নুলা মুসা কিংবা প্রিন্স মুসাঃ যে রাজাকারের সম্পদ আর ক্ষমতার কথা শুনে আপনি চমকে যাবেন

নিঝুম মজুমদারঃ এই লোকের কথা আমি লিখব ঠিক করেছিলাম ২০০৮ সালের শেষের দিকে । কেননা সে সময় এই রাজাকারের ছেলেটি সিটি ল’ স্কুলে তার বার এট ল কোর্স টি প্রায় শেষ করে এনেছিলো । সে সময় আমার কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাথে স্বাভাবিক ভাবেই আড্ডা হতো এবং সিটি ল স্কুলে আসা যাওয়া হতো । সুতরাং রাজাকারের ছেলে যুবি’র সাথে আমার তখনই দেখা ও পরিচয় । যুবি থাকত লন্ডনের কানাডা ওয়াটার এলাকায় । লন্ডনের অন্যতম ধনী এলাকা । যেখানে শুধু ধনিক শ্রেণীদের-ই বাস আর ঘর বেসাতি । সে সেখানে থাকবেই বা না কেন ? পৃথিবীর অন্যতম একজন ধনী রাজাকারের পূত্র এই যুবি । আর সে ধনী রাজাকারটির নাম মুসা বিন শমশের । যে কিনা নিজের নামের আগে ব্যাবহার করেছে ডক্টর এবং প্রিন্স তকমা । ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের প্রত্যন্ত জেলা ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ফুলসুতি ইউনিয়নের কাজীকান্দা-হিয়াবলদী গ্রামের রাজাকার এই প্রিন্স মুসা বিন শমশের । গ্রামের লোকেরা যার কথা মনে করে আজও শিউরে ওঠে । সবাই যাকে চেনে নুলা মুসা নামে । আজ তারই গল্প বলব আপনাদের ।

বাংলাদেশে মূলত রাজাকারদের নাম এলেই আমরা সাধারণত যে কয়েকজনের নাম বলি তারা হলো মইত্যা রাজাকার,গো-আজম,সাঈদী,মুজাহিদ,মাওঃ মান্নান,বাচ্চু রাজাকার ইত্যাদি । এসবের আড়ালে অসংখ্য রাজাকার রয়েছে যাদের কথা হয়ত আমরা জানি-ই না । আবার জানলেও তা বলি না । কেননা এসব রাজাকার কখনো বিয়ে দেয় শেখ হাসিনার পরিবারে, কখনো বিয়ে দেয় শেখ সেলিমের পরিবারে আবার, কখনো খালেদা জিয়া কিংবা বি এন পি’র কোনো প্রভাবশালীদের পরিবারের সাথে অথবা এরশাদ চাচার কোনো আত্মীয় পরিজনদের সাথে । তাই এই রাজনৈতিক হুল্লোড়ে আমরা রাতা-রাতি ভুলে যাই এসব ভয়ঙ্কর রাজাকারদের কথা ও তাদের অতীত । বাংলাদেশের রাজনীতিতে আপনি যদি টাকা ঢালার মুরোদ রাখেন, তবে আপনার সাত খুন মাফ । আপনার যদি আন্তর্জাতিক যোগাযোগ অত্যন্ত প্রখর হয় আপনি তখন রাজা হয়ে যাবেন । এইসব সত্য বার বার আপনাদের বলবার কোনো মানেই হয় না । তারপরেও ঠোঁট কাটা এই আমি বার বার বলে যাই পুরাতন সব প্যান প্যানানি নতুন সুধায় ।

এই মুসা বিন শমশের কতটা ভয়াবহ ও প্রভাবশালী সে সম্পর্কে আপ্নারা জানবেন এই সিরিজের প্রতিটি পর্বে । জানবেন আর শিউরে উঠবেন । কিছুক্ষণ চুপ-চাপ বসে থেকে কিছুটা দীর্ঘ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আমার মতই বলে উঠতে পারেন “ বালের দুনিয়া” ।

আমি তাকে খারাপ বলি না । কিছু করতে না পারা আমার মত আম পাব্লিকের আর কি-ই বা করার আছে “ধুর বাল” শব্দ দুইটি বলা ছাড়া ?

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ রাজাকার নিধন করবে বলে আমাদের জানিয়েছে । আমরা তা বিশ্বাস করেছি ও করছি । আমরা জানি এই কাজ বি এনপি কুত্তার বাচ্চাদের দিয়ে কিংবা জাতীয় পার্টি মাদারচোদ দের দিয়ে কষ্মিন কালেও হবে না সুতরাং আচোদা আওমালীগই একমাত্র ভরসা । কিন্তু শুনে আশ্চর্য হবেন, এই আওয়ামীলীগেরই এককালের প্রভাব শালী মন্ত্রী, এম পি জনাব শেখ সেলিমের ছেলের বিয়ে দিয়েছেন এই রাজাকার মুসা বিন শমশেরের মেয়ের সাথে । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা এখন লন্ডনের হ্যামারস্মিথ এলাকায় বসবাস করেন সুখে ও শান্তিতে । আপনি মজা পাবেন একটি তথ্য জেনে যে, এই বিয়েতে কে উকিল বাপ ছিলো । আন্দাজ করে বলুন তো ?

জানি পারবেন না । এই বিয়ের উকিল বাপ ছিলো আমাদের চির নবীন, ৭০ বছরের দাদাভাই লেফটেনেন্ট জেনারেল হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ । চমকে গেলেন ? প্লিজ যাবেন না । আমাদের রাজনীতির এইসব খানকি গিরি দেখে আপনি এত সহজে চমকে গেলে কি করে হবে ? ভোট তো আমরাই দিয়েছি । তাই নয় কি ? সুতরাং আপনাকে এখন বসে বসে এসব হজম করতে হবে ।

এই ক্ষেত্রে শেখ সেলিমের সম্পর্কে আরেকটি তথ্য দিয়ে রাখি । সেলিম সাহেবের আরেক পূত্র শেখ নাইমের বিয়ে দেয়া হয়েছে তারই রাইভাল পার্টি বি এনপির আরেক প্রভাবশালী নেতা প্রাক্তন বিদ্যুত মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর মেয়ে সারা হাসিন মাহমুদের সাথে । হায় রাজনীতি!!!

মুসা বিন শমশের ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার আকরাম কোরায়াশী ও আরো সৈন্যকে নিয়ে যখন ফরিদপুরের মহিম স্কুল সংলগ্ন ধর্মশালায় ঢুকে তার কেয়ারটেকার কেষ্টমন্ডলকে হত্যা করে, যখন সেই নিরীহ কেষ্টমন্ডলের চার কন্যা ননী,বেলী,সোহাগী ও লতাকে ধর্ষনের পর ধর্ষন করে রক্তাক্ত অবস্থায় পথে ফেলে যায় তখন বিধাতা কই ছিলেন জানি না ।( উল্লেখ্য সে সময় ননী আর বেলীকে পাকিস্তানী আর্মি তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায় ।) আমি এও জানিনা যখন ওই হানাদার আর্মি অফিসার ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকার মদন গোপাল আঙিনা এলাকার মেয়ে কমলা ঘোষকে ধর্ষন করে বীরত্বের বুক ফুলিয়ে চলে গিয়েছিলো, জানিনা তখন বিধাতা কোথায় ছিলেন । হায় বিধাতা !! পরবর্তীতে ওই চার বোন আর তাঁদের মা মাখন বালার স্থান হয় ফরিদপুরের পতিতা পল্লীতে । আজ স্বাধীনতার এত বছর পরে বুড়ো বটগাছের মতন বেঁচে আছেন আমাদের ওইসব জননীরা নিভৃতে আর নিরবে । ৩৯ বছরের অশ্রু গালে আর চোখে নিয়ে তারা বেঁচে থাকবেন নিঃশ্ব হয়ে । এই-নিয়তি । ওইদিকে কমলা ঘোষের কি হয়েছিলো জানতে চান ? হা হা হা…

কমলা ঘোষের স্বামী জানতে পারে তার স্ত্রী’র লাঞ্চিত ও নির্যাতিত হবার ঘটনা । স্বভাবতই কুত্তার বাচ্চা স্বামী বঙ্গ জননী কমলাকে আর ঘরে নেয় নি । তেলাপোকা আর বিভতস শুওরের বাচ্চার মত কমলাকে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো সেই অমানুষ । ফলশ্রুতিতে কমলা দেশের বাইরে আশ্রয় নেয় স্ময়ের পরিক্রমায় । এখন তিনি দেশের বাইরে বেঁচে আছেন একা হয়ে । সে দুঃস্বপ্নকে তাড়া করে । একা …একা ।

১৯৭১ সালের আগে এই নুলা মুসা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পক্ষে মাইকিং করেছিলো । ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনেও তার ভুমিকা ছিলো বলে কথিত রয়েছে । ২১ শে এপ্রিল যখন ফরিদপুরে পাক সেনারা ঢোকে তখন এই নুলা মুসাই পাক আর্মিদের স্বাগত জানিয়েছিলো । ২২ শে এপ্রিল ১৯৭১ সালে এই আকরাম কোরায়শীর সাথে এক বৈঠকে এই নুলা মুসাকে দেখা যায় ।এই ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী ছিলেন ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম আবু ইউসুফ সিদ্দীক পাখি ।

মেজর আকরাম কোরায়াশীর সাথে নুলা মুসার ভালো সম্পর্ক থাকার কারনে ১৯৭১ সালে কি করে এই নুলা মুসা এক মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছিলো সে গল্প পরের পর্বে আপনাদের বলা হবে । বলা হবে তার লুটের গল্প বলা হবে তার বেড়ে উঠার গল্প । আপনাদের বলা হবে এই পশুটির হীরা খচিত জুতো পরবার গল্প , ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের তার সিগ্নেচার কলমের গল্প, ৫০ লক্ষ টাকার ঘড়িড় গল্প,লেবার পার্টিকে দিতে চাওয়া ৫ মিলিয়ন পাউন্ডের গল্প , দেড় মিলিয়ন পাউন্ডের কাফ লিঙ্কের গল্প , মার্কিন প্রেসিডেন্ট বব ডেলকে ব্যাবহার করতে দেয়া তার জেট প্লেন্টির গল্প, প্রিন্সেস ডায়নার সাথে তার সম্পর্কের গল্প, ২৫ মিলিউন পাউন্ডের “লুটন হু” প্রাসাদ কিনতে চাওয়ার গল্প, বলা হবে তার বন্ধুদের গল্প জর্জ বুশ,ব্লেয়ার,ডেভিড ফ্রস্ট,নেলসন ম্যান্ডেলার গল্প ।

আপ্নারা জানুন এই এই ধনী রাজাকারের গল্প আর তারপর আমার মত আংগুল চুষে বলে উঠুন “বালের দুনিয়া”

আপ্নারা জানুন, কি করে অর্থ দিয়ে আওয়ামীলীগ কেনা যায়, বি এন পি কেনা যায়, লেবার পার্টি কেনা যায়,লিবারেল পার্টি কেনা যায়, ডেমোক্রেট কেনা যায় । আপ্নারা জানুন অর্থ থাকলেই কি করে রাজাকারের তালিকা থেকে শেখ সেলিমের বেয়াই হয়ে পার পাওয়া যায় । প্লিজ আমাকে বলতে দিন সেসব ভন্ডামী রাজনীতির কথা ।

চলবে…