একটি চন্দন গাছ আপনার জীবনের পেনশন

আহছান উল্লাহ, গৌরনদীঃ স্বর্গে আরোহন কিংবা পুণ্য অর্জনের জন্য শ্বেতচন্দনের উপযোগিতার শেষ নেই। সুভাষিত চন্দন বাদে দেবী আরাধনার কথা চিন্তাই করা যায় না, তেমনি শ্বেতচন্দন বাদে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের কথাও ভাবা যায়না। পাশাপাশি সম্ভাবনাময় একটি গাছ বাড়ির আঙ্গিনা, কবরস্থান, শ্মশান কিংবা পরিত্যাক্ত জায়গায় লাগিয়ে নামমাত্র পরিচর্যা করে ১০-১৫ বছরের ব্যবধানে পেনশনের মত নিয়মিত আর্থিক সুবিধা পেতে পারেন। বর্তমান বাজারে এক কেজি চন্দন কাঠের পাইকারী মূল্য প্রাচন্দন গাছ য় ২০ হাজার টাকা। আমাদের দেশে চন্দনের প্রচুর চাহিদা থাকলেও তা আমদানী নির্ভর। মানব কল্যানে শ্বেতচন্দনে রয়েছে অভূতপূর্ব গুন। যা আমাদের অনেকেরই অজানা।

সাধারণত দুই প্রকারের চন্দনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। সাদা চন্দন বা শ্বেতচন্দন, রক্ত চন্দন বা লাল চন্দন। তবে কেউ কেউ পিত চন্দন নামে একটি চন্দনের কথা বললেও তার কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। এর মধ্যে শ্বেতচন্দন এর মূল্য বেশী। সাদা চন্দনের গাছ থেকে পাতন ব্যবস্থায় তেল নিস্কাশন করে প্রসাধনী ও ঔষধ শিল্পে ব্যবহার করা হয়। শ্বেতচন্দন আমাদের কাছে সুগন্ধি কাঠ হিসেবে পরিচিত হলেও চন্দন কাঠের নির্যাস সাবান, পাউডার, আতর, ক্রিম, দাত মাজার পেষ্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

আধুনিক ভেষজ শাস্ত্রে শ্বেতচন্দন বহু রোগের জন্য ঔষধী ব্যবহার করা হয়। যেমন অতিরিক্ত রক্তচাঁপ, ব্রঙ্কাইটিস এছাড়া পেনিসিলিন আবিস্কারের বহু আগেই ভেষজ চিকিৎসকরা গনোরিয়া রোগের জন্য শ্বেতচন্দন ব্যবহার করেছেন। তখন চন্দনের তেলের সংগে অন্য দু’একটি ভেষজ মিশিয়ে ঔষধ বানানো হত। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সর্বত্রই এটি গনোরিয়ার ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হত। এছাড়া খাদ্য হজম, ডায়রীয়া, আমাশয়, ঘামাচি, বসন্ত, হিক্কা সহ  বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে চন্দনের বিভিন্ন ব্যবহার রয়েছে।

শ্বেতচন্দন গাছের তেমন কোন রোগবালাই নেই। এ গাছের সুগন্ধ মানুষের কাছে আকর্ষনীয় হলেও পোকামাকড়ের কাছে আকর্ষনীয় নয়। শীতের শুরুতে শ্বেতচন্দন গাছের পাতা ঝড়ে যায়। এ গাছটি শুস্ক এলাকার গাছ বলে তেমন পানির প্রয়োজন হয় না। প্রচন্ড খড়াতেও গাছটি বাঁচতে পারে। গাছের প্রধান কান্ড বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত কিছু ডালপালা ছাটাই করে দিতে হয়। এ ডালপালা ফেলে না দিয়ে গুড়া করে ধুপ জালানোর কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ গাছের বীজ অথবা কাটিং পদ্ধতিতে খুব সহজেই বংশ বৃদ্ধি করা যায়।

সম্ভাবনাময় এ গাছের ব্যপক সম্প্রসারণ করা হলে প্রসাধন ও ঔষধ শিল্পের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। আমাদের দেশে শ্বেতচন্দন গাছের প্রচুর চাহিদা থাকলেও গাছটি আমাদের দেশে আমদানী নির্ভর। তাই একজন মানুষ এক একটি চন্দন গাছ রোপন করে ১০-১৫ বছর পরে যেমন পেনশনের মত আর্থিক সুবিধা পেতে পারেন। পাশাপাশি আমদানী নির্ভরতা কমিয়ে বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মূদ্রা আয় করা সম্ভব।