বিএনপির রোডমার্চ রাজনীতি

রাহাত খানঃ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইতিমধ্যে সিলেটে একটি রোডমার্চ করে ফেলেছে। রোডমার্চে হাজার হাজার লোকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের বিএনপিবিষয়টি বিবেচনায় নিলে বলতেই হয়, বিএনপির রোডমার্চ সফল হয়েছে। সিলেটে খালেদা জিয়ার জনসভায়ও যোগ দেয় হাজার হাজার লোক। খালেদা জিয়ার জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো সভাস্থল।

বিএনপির রাজনীতি এদ্দিন কমবেশি ঘরের ভেতর এবং পত্রিকায় বক্তব্য-বিবৃতি দানের মধ্যে আবদ্ধ ছিল। সিলেটের রোডমার্চ বিএনপির ঘরে আটকে থাকা সেই রাজনীতিকে বাইরে প্রকাশ্য পরিসরে নিয়ে এসেছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য জনগণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা। এই কাজটাই এখন বিএনপি করছে। বাংলাদেশের দ্বৈরথ যুদ্ধের চিরাচরিত রাজনীতি থেকে সরে আসা রাজনীতির জন্য অবশ্যই একটি শুভ সংবাদ।

বিএনপি ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নিজেদের চরম বিপর্যয়ের পর অনেকটাই হতাশায় ডুবে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল, দলটি কোনোদিনই বুঝি রাজনীতির মাঠে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু বিএনপি ক্রমে ক্রমে এই হতাশা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। পৌর, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রীতিমতো ভালো ফল অর্জন করেছে দলটি। সিলেটের রোডমার্চ ও জনসভা বিএনপির রাজনীতিকে যেন অন্ধকার সুড়ঙ্গে আলোর পথ দেখিয়েছে। বিএনপি এখন শুধু যে তার বৃহদাকার ফিরে পেতে শুরু করেছে, তা-ই নয়, যে কোনো বিচারে বিএনপি এখন একটি উৎসাহিত, অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত দল। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ যত দ্রুত এই সত্য অনুধাবন করে ততই মঙ্গল।

বিএনপির দ্বিতীয় রোডমার্চ উত্তরাঞ্চলের দিকে। শেষ হওয়ার কথা চাঁপাইনবাবগঞ্জে পেঁৗছে। সেখানে জনসভায় জনগণের উদ্দেশে যথারীতি ভাষণ দেবেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া।

১৮ অক্টোবর মঙ্গলবার, উত্তরা থেকে উত্তরাঞ্চলের দিকে বিএনপির দ্বিতীয় রোডমার্চ শুরু হওয়ার কথা। লেখাটা তৈরি করতে বসেছি যেহেতু সোমবার, সেহেতু মঙ্গলবার রোডমার্চ হবে কি-না, হলে এর গতিপথ কী হবে, রোডমার্চ এবং পরবর্তী সময় জনসমাগম কী রকম ঘটবে, রোডমার্চ কোনো প্রতিরোধ কিংবা বাধাবিপত্তির মুখে পড়বে কি-না, রাজাকার, আলবদরের দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক সখ্য ও দহরম-মহরম জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে কি-না খালেদা জিয়া রোডমার্চের পথসভায় এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনসভায় কী বক্তৃতা দেবেন ইত্যাদি বিষয়ে এ মুহূর্তে তেমন কিছু বলতে পারছি না। তবে একটা বিষয় উপলব্ধি করতে পারি, সেটা হলো গত রোডমার্চে সিলেটের জনসভায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তার দলের তরুণ নেতৃত্ব, ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ, জামায়াতে ইসলামী এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে যা যা বলেছিলেন দ্বিতীয় রোডমার্চের পথসভায় এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের সভায় সেই বক্তৃতার পুনরাবৃত্তি ঘটালে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।

বিএনপির ইদানীং জামায়াতে ইসলামীকে প্রাণপণে রক্ষার বিষয়টি নিয়েই আলোচনায় প্রবৃত্ত হওয়া যাক। তবে আগে এই বিষয়ে আমাদের সুধী সমাজের একটি বৃহদাংশের বক্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে। তাদের প্রশ্ন, একসময় আওয়ামী লীগও তো স্বাধীনতাবিরোধী বলে কথিত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ওঠবস করত। তাদের নেতাদের নিয়ে একমঞ্চে বসত। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। জামায়াতকে প্রশ্রয় দিয়ে আওয়ামী লীগ যদি কোনো অপরাধ বা ভুল না করে থাকে, তাহলে একই কারণে বিএনপি কেন দোষের ভাগী হবে?

এ বড় বিচিত্র প্রশ্ন! আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে অপরাধ, ভুলভ্রান্তি বা ব্যর্থতার ঊধর্ে্ব তো নয়। অতীতে একটা সময় কিছুদিনের জন্য হলেও জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক আন্দোলনে সঙ্গী করায় তারা অপরাধ এবং ভুলভ্রান্তি অবশ্যই করেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দলের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের স্বল্পকালীন সংশ্লিষ্টতা জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। পরবর্তী নির্বাচনে পরাজিত হয়ে সেই ভুলের কাফফারাও আওয়ামী লীগকে দিতে হয়েছিল। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ আর যা-ই করুক, স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদরের দলটা থেকে দশ হাত দূরে থাকে।

বিএনপির ভূমিকা ভিন্ন। যারাই আওয়ামী লীগের বিরোধী, জন্মলগ্ন থেকে তারাই বিএনপির মিত্র। মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম, ভাসানী ন্যাপ, জামায়াতে ইসলামী_ সব দল বিএনপির সহযাত্রী। ১৯৭৪ সালে সাত খুনের মামলার আসামি তাদের মিত্র, রাজাকার-আলবদররাও তাদের মিত্র। কে ও কারা স্বাধীনতাবিরোধী, তা নিয়ে জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত দলটির কোনো মাথাব্যথা নেই। তাদের অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনে জিতে বিএনপি ক্ষমতায়ও গেছে।

তবে জামায়াত নয়, আমার বিবেচনায় নানা সময়ে নির্বাচন জিতে বিএনপি ও এরশাদের জাতীয় পার্টির ক্ষমতায় যাওয়ার ফ্যাক্টর ছিল বাংলাদেশের পাকিস্তানফেরত সেনাবাহিনী। বঙ্গবন্ধু নানা শক্তি-পরাশক্তির সঙ্গে দেনদরবার করে নানা কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে এই আটকে পড়া বাংলাদেশি সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। এসব লোকের চাকরিতে পুনর্বাসিত হওয়ার কথা ছিল না। এরা বাংলাদেশের লোক, বাংলায় কথা বলে এই কারণে ভালোবেসে ও মমতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদের চাকরিতেও পুনর্বাসিত করেছিলেন। কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসেবেই কি-না পাকিস্তানফেরত সেনাবাহিনী বরাবর বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। রাজনীতিতে ২০০৬ সালের আগে পর্যন্ত খালেদার মূল শক্তি ছিল এরাই। না জনগণ। না জামায়াতে ইসলামী।

বাংলাদেশের বর্তমান সেনাবাহিনীতে পাকিস্তানফেরত লোকদের আর কেউ চাকরিতে আছে বলে মনে হয় না। কেউ গেছে অবসরে। কারও কারও ঘটেছে পরলোকপ্রাপ্তি। সেনাবাহিনী নিয়ে খালেদা জিয়া ও বিএনপির ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ডানা এখন ভাঙা। বাংলাদেশের বর্তমান সেনাবাহিনী শুধু যে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এবং স্বাধীনতার মূল্যবোধে উজ্জীবিত তাই নয়, তারা সৈনিক হিসেবে পেশাদারিত্বে বিশ্বাসী। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটা উল্লেখযোগ্য অংশ নিজেদের সাহস, বীরত্ব ও দক্ষতার জন্য যেমন গোটা বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে, পাশাপাশি তেমনি প্রতি বছর অর্জন করছে বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতার ক্ষেত্রে বর্তমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রয়েছে অনন্য ভূমিকা।

বলতেই হয়, বিশ্বের ভৌগোলিক রাজনীতির বর্তমান বাস্তবতার কারণে এবং এখনকার বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সর্বাংশে পেশাদার হওয়ায় বিএনপি তার ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতির সেই ট্রাম্পকার্ডটি হারিয়েছে। জামায়াতের ক্ষয়িষ্ণু ৪ ভাগ ভোট তাকে নির্বাচনী রাজনীতিতে জয় এনে দিতে পারবে না। বিএনপিকে রাজনীতিতে আস্থা রাখতে হবে জনগণের সমর্থনের প্রতিই।

সে জন্য বলছিলাম, বিএনপির রোডমার্চে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের উপস্থিতিতে রাজনীতিতে বিএনপির জন্য দায় বা বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিতে পারে। কেউ ভোলেনি ১৯৭১ সালে জামায়াতের নৃশংস সেই ভূমিকা। গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান প্রমুখ কারা ছিল। কী করত, কত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, কত নারীকে পাকবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে_ খুব মনে আছে সে পশুদের মুখ। পাকিস্তান বাহিনীর বাঙালি নিধন ও ধ্বংসযজ্ঞের দোসর। বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান হোতা। সব মনে আছে মানুষের। জামায়াত যুদ্ধাপরাধী। খালেদা জিয়া হাজার চেষ্টা করেও বাংলার মানুষের কাছে এই নরপশুদের দোষ খণ্ডাতে পারবেন না। পারবেন না যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে। জামায়াতকে বাঁচাতে গিয়ে বিএনপিই বরং গণরোষের শিকার হয়ে উঠতে পারে। কিছুই বিচিত্র নয়।

রোডমার্চের পথসভায় এবং অন্তিমে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনসভায় খালেদা জিয়া কী বক্তব্য দিচ্ছেন বা দিয়েছেন, তা সোমবারে লিখতে বসে আমার জানার উপায় নেই। তিনি কি জনগণের উদ্দেশে দেশ ও জাতির মঙ্গলের কথা কিছু বলবেন? না আওড়াবেন সেসব পুরনো কথা?

বলবেন নাকি দেশের মানুষ খুব কষ্টে আছে? মানুষ কষ্টে আছে বৈকি। তবে খালেদা জিয়ার ২০০১-০৬ আমলের তুলনায় মানুষ কিন্তু অনেক ভালো আছে। তার আমলে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৪৬ টাকার কম ছিল না। আওয়ামী লীগের আমলে দাম অনেক কমেছিল প্রথমদিকে, তবে কেজিপ্রতি মোটা চালের দাম এখনও ৩২-৩৬ টাকার বৃত্ত ছাড়িয়ে যায়নি। দু'একটা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হঠাৎ হঠাৎ আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। চাহিদা ও সরবরাহ অর্থনীতির ছক অনুসরণ করেও দ্রব্যমূল্য কমানো যাচ্ছে না। এ জন্য যা দরকার ছিল তা হচ্ছে ক্যাবকে সুসংহত ও শক্তিশালী করে তোলা। টিসিবিকে কার্যকর করা। ক্যাবকে শক্তিশালী না করার পেছনে ব্যবসায়ী ও আমলাদের একটা ষড়যন্ত্র আছে, সেই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যোগসাজশ আছে কিছুসংখ্যক ক্যাব নেতারও। বাংলাদেশ এখন (অতীতেও) 'সেলার'স মার্কেট। অর্থাৎ বিক্রেতা যা দাম চাইবে, সাংগঠনিক ও আইনগত শক্তি না থাকায় ক্রেতাকে সেই দামই দিতে হয়। এই অবস্থা পাল্টাতে পারলে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার দাবড়ানি অবশ্যই কমে যাবে।
তা সত্ত্বেও ২০০১-০৬ সালের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক ভালো আছে। ভয়াবহ মন্দায় অর্থনীতির বহু শক্তিধর দেশেও মুদ্রাস্ফীতি এবং দ্রব্যমূল্য বাড়ছে হুহু করে। এক জ্ঞানপাপীরা ছাড়া সবাই স্বীকার করবেন, বাংলাদেশে বার্ষিক উন্নয়ন প্রবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য ইত্যাদি সেই তুলনায় অনেক সহনীয় পর্যায়ে আছে। ২০০১-০৬ সালে বাংলাদেশ ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী উলফা, এলটিটিই, রোহিঙ্গা এবং হুজি, জেএমসি, শিবির, হিযবুত তাহ্রীর, লস্কর-এ-তৈয়বা প্রভৃতি দেশি-বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীর অভয়ারণ্য। বোমাবাজি, গ্রেনেড হামলা, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি বাংলাদেশে লেগেই থাকত। সেই তুলনায় বাংলাদেশ এখন আগের চেয়ে বহু গুণ ভালো আছে বৈকি। খালেদা জিয়ার মনে হতে পারে দেশের মানুষ খুব কষ্টে আছে_ কারণ তিনি, তার দল, তার দলের তরুণ নেতৃত্ব ক্ষমতায় না থাকলে দেশের মানুষ ভালো থাকে কী করে!

খালেদা জিয়া তার ২০০১-০৬ শাসনামলে দেশে উন্নয়নের জোয়ার বয়েছিল বলে দাবি করতেন। এখনও মাঝে মধ্যে জনসভায় বা বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে বলে বেড়ান, তার আমলে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ভালো ছিল, সারের দাম কম ছিল, শিক্ষা খাতে প্রভূত উন্নতি হয়েছিল, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। তার এসব দাবির সঙ্গে সত্য ও বাস্তবতার তেমন কোনো মিল নেই। দেশের মানুষ তো 'বোকা-গাধা' নয়। তারা কি ২০০১-০৬ আমলে দেশ কোন অবস্থায় ছিল, তা জানে না? খুব জানে। সেই জন্যই তো ২০০৮ সালের এ পর্যন্ত হওয়া সবচেয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে বিএনপিকে তারা ৩০টির বেশি আসন দেয়নি।
বর্তমান সরকার সর্বৈব পারঙ্গম, তাদের ব্যর্থতা নেই, এটা অবশ্যই ঠিক নয়। দ্রব্যমূল্য আরও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে না পারা, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি এবং কেলেঙ্কারির সঙ্গে যারা যুক্ত বলে অভিযোগ, তাদেরই কাউকে কাউকে দিয়ে শেয়ারবাজার চালানোর উদ্ভট চেষ্টা, রাস্তাঘাট তৈরি ও মেরামতে গাফিলতির পরিচয় দেওয়া, রেলওয়ে ব্যবস্থাকে গতিশীল করে তুলতে না পারা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কল্পনাধিক শ্লথগতি_ সরকারের ইত্যাকার ব্যর্থতা অস্বীকার করার উপায় নেই।

তবে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্যের কাহিনীও মোটেও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। বিদ্যুৎ খাতকে বিএনপি ইচ্ছা করেই কি-না একেবারে ধ্বংস করে দিয়ে গিয়েছিল। সেই খাতকে শুধু জীবন দেওয়া নয়, বিদ্যুৎ সংকটের ৮০ ভাগের সুরাহা বর্তমান সরকার ইতিমধ্যে করতে সমর্থ হয়েছে। ২০১৪ সালের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ সমস্যা একেবারেই নূ্যনতম পর্যায়ে নেমে আসবে। তাতে সন্দেহ পোষণ করার তেমন কারণ নেই।

কৃষি খাতে বর্তমান সরকারের সাফল্য রীতিমতো উল্লেখযোগ্য। দেশে খাদ্যোৎপাদন বেড়েছে, খাদ্যে বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে চলেছে আগামী বোরো ফসল ওঠার সঙ্গে সঙ্গে। অবশ্য খোদা না খাস্তা, এর মধ্যে যদি কোনো প্রাকৃতিক বা অন্যবিধ বিপর্যয় না ঘটে। সারের সরবরাহ পর্যাপ্ত, দাম আগের তুলনায় দুই গুণেরও বেশি কম। চাষি তার ধান, পাট ও অন্যান্য কৃষি উৎপাদনের ভালো দামই পান।

তবে বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা বা সাফল্যের ফিরিস্তি আর বাড়াতে চাই না। শুরু করেছিলাম যে প্রসঙ্গ ধরে সে প্রসঙ্গে বরং ফিরে যাই। বিএনপি রোডমার্চের মাধ্যমে সর্বস্তরের বিশেষত তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, এটা অবশ্যই গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য একটি শুভ সংবাদ। তবে শুধু রোডমার্চ করাই যথেষ্ট নয়, জনগণ কী চায় তাও অনুধাবন করতে হবে বিএনপিকে। তরুণ নেতৃত্বের কথা বললে, ১৯৭১ সালে দেশে যুদ্ধাপরাধ হয়নি বললে তরুণ ভোটাররা (যারা দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার) তাদের ক্ষমা করবে না। ২০০১-০৬ সালে বিএনপির তরুণ নেতৃত্ব জঙ্গিবাদের উত্থান, দুর্নীতি, লুণ্ঠনকৃত রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিদেশে পাচার, রাজনৈতিক হত্যা ইত্যাকার বহু খেলই তো দেখিয়ে গেছে! দেশের মানুষ ভোলেনি। ভুলবে না। রাজাকার-আলবদরদেরও কোনো ক্ষমা নেই। বিএনপি নেতৃত্ব তাদের রোডমার্চের সময় এই দুটি কথা যত মনে রাখবে, ততই তাদের জন্য মঙ্গল বলে আমি মনে করি।