কালকিনিতে জালনোট আতংক!

বিল্লাল হোসেন, কালকিনিঃ মাদারীপুরের কালকিনিতে জালনোট সরবরাহকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই চক্রটির সদস্যরা ২/৩জনে গ্রুপিং করে হাট-বাজারগুলোতে জালনোট সরবরাহ করছে। চক্রের কয়েকজন জনতার সহযোগীতায় গ্রেফতার হলেও পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকায় মূলহোতারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। জালনোট আতংকে এক হাজার টাকার নোটের বিনিময় ইতোমধ্যে অনেক কমে গেছে।

পুলিশ জানায়, বিশাল একটি জালনোট সরবরাহকারী চক্র কালকিনি উপজেলায় ঢুকে পড়েছে। স্থানীয় কিছু মানুষ কমিশনের বিনিময়ে জালনোট বাজারে ছাড়ছে। জালনোট তৈরির কারিগররা দুরে দাড়িয়ে থেকে স্থানীয় ঐ ব্যক্তিদের পাঠিয়ে দেয় দোকানে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর তারা জালনোট সরবরাহের কাজে নেমে পড়ে। ১হাজার বা ৫শত টাকা জালনোট ব্যবসায়ীদের দিয়ে সিগারেট বা অন্যকিছু কমদামী কিনে ভাঙানোর চেষ্টা করে থাকে। জালনোট ভাঙিয়ে টাকা আনতে পারলে কমিশন দিয়ে বাকী টাকা নিয়ে নেয়া হয়। আর কোনো কারন বশতঃ দোকানীদের জাল টাকা বলে সন্দেহ হলে দুর থেকে লক্ষ করে জালনোটের সরবরাহকারী কেটে পড়ে। পরে জনতার সহযোগীতায় পুলিশের হাতে আটককৃতদের ছাড়িয়ে নিতে বা পুলিশকে ম্যানেজ করার ব্যবস্থা করে থাকে। এই চক্রটি এক হাজার টাকার নোট বের হওয়ার পর এই নোটই এখন জাল বেশী করছে। বর্তমানে ব্যবসায়ীদের মধ্যে জালনোটের আতংক বিরাজ করছে। জালনোট সিন্ডিকেটের সদস্যদের স্থানীয়রা ধরে দিলেও অদৃশ্য কারণে পুলিশ মূল হোতাদের গেস্খফতার করছে না। এ নিয়ে জনমনে পুলিশের উপর ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি অনিয়ম ও র্দূর্নীতির প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ ২পুলিশ কর্মকর্তার অপসারণের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও কালকিনি-ভূরঘাটা সড়ক দেড় ঘন্টা অবরোধ করে রেখেছিল।

মাদারীপুর পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, আটকৃতদের মাধ্যমে জালনোট কীভাবে তাদের কাছে এলো এই তথ্য বের করার জন্য কালকিনি থানার পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই জালনোট চক্রটির পিছনে একটি প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকতে পারে। তথ্য উৎঘাটনে কারো বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আতংক না হয়ে জালনোটের ব্যাপরে সচেতন হওয়ার জন্য তিনি ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানান।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ডাসার ইউপির দক্ষিন ডাসার গ্রামের মোতালেব হোসেনের ছেলে ফয়সাল মাহমুদ (৩৪) ও ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানার হোসনাবাদ এলাকার হিরা হাওলাদারের ছেলে সোহেল হাওলাদার (২১) জালনোট সরবরাহের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন হাট বাজারে যাচ্ছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পটুয়াখালী র‌্যাবের একটি টিম ঢাকা- বরিশাল মহাসড়কের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের কামালদি রাবেয়া ফিলিং স্টেশনের নিকট থেকে গত ৯ আগষ্ট এক লাখ টাকার জালনোটসহ ওই দুজানকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে এক হাজার টাকার ৮০টি ও ৫শত টাকার ৪০টি জালনোট উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের প্রথমে মাদারীপুর র‌্যাব ক্যাম্প ও পরে রাজৈর থানায় হস্তান্তর করে মামলা দায়ের করা হয়।

উপজেলার পাথুরিয়ার পাড় বাজারের আলম সরদারের দোকানে গত ২৪ সেপ্টেম্বর মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর এলাকার চাঁপাতলী গ্রামের রশিদ সিকদার কামাল সিকদার (২৭) ও একই গ্রামের সৈদেলি মাতুব্বরের ছেলে আলাউদ্দিন মাতুব্বর (২৫) জালনোট দিয়ে সিগারেট কিনতে গিয়ে জনতার হাতে আটক হয়। আটককৃতদের কাছ থেকে পুলিশ  ৩টি এক হাজার টাকার জালনোট উদ্ধার করে।

এদিকে গত ২ অক্টোবর বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার করইবলিয়া এলাকার কঢ়ুপাতরা গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে কামাল মিয়া (৩০) ও কালকিনি উপজেলার এনায়েতনগর এলাকার মোহরদ্দিরচর গ্রামের রহমান মোল্লার ছেলে বাবুল মোল্লা (২৫) ফাসিয়াতলা হাটে বিভিন্ন জিনিসপত্র  ক্রয়ে জালনোট সরবরাহ করলে স্থানীয়রা আটক করে। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের কাছ থেকে এক হাজার টাকার ২৭টি জালনোট উদ্ধার করে। এ সময় শফিক হোসেন নামের এ চক্রের আরো এক সদস্য কৌশলে পালিয়ে যায়।

জালনোট কারবারীদের সাথে যোগাযোগের অভিযোগ অস্বীকার করে কালকিনি থানার অফিসার ইনচার্জ (চলতি দায়িত্ব) আশফাক বলেন, আটককৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল কিন্তু মূলহোতা বা জালনোটের উৎসের ব্যাপরে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।