বরিশালে বিএনপি’র রাজনৈতিক হালচাল

আহমেদ জালাল, বরিশালঃ বরিশাল বিএনপি’র আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতিতে টেনশনে সময় পাড় করছেন এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার। একের পর এক ধকলে তার রাজনীতির সাম্রাজ্য ছোট হয়ে আসছে। যিনি বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। মুলত দলের মধ্যকার বিভাজনের অপর নেতা জেলা শাখার সভাপতি কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী সম্পাদক আহসান হাবীব কামালের লাইমলাইটে পর্দাপনে সরোয়ারের রাজনীতির মাঠ ক্রমেই নাজুক পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ কারনে মহাবিপাকে পড়েছেন এক সময়ে একাই সব গলধকরনের চেষ্টায় মগ্ন থাকা এই নেতা। জেলা বিএনপি’র কমিটি বাতিলের দাবীতে এমপি সরোয়ার বিভিন্ন পন্থায় কলকাঠি নেড়ে আসছে। জেলার সভাপতি আহসান হাবীব কামাল ও সাধারন সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরীনকে মাইনাজ করতে কেন্দ্রও লবিং তদবির করছেন তিনি। পাশাপাশি জেলা কমিটি বাতিলের দাবীতে সরোয়ার অনুসারীরা নানা কর্মসূচীতে রাজপথে আন্দোলন করে। কেন্দ্রের ঘোষিত কমিটিকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে সরোয়ারের এহেন পথচলার বিষয়টি দলের সব্বোর্চ ক্ষমতাধরকে অবহিত করেন কামাল শিরীন। এছাড়া দলের চেয়ারপারসনের বড় ছেলে তারেক রহমানকেও অবহিত করা হয়। দলীয় সূত্র বলছে, আহসান হাবীব কামালের সঙ্গে তারেক রহমানের একটি ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।কয়েকবার লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের খোঁজ খবরও নেন কামাল। অন্যদিকে অনেক আগ থেকেই এমপি সরোয়ারকে ভাল চোখে দেখছেন না তারেক রহমান। বিগত জোট সরকারের আমল থেকেই তারেক রহমানের সঙ্গে সরোয়ারের বৈরী সম্পর্ক বিরাজমান।বৈরী সম্পর্কের নেপথ্যে রয়েছে সরোয়ারের আগ্রাসী ভূমিকা। বরিশাল তথা গোটা দক্ষিনাঞ্চল বিএনপিতে সরোয়ারের একক অধিপত্য বিস্তার। সেখানে কেউ ভাগ বসানের চেষ্টা করলে দলের চেয়ারপারসনের নিকট হস্তক্ষেপের নালিশ করতেন সরোয়ার। সূত্র বলছে, এখানকার বিএনপির বিশাল ভোট ব্যাংক থাকায় বার বার এমপি বিজয়ী হন সরোয়ার। দলের টিকিটে বিসিসির মেয়রও হতে পেরেছিলেন তিনি। বিএনপি’র দূর্গ খ্যাত বরিশালের নেতৃত্ব অনুকুলে করায়ত্ব বা ধরে রাখতে পারায় রাজনীতির ময়দানে কথা উঠে সরোয়ারেরর বিকল্প নেই। চাউর ঘটানো হয় দলের মধ্যে ত্যাগী ও সাংগঠনিক নেতা। কেন্দ্রেও সরোয়ারের ব্যক্তিগত ইমেজ তৈরি হয়। ওদিকে রাজনীতির বিষয়ে সচতেনরা বলছে ভিন্ন কথা স্বাধীনতাত্তর থেকেই দক্ষিনাঞ্চলে বিএনপির শক্ত ঘাটি হিসাবে পরিচিত বরিশাল। বিশেষ করে বরিশাল সদর আসন। বিএনপি রাজনীতির প্রতিষ্ঠা লগ্নের পর সংগঠনকে গতিশীল করতে কয়েক জন ঘাম জড়িয়েছেন। এদের মধ্যে উলে¬খযোগ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস। এর বাইরে বিএনপি রাজনীতির ইমেজ বাড়াতে অবদান রাখেন সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত ইউনুছ খান। সদর আসনে বিএনপির সাংগঠনিক ভীত বা ভোট ব্যাংক থাকার কারনেই বিশ্বাস পরিবারের অনুপস্থিতিতেও এমপি বনে যেতে পারছেন সরোয়ার। অর্থাৎ বিষয়টি এমনই যে সরোয়ার নয় দল বা দলের প্রতীককে ভোট দিয়েছে সমর্থকরা। জানা যায়,সরোয়ারের আধিপত্য বিস্তারের বিরুদ্ধে দলের মধ্যে থেকেই একপর্যায়ে ক্ষোভের বিস্ফোরন ঘটে। বিএনপি রাজনীতির প্রতিবাদী কন্ঠে সরোয়ারের আধিপত্যের বিরুদ্ধে জানান দেন দলের একাংশ। নেতৃত্ব দেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। দীর্ঘ ৬ বছর পর আহসান হাবীব কামালেরর বহিস্কারাদেশ’র খড়গ থেকে মুক্তি পান মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি কামাল। এরপরই সরোয়ারের রাজনীতির মাঝা ভেঙ্গে দিতে অবতীর্ন হন কামাল। গ্র“পিং রাজনীতিতে আস্তে আস্তে সরোয়ারের পৃথিবী ছোট হতে থাকে। বিরুদ্ধচারনে মাঠে নামে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম রাজন। প্রিন্ট মিডিয়ায় সরোয়ারের বিরুদ্ধে কয়েক নেতা বিবৃত্তি দিয়ে চেয়ারপারসনের দৃষ্টি গোচর করেন। সরোয়ার-কামাল গ্রুপের বিভাজনে কয়েকবার রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। এমনকি দলের প্রতিপক্ষরা হত্যার চেষ্টায় নজরুল ইসলাম রাজনকে কুপিয়ে জখম করে। অভিযোগ উঠে সরোয়ারের নির্দেশে তার অনুসারীরা রাজনকে কপিয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা প্রচেষ্টার মামলা দায়ের হয়। এরমধ্যে জেলা বিএনপির সভাপতি পদে আসীন হন কামাল। জেলা হাতছাড়া হওয়ায় টেনশন বেড়ে যায় সরোয়ারের। তিনি চেয়েছিলেন তার অনুসারীদের জেলার নেতৃত্বে বসাবেন। কিন্তু বিধি বাম! সর্বশেষ সরোয়ারের নানা মেকানিজমের বিরুদ্ধে আহসান হাবীব কামাল সমর্থকরা সদর রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের ঘোষনা দেয়। একই সময়ে একই স্থানে সমাবেশের ঘোষনা দেয় সরোয়ার সমর্থকরাও। এতে টান টান উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে উভয় শিবিরে। ২২ অক্টোবর শনিবার সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। কেন্দ্রের নির্দেশে উভয় গ্রুপই সমাবেশ প্রত্যাহার করে নেয়। জেলা কমিটি বাতিলের দাবীতে আন্দোলন করায় সরোয়ারের উপর হাইকমান্ড নাখোশ হয়। ফলে মহা টেনশন পড়েন সরোয়ার। আর কামাল সমর্থকদের মনোবল চাঙ্গাভাব বিরাজমান।