খুনী আবুলের “আবুল নামা”

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ছোট বেলা থেকেই আবুল ছিলো উৎশৃংখল প্রকৃতির লোক। মেয়েদের উত্যক্ত (যৌণ হয়রানী) করাই ছিলো তার নেশা ও পেশা। যে কারনে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে তার আর পড়াশুনা হয়নি। আবুলের বাবা ছিলো একজন গ্রামপুলিশ সদস্য। সে শত কষ্টের মাঝেও চেষ্ঠা করেছিলেন আবুলকে লেখাপড়া করানোর। কিন্তু তার সে আশা কোনদিনই পূরন হয়নি। পড়াশুনা বাদ দিয়েই আবুল হয়ে ওঠে এলাকার আরেক “রসু খাঁ”। কথাগুলো বলছিলেন খুনী সিরাজুল ইসলাম গোমস্তা ওরফে আবুলের নিজগ্রাম বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার উত্তর শিহিপাশা গ্রামের জনৈক মোশারফ হোসেন, সাইদুর রহমান, রব সরদারসহ অনেকেই।

সূত্র মতে, ওই গ্রামের গ্রামপুলিশ মৃত আকু গোমস্তার পুত্র সিরাজুল ইসলাম আবুল (৩৫)। এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে সে পড়াশুনা বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকেই আবুল রাস্তাঘাটে মেয়েদের উত্যক্ত করে আসছিলো। গত পাঁচ বছর পূর্বে একই গ্রামের বাবুল সরদারের কন্যা রুনুকে সে বিয়ে করে। বিয়ের পরেও আবুলের চরিত্রের কোন পরিবর্তন হয়নি। গত ৪ বছর পূর্বে গৈলা গ্রামের হাকিম সরদারের স্কুল পড়ুয়া কন্যাকে উত্যক্ত করার কারনে ওই ছাত্রীর ভাইয়েরা আবুলকে মারধর করে থানা পুলিশের কাছে সোর্পদ করে। ওই মামলায় আবুল ৩ মাস কারাভোগ করে। এছাড়াও একই অভিযোগে আরো দু’টি মামলায় সে ৭ মাস কারাভোগ করেছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে স্কুল-কলেজের ছাত্রী ও এলাকার অসংখ্য গৃহবধূদের যৌণ হয়রানীর বিস্তার অভিযোগ রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় স্কুল শিক্ষিকা শারমিন আক্তারকে সে প্রেম নিবেদন করে। এতে ব্যর্থ হয়ে আবুল ওই শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানী করে আসছিলো। শারমিন এ ঘটনায় আগৈলঝাড়া থানায় গত ১১ জুলাই একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। আবুল শারমিনকে ছাড়াও তার ছোট বোন আইরিন জাহান ইনুকে নানাধরনের উত্যক্ত করতো। তার অব্যাহত উত্যক্তে অতিষ্ট হয়ে একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে আইরিন জাহান ইনুকে তার পরিবারের লোকজন পড়াশুনার জন্য ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আবুল শিক্ষিকা শারমিনের ওপর উত্যক্তের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। উপায়অন্তুর না পেয়ে শারমিন স্থানীয় সমাজপতিদের কাছে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।

সেমতে, আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক ইউসুফ মোল্লা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা জসিম সরদার, বিএনপি নেতা বাহাউদ্দিন মিয়া গত ৩ সেপ্টেম্বর গৈলা বাজারে বসে প্রকাশ্যে আবুলকে জুতা পেটার রায় ঘোষনা করেন। রায় কার্যকর করেন আবুলের বড় ভাই মজিদ গোমস্তা। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয় বখাটে আবুল। যার কারনে সেনা সদস্য সোহেল তালুকদারের পাঁচমাসের অন্তঃস্বত্তা স্ত্রী ও পূর্ব সুজনকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শারমিন আক্তারকে গত ১২ অক্টোবর বিকেলে বখাটে আবুল ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে। তাৎক্ষনিক থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে খুনী আবুলকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা দক্ষিন গৈলা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার সরদার মোঃ শাহজাহান বাদি হয়ে আগৈলঝাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদের ভাইসচেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা জসিম সরদার জানান, সিরাজুল ইসলাম আবুল গোমস্তা একসময় আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো। সে সময় তার এ বখাটেপনার প্রতিবাদ করায় সে আওয়ামীলীগের রাজনীতি ছেড়ে সক্রিয়ভাবে বিএনপির রাজনীতিতে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিলো।

আগৈলঝাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি অশোক কুমার নন্দি জানান, গ্রেফতারের পর পুলিশের উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে থানা হাজতে দু’দিনের জিজ্ঞাসাবাদে আবুল গোমস্তা খুনের কথা স্বীকার করেছে। তার পরেও পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে আবুলকে শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) বরিশাল আদালতে প্রেরন করা হয়েছে।

অপরদিকে আজ শনিবার সকালে নিহত শিক্ষিকার পরিবারকে শান্তনা দিতে বরিশাল জেলা প্রশাসক এস.এম আরিফ-উর রহমান, বিসিসি মেয়র এডভোকেট শওকত হোসেন হিরন এসেছিলেন নিহতের পিতার বাড়িতে। তারা নিহত শিক্ষিকার পরিবারকে শান্তনা দিতে গিয়ে তাদের (পরিবারের) আহাজারিতে নিজেরাই কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। পরে তারা নিহত শিক্ষিকার কবর জিয়ারত করেন। এসময় উপস্থিত সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্যে মেয়র হিরন বলেন, খুনী যতো বড় শক্তিশালীই হোক না কেন। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে তাকে বিচার পেতেই হবে। এরপূর্বে শুক্রবার দুপুরে নিহতের পরিবারের পার্শ্বে ঢাকা থেকে ছুঁটে এসেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস। তিনি হত্যাকারীর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির আশ্বাস দিয়ে নিহতের পরিবারকে শান্তনা দেন।