সত্যিই কি গুগল এডসেন্স থেকে আয় করতে চান?

Adsense-percentঅনেকেই মনে করেন যে বিভিন্ন ওয়েবসাইট/ব্লগে মন্তব্য ছেড়ে আসলে অনেক ভিজিটার পাওয়া যায়। একেবারেই নয়। এই করতে গিয়ে অনেকেই মন্তব্য হিসেবে শুধুই “ধন্যবাদ”, “ভালো লিখেছেন”, “খুব সুন্দর লেখা” ইত্যাদি মন্তব্য লিখে আসেন সেইসাথে নিজের ব্লগের লিঙ্ক দিয়ে আসেন। উদ্দেশ্য সেখানে নিজের লিঙ্ক দিয়ে আসা, সেটা অন্যেরাও ভালোই বোঝে, তাতে কেউ উৎসাহ পাবেনা আপনার ব্লগে আসার। ওইসব মন্তব্য না করে কার্যকরী কিছু মন্তব্য করুন, যে বিষয়ের লেখা সেই বিষয়ে আপনিও কিছু জানলে সেইসব মিলিয়ে মিশিয়ে মন্তব্য দিন, দেখুন তাতে অন্যান্য মন্তব্যকারীরা আপনার ব্লগে কতো ভীড় করে। এতে ভিজিটার বাড়তে বাধ্য, কারন অন্যান্যরা আপনার মন্তব্যেই দেখতে পাবে যে আপনিও বেশ কিছুটা জানেন, তাই আপনার ব্লগে গেলে হয়তো আরো জানা যাবে – তাই সকলে আসবে দেখতে। সেইসব ভিজিটারকে আপনার ব্লগে ধরে রাখার উপায় উপরের প্যারাগ্রাফেই লিখেছি। এবং, ভিজিটার বেশি মানেই এডসেন্সে ক্লিকের সম্ভাবনাও বেশি।

হ্যাঁ, আমি জানি এবং ইতিমধ্যেই এইসব নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে যে বিজ্ঞাপনে ৯৯% পাঠক ক্লিক করেন না। বেশ, ১% পাঠক তো করেন? জানেন, এই ১% ক্লিক কতোখানি মূল্যবান হতে পারে মাসে শেষে গিয়ে? সব বিজ্ঞাপনের ক্লিক রেট এক হয়না, বিজ্ঞাপনদাতাদেরও বাজেট থাকে তাইনা? তারা এক একজন এক একরকমের বিজ্ঞাপনের জন্য আলাদা আলাদা বাজেট করেন। তাই, সঠিক বিষয় হলে এবং সঠিক বিজ্ঞাপনে ক্লিক হলে এই ১% অনেক দামী প্রমানিত হতে পারে। যেমন আমি একটি উদাহরন দিচ্ছি, একই বিষয়ের উপরে বিজ্ঞাপন আলাদা এবং ক্লিক মূল্য আলাদা কেমন করে হয়। ধরুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর ব্যাপারে অনেক মামলা মোকদ্দমায় জড়িত আছেন অনেকে, এখন এই ব্যাপারে DUI (driving under influence) একটি দামী কীওয়ার্ড, কিন্তু এতে ভিজিটার আসলেও ক্লিকের মূল্য কম; অন্যদিকে দেখুন এই কীওয়ার্ড Miami DUI Attorneys, DUI Defence Attorneys ইত্যাদি অনেক বেশি দামী কীওয়ার্ড। কেন? শুধু DUI মানে কি হতে পারে, বিষয়টি সম্বন্ধে লেখা, তাইনা? যিনি মামলায় জড়িয়েছেন তিনি আগেই জানেন তিনি কিসে জড়িয়েছেন। তার প্রয়োজন উকিল, মামলায় সাহায্যের জন্য, তিনি খুঁজছেন উকিল, তাই Miami শহরে থাকা নাগরিক খুঁজছেন এটর্নি, এই কীওয়ার্ড লেখায় থাকলে বিজ্ঞাপনও পাবেন সেইরকম, এবং এবারে দিচ্ছি এর ক্লিক মূল্যের নমুনা। আজকের তারিখে DUI কীওয়ার্ডের মূল্য হচ্ছে $12.26, Miami DUI Attorneys $36.78 এবং DUI Defence Attorneys $32.60 – কি বুঝলেন? কোথায় ১২ ডলার আর কোথায় ৩২ ডলার? সুতরাং কার্যকরী কীওয়ার্ড রাখুন লেখার মধ্যে। এইভাবে এডসেন্সের আয় বাড়াতে পারবেন। আপনার চেষ্টা আপনি করে যাবেন, এর পরে ক্লিক হল কিনা সেটা আপনার হাতে নয়।

ক্লিক যাতে হয়, সেইজন্য নানা পাবলিশার নানারকমের ফন্দি আঁটেন। দয়া করে ওইসব দুর্বুদ্ধি থেকে দূরেই থাকুন। মন দিয়ে নিজের ভালোবাসার বিষয়ে ব্লগিং চালিয়ে যান। ব্লগিং হোক আপনার মূল উদ্দেশ্য, আয় করা নয়। পাঠককে কিভাবে ফাঁকি দিয়ে লেখার মাঝে বিজ্ঞাপন মিলিয়ে ফেলবেন, এই চিন্তা থেকে যতো দূরে থাকা যায় ততোই ভালো। বড়জোড় আপনি এই চিন্তা করতে পারেন যে লেখার যতো কাছাকাছি যতো বেশি বিজ্ঞাপনের লিঙ্ক দেওয়া যায় ততোই ভালো। কিন্তু পাঠককে ধোঁকা দেওয়া, তাকে ফাঁকি দেওয়া ইত্যাদি চিন্তায় জড়ালে নিজেরই অশান্তি হবে, পাঠক এতে বিরক্ত হলে কিন্তু বিপদ আপনারই, অন্য কারো নয়। পাতার ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে বিজ্ঞাপনের ব্যাকগ্রাউন্ড রং মিলিয়ে দিন, তাতে ক্ষতি নেই, কিন্তু বিজ্ঞাপনের টাইটেল কালার, টেক্সট এবং লিঙ্ক কালার ইত্যাদি আপনার লেখার রঙের সাথে মেলাবেন না। এতে অল্প লাভ শুরুতে পেলেও তা হবে ক্ষণিকের লাভ। চিরাচরিত লিঙ্ক কালার আমরা জানি গাঢ় নীল, তাই টাইটেল লিঙ্কের কালার সেটাই রাখুন। বাকি বিজ্ঞাপনের বিবরন লাইন এবং নিচের লাইনের লিঙ্ক কালার লেখার কালারের সাথে মেলাতে পারেন। পাঠক মনে মনে এটাই আশা করবে লিঙ্কের রঙ হবে গাঢ় নীল। Google বলেছে যে এইগুলি Interest based ads, সুতরাং পাঠকের জাগ্রত করুন আপনি আপনার লেখার মধ্যে কীওয়ার্ড দিয়ে সঠিক বিজ্ঞাপন এনে।

AdsenseExposedখুব হাল্কা রঙের বর্ডার কালার দিতে পারেন বিজ্ঞাপনের ইউনিটে। পাঠকও জানেন ওটা বিজ্ঞাপন। সুতরাং বিশেষ ক্ষতি হবেনা বর্ডার দিলে। মোট কথা, লেখার মাঝে এবং আশেপাশের রঙের সাথে মানানসই হলে সেইভাবে বর্ডার দিতেও পারেন, নাও দিতে পারেন। এক নজরে দেখলে যাতে ভালো লাগে, সেইরকমের একটি দৃশ্য যেন থাকে আপনার ব্লগের পাতায়। হাবিজাবি করে লেখা এবং বিজ্ঞাপন মেলালে পাঠকের বিরক্তির শেষ থাকেনা। পাঠক মূলত এসেছেন আপনার লেখা পড়তে, বিজ্ঞাপনে ক্লিক দিয়ে আপনাকে বড়লোক বানাতে আসেননি তিনি। তাইনা? যতো বেশি করে ফাঁকি দেবেন পাঠককে, পাঠকও ততো বেশি করে প্রতিহত করবে আপনাকে। এই মূল্যহীন লড়াইয়ের কি প্রয়োজন আছে কোনো? এতে পাঠকের ক্ষতি হবেনা, আপনারই মানসিক চাপ বাড়বে। তার চেয়ে সুস্থ মনে আনন্দের সাথে ব্লগিং চালিয়ে যাবেন, এবং সবকিছু দেখতে যেন মনোরম হয় সেইভাবেই বিজ্ঞাপন সাজাবেন।

আরেকটা জরুরী জিনিস বলি। গুগল রোবটের কিন্তু শুধুই সার্চ এবং ইন্ডেক্স করার ক্ষমতা নয়, সেইসাথে অনেক ফিল্টার বসানো থাকে এই রোবটের প্রোগ্রামে। ইন্টারনেটে যথেচ্ছভাবে যেখানে যেখানে নিজের লিঙ্ক লিখে গেলে তার কিন্তু কূফল হতে পারে এটাও মাথায় রাখবেন! দোষ আপনার নয়, দোষ স্প্যামারদের। তারাই নিজেদের লিঙ্ক এইভাবে সবখানে রেখে আসে। আপনি স্প্যামার নন, অথচ রোবট সেটা বুঝবেনা তাইনা? সে যখন দেখবে অন্য স্প্যামারদের মতো আপনার লিঙ্ক অত্যধিক ওয়েবসাইটের পাতায় পাওয়া যাচ্ছে, তখন আপনাকেও স্প্যামার হিসেবে ধরে নিতে পারে। ফলাফল? আপনার হয়তো ১০০’টি পাতার লিঙ্কের মধ্যে ৩০’টি লিঙ্ক ছিল প্রথম পাতায়, সেইগুলিকেও গুগল নামিয়ে নেবে পরবর্তী পাতাগুলিতে। আমাকে কি কেউ দেখেছেন আমার প্রতিটি মন্তব্যের নিচে নিজের লিঙ্ক দিচ্ছি? আমি এটা কোথাও করিনা। অযথা বিজ্ঞাপনের চেষ্টাও আমি করিনা। পারলে আপনারাও এটা মেনে চলুন। নিজের লেখার মান উন্নত করুন এবং গুগলের উপরে ভরসা করুন, গুগলের চাইতে বেশি ভিজিটার আপনাকে কেউ দিতে পারবেনা।

আমি তো বলেছি আমার অভিজ্ঞতার কথা লিখবো? তবে শুনুন, আমার প্রথম ব্লগটি আমি মিশ্র বিষয়ে লিখতাম, ইংরাজী ব্লগ, হাবিজাবি কথায় বিশ্বের নানা ঘটনার নিজের কথায় নিজের ভাবনা লেখা তাতে। প্রথম এক বছরে প্রতি মাসে ৫ হাজারের মতো ভিজিটার পেতাম। দ্বিতীয় বছরে একদিন আমি এডসেন্স একাউন্ট খুলে অবাক, সেদিন একদিনে আয় হয়েছে ৪২ ডলার! কেন? খুঁজে দেখি যে আমার ওই হাবিজাবি জিনিসের ব্লগে এক দিনে গুগল ১ লাখ ৮২ হাজার পাঠক পাঠিয়ে দিয়েছে। অথচ তখন আমি SEO জানতাম না, আমি adsense optimization জানতাম না (এটা ২০০২ সালের ঘটনা বলছি)। লেখার কাছাকাছি কিম্বা লেখার মধ্যে কোথাও বিজ্ঞাপন ছিলোনা। তবুও একদিনে ৪২ ডলার আয় হয়েছে আমার অজানা অচেনা ব্লগে। সেদিনের এই ঘটনা ছিল আমার মোর ঘুড়িয়ে দেওয়ার দিন, এর পরেই আমি উঠেপড়ে লেগেছিলাম এডসেন্সের বিষয়ে আরো জানতে এবং আমার উদ্দেশ্য ছিল বেশি ভিজিটার, বেশী আয় নয়। ফলাফল স্বরূপ আজ আমার অনেক ব্লগ, কিন্তু আমার চেনাজানা কেউ আমার সব ব্লগের লিঙ্ক জানেই না। কারন, প্রচার আমি করিনা। অনেকে বলতে পারেন এটা বাড়াবাড়ি, হল নাহয় তাইই। কিন্তু এটা আমার একটা ওপেন সিক্রেট মতো, ইন্টারনেটেই আছে, সবাই দেখতে পাবে, কিন্তু কেউ জানবেনা আমার ব্লগ নাকি অন্য কারো। আমার বিভিন্ন ব্লগ, বিভিন্ন ছদ্মনামে আছে। আপনারাও যদি এই পদ্ধতিতে চলেন, তাতে ভালোই হবে শেষে। একাউন্ট ব্যান হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই থাকেনা। (আমি এমনও শুনেছি বন্ধুর ক্ষতি করার জন্য অন্যেরা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্লগে গিয়ে শ’য়ে শ’য়ে ক্লিক করেছে এবং তারপরেই একাউন্ট ব্যান)

adsense_moneyআরেকটি বিষয়েও কথা হয়েছে, অনেকেই নাকি নিজের ব্লগের বিজ্ঞাপনে ক্লিক করেছেন। দেখুন, এটা বেআইনি হলেও যারা এই পথে যেতে চান তারা এটাও করতে পারেন, তবে ঘুরপথে যেতে হবে। কিন্তু যেহেতু বেআইনি তাই আমি লিখতে পারছিনা কিভাবে এটা করা যাবে। অনেক সহজ সরল পথ আছে এবং গুগল জীবনেও তা ধরতে পারবেনা। পথ আমি বলে দিতে পারি, তবে, এইসব না করাই ভালো। অভ্যাসে পরিনত হলে পরে সমস্যা এড়াতে পারবেন না।

ব্লগ একটি ভালোলাগার জিনিস হিসেবে রাখুন, ব্লগিং একটি ভালোলাগার অনুভূতি হিসেবেই পাবেন। বাকিটা পরম করুনাময়ের উপরেই ছেড়ে দিন না? তিনি আছেন এবং আমাদের প্রত্যেকের জন্যই তিনি কিছু না কিছু করবেন। আমি অত্যন্ত সাধারন কিছু কথা লিখলাম, কিন্তু নিজের এডসেন্স অভিজ্ঞতা এইগুলি। ফল পেয়েছি খুব ভালো, এবং আমি শান্তিতেই আছি, প্রতিমাসেই চেক পাই। এক্সপার্টদের মতো দুই/তিন হাজার ডলারের চেক পাইনা যদিও, কিন্তু যা পাই তা দিয়ে বেশ ফূর্তি করতে পারি আমি। আমি মজা করে এটাকে বলি আমার ফূর্তি ফান্ড। আমার একটি চাকরী আছে, তাই এডসেন্স আমার বোনাস/বাড়তি আয়। এই টাকা আমি জমাইনা, আমি খরচ করে ফেলি। এবং সবচেয়ে বড় কথা, নিয়মিত আমি এই টাকার নির্দিষ্ট একটি অংশ প্রয়োজনী মানুষদের দান করি। কিছু পেলে কিছু দিয়েও দিন, কারন এই পৃথিবীতে অনেকেই আছেন যারা কিছুই পাননি। নিয়ম মেনে সৎ পথে চললে এডসেন্সের টাকা আসবেই আসবে, যাই আসুক, অল্পতেই খুশী থাকতে চেষ্টা করুন। সাফল্যের এটাও আরেকটা প্রধান দিকনির্দেশনা। টাকা টাকা করে দিকভ্রষ্ট হয়ে যাবেন না, তাতে এডসেন্সে সাফল্য আসার বদলে দূরে চলে যাবে।

Writer : Ria

Source : http://akashprodip.wordpress.com/2010/01/13/google-adsense-secrets/