শাবি’র মেডিকেল সেন্টারে সেবা থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা

রিয়াজ উদ্দিন, শাবি ॥ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র শুধু নামেই মেডিকেল সেন্টার। মেডিকেল সেন্টারের সকল রোগের ওষুধ নাপা, প্যারাসিটামল ও হিস্টাসিন। চিকিৎসা নিতে গেলেই এগুলো ছাড়া আর কোন ওষুধ পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। ওইসব শিক্ষার্থীদের কাছে মেডিকেল সেন্টারটি ‘প্যারাসিটামল সেন্টার’ নামেই পরিচিত। মেডিকেলে পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই, পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদিও নেই। চিকিৎসা কার্যক্রমে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি না থাকায় মেডিকেল সেন্টারটি এখন নিজেই রোগী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আধুনিক কোন যন্ত্রপাতির ছোঁয়া লাগেনি এই চিকিৎসা কেন্দ্রে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সংকট থাকায় স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত বিশ্ববিদ্যারয়ের প্রায় ১২ হাজার শিক্ষক শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। চিকিৎসক, সেবিকা, কর্মচারী সংকটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির অভাবে মেডিকেল সেন্টারটির চিকিৎসা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায় ১৯৯১ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারি শাবির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। একই বছরের ২৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার লক্ষ্যে একটি মেডিকেল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কেটে গেছে দেড়যুগেরও বেশি সময়। কিন্তু আজও একই অবস্থায় রয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র সেবাকেন্দ্র। জ্বর, সর্দি, কাশি কিংবা সামান্য অসুস্থতার প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া এখান থেকে সেবা পাচ্ছে না এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা। কোনভাবে একটু বেশি আহত হলেই নিতে হয় সরকারি ওসমানী মেডিকেল কলেজ কিংবা অন্য কোন মেডিকেলে। মেডিকেল সেন্টারে ৬টি বেড থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই তা জানে না। সরেজমিনে দেখতে গেলে একটি গ্যাসের চুলো অবিরত জ্বলতে দেখা যায়। শুধু শুধু রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহারেও কোন সদত্তুর পাওয়া যায়নি। নানা সমস্যায় জর্জরিত এ চিকিৎসাকেন্দ্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দশ হাজার শিক্ষার্থী, সাড়ে চারশত শিক্ষক এবং চারশো কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য ৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে অর্ধেক। রয়েছে ঔষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জামাদির অভাব। উন্নত চিকিৎসার জন্য নেই উন্নত কোন মেশিন। ফলে এখান থেকে কোন কিছুরই পরীক্ষা করার সুযোগ নেই। রয়েছে লোকবলেরও অভাব।

আধুনিক এ ডিজিটাল যুগে কোনভাবেই মেডিকেল সেন্টারে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। চলছে একজন নার্স, দুজন পিয়ন, একজন ফার্মাসস্ট এবং দুজন অফিস সহকারী দিয়ে। প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পরে অর্থ্যাৎ ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উপহার হিসেবে পেয়েছে একটি এ্যম্বুলেন্স। এ্যম্বুলেন্স নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী শিক্ষকরা নিজেদের ব্যক্তিগত কাজে এটি ব্যবহার করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে যেভাবে সেবা পাওয়ার কথা সেভাবে সেবা পাচ্ছেন না এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অসুস্থতা নিয়ে কেউ  মেডিকেল সেন্টারে গেলে ডাক্তার যে প্রেসক্রিপশন লিখেন তার অধিকাংশই ওষুধ এখান থেকে সরবরাহ করা হয় না। নাপা, প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন, ওরস্যালাইন জাতীয় কমদামের ওষুধগুলো এখান থেকে পাওয়া যায়। দামি ওষুধগুলো বাহিরের ফার্মেসি থেকে কিনতে হয় বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থীরা। নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফরহাদ জানায়, দুদিন আগে সেন্টারের ডাক্তারের কাছে গেলে আমার মেডিকেল কার্ডে অনেক ওষুদের নাম লিখলেও এখান থেকে সবগুলো পাইনি। তবে কেউ ওষুধের পাশাপাশি মেডিকেল সেন্টারের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নয়ন বলেন, এখানে এসে সিরিয়াল ধরে ডাক্তার দেখাতে হয়। অসুস্থ শরীর নিয়েও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ডাক্তার দেখানো অনেক কষ্টকর। প্রতিবছর ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট থেকে সাড়ে ৯ লক্ষ টাকা আদায় করা হলেও সামান্য প্যারাসিটামল, নাপা, সিনামাইনেই সেবা সীমাবদ্ধ থাকে। প্রেসক্রিপশনে দামি ওষুধ কেন দেয়া হয় না এমন প্রশ্ন করা হলে সরবরাহকারী জানান, পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকার কারণেই মূলত সবাইকে সব দেয়া যায় না। অথচ প্রতি ছয় মাস পরপর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়। ফুটবল খেলে বা অন্য কোন কারণে সামান্য একটু হাতে পায়ে চোট পেলেই ওসমানী মেডিকেলে কিংবা অন্য কোন হাসপাতালে রেফার করা হয়। ফলে চিকিৎসা ব্যয় মেটানো একজন শিক্ষার্র্থীর ওপর কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।

মেডিকিল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মাহবুব আহমদ জানান, শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্তই ওষুধ দেয়া হচ্ছে। কোনকিছুই অভাব নেই। সেবার মানও অনেক উন্নত। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পর্যাপ্ত ওষুধ দেয়া হয় না এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কোন প্রতিষ্ঠানেই পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হয় না। আমাদের প্রতিষ্ঠানেও দিতে পারছি না। তবে বেডের স্বল্পতা কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এমন হয়নি যে বেডের অভাবে কাউকে মেঝেতে রাখতে হয়েছে বরং সবসময়ই বেড খালি থাকে। শিক্ষার্থীদের দাবি দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, ঔষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জামাদিসহ জনবল নিয়োগ করা হোক যাতে করে শিক্ষার্থীরা চিকিৎসার মত একটি মৌলিক অধিকারের  সেবা খুব সহজেই পেতে পারে।