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১১শতাংশ জমির অংশীদার ও দ্বোতলা দালানের মালিক তিনি নিয়েছেন ১একর ৪০ শতাংশ। অপর এক ধর্নাঢ্য ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আলহাজ্জ্ব নুরুল ইসলাম হাওলাদার। তার এক ছেলে ও মেয়ে আমেরিকা প্রবাসী। তিনি নিয়েছেন ৮০ শতাংশ জমি। তিনি বলেছেন পিতার রেখে যাওয়া ১০ কাঠা সম্পত্তিতে আমাদের পুষিয়ে ওঠা অসম্ভব ছিল তাই এ জমি নিয়েছি। তালিকা থেকে বাদ যাননি ফ্রান্স প্রবাসীর পিতা ফজলুল হক। তিনিও ভূমিহীন সেজে জমি নিয়েছেন।

অথচ এলাকাবাসি বলেছে এদের কারো জমি নদী ভাঙ্গনে পড়েনি। তাদের অনেকেরই বাড়ি বর্তমান নদীর তীর থেকে দু’এক কিলো: দূরে। সেনাবাহিনীতে কর্মরত পুত্রের পিতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চাকরীজিবী আবুল কালাম। তিনি নিয়েছেন ১একর ৬৫ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত নেন। এছাড়া যৌথ পরিবারে থাকা তার মায়ের নামেও দুটি বন্দোবস্ত কেসের মাধ্যমে জমি নেয়া হয়েছে। ভূয়া ঠিকানা ব্যবহার করে বড়ইয়া গ্রামের বাসিন্দা, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১২শতাংশ ও বাকেরগঞ্জের নিয়ামতিতে ৩টি ভিটির মালিক, ব্যবসায়ী আরেক আবুল কালাম তিনি নিয়েছেন ৮৫শতাংশ জমি।

দেখাগেছে, এদের অনেকের বসতবাড়ি পাকা দ্বিতল দালান, আধা পাকা দালান, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও বিপুল সম্পদের মালিক। তৎকালীন চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান তালুকদার ৮৮-৮৯ সালে ও ৯৩-৯৫ সালে অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মনির চেয়ারম্যান থাকাকালে এভাবে জমি বন্দোবস্ত দিয়েছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির এ ব্যাপারে বলেন, ঐ সময়ে খাস জমি বন্দোবস্তে এত নিয়ম-কানুন ছিলনা এবং জেগে ওঠা নতুন  চরে কেউ দখলে যেতে না চাওয়ায় এদের মাঝে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছিল।