বিভিন্ন দেশের সমরশক্তি-১

মিয়ানমারের সমরশক্তি

দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক শাসিত দেশ মিয়ানমার। মোট আয়তন ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫৫২ বর্গকিলোমিটার। উত্তর-দক্ষিণ এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২ হাজার ৮৫ কিলোমিটার। সর্বপশ্চিমে এর সর্বোচ্চ বিস্তার প্রায় ৯৩০ কিলোমিটার। উপকূলীয় এলাকাটি নিম্ন মিয়ানমার ও অভ্যন্তরীণ অংশটি ঊর্ধ্ব মিয়ানমার নামে পরিচিত। অশ্বখুরাকৃতি পর্বতব্যবস্থা ও ইরাবতী নদীর উপত্যকা দেশটির ভূ-সংস্থানের প্রধান বৈশিষ্ট্য। উত্তরের পর্বতগুলোর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হকাকাবো রাজির উচ্চতা ৫ হাজার ৮৮১ মিটার। এটি দণি-পূর্ব এশিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। আরো দু’টি পর্বতব্যবস্থা উত্তর থেকে দক্ষিণ বিস্তৃত। আরাকান ইয়োমা পর্বতমালাটি মিয়ানমার ও ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে একটি প্রাচীরের সৃষ্টি করেছে। এর পর্বতগুলোর উচ্চতা প্রধানত ৯১৫ মিটার থেকে ১ হাজার ৫২৫ মিটার পর্যন্ত। অন্য দিকে শান মালভূমি থেকে বিলাউকতাউং পর্বতশ্রেণীটি প্রসারিত হয়ে দণি-পূর্ব নিম্ন মিয়ানমার ও দণি-পশ্চিম থাইল্যান্ডের সীমান্ত বরাবর চলে গেছে। শান মালভূমিটি চীন থেকে প্রসারিত হয়েছে। এর গড় উচ্চতা প্রায় ১ হাজার ২১৫ মিটার। মিয়ানমারের অভ্যন্তরভাগে কেন্দ্রীয় নিম্নভূমিগুলো মূলত সরু ও দীর্ঘ। এগুলো ইরাবতী-সিত্তাং নদীর ব-দ্বীপ এলাকায় প্রায় ৩২০ কিলোমিটার প্রশস্ত। এ ব-দ্বীপীয় সমভূমিগুলো অত্যন্ত উর্বর ও দেশের সবচেয়ে অর্থনৈতিক গুরুত্ববিশিষ্ট অঞ্চল। এর মোট আয়তন প্রায় ৪৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমের আরাকান উপকূল ও দণি-পশ্চিমের তেনাসসেরিম উপকূল উভয়েই শিলাময় এবং এগুলোর কাছে অনেক দ্বীপ অবস্থিত। মিয়ানমারে বেশ কিছু উৎকৃষ্ট প্রাকৃতিক পোতাশ্রয় আছে।

সশস্ত্র বাহিনীর নাম টাটমাডো
দ্য মিলিটারি অব মিয়ানমারের অফিসিয়াল নাম টাটমাডো। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন এ বাহিনীর শাখা হচ্ছেÑ আর্মি, নেভি ও এয়ার ফোর্স। সশস্ত্র বাহিনীর সহযোগী বাহিনী দু’টি। একটি মিয়ানমার পুলিশ ফোর্স। অন্যটি পিপলস মিলিশিয়া ইউনিটস অ্যান্ড ফ্রন্টিয়ার ফোর্স। স্থানীয়ভাবে এটি নাসাকা নামে পরিচিত। নাসাকা মিয়ানমারের সীমান্ত প্রহরার কাজে নিয়োজিত। তবে মিয়ানমারের প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে এ পাঁচ বাহিনীর যেকোনো বাহিনীকে যেকোনো কাজ দেয় দেশটির সামরিক সরকার। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভের পর টাটমাডো দেশ পরিচালনায় প্রভাব বিস্তার করে আসছে। বর্তমানে দেশটির শাসন ক্ষমতা এ বাহিনীর হাতে।


মোট সৈন্য সাড়ে পাঁচ লাখ, বাজেট ৭.০৭ বিলিয়ন ডলার
মিয়ানমারের মোট সৈন্য ৫ লাখ ৬৪ হাজার। এ সংখ্যা বিশ্বে ২৬তম। এর মধ্যে ৪ লাখ ৯২ হাজার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। বাকি ৭২ হাজার আধাসামরিক বাহিনী বা নাসাকার সদস্য। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে মিয়ানমারের র‌্যাঙ্ক নবম। আর আধাসামরিক বাহিনী ২৬তম। টাটমাডোর বার্ষিক খরচ জানা না গেলেও ২০০৫ সালে সংস্থাটির জন্য সরকারের বাজেট ছিল ৭.০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা জিডিপি’র দুই দশমিক এক শতাংশ।

সমরসজ্জার উদ্দেশ্য অস্পষ্ট
মিয়ানমারের সীমান্তে পরিত্যক্ত বিমানবন্দর যুদ্ধ বিমানের ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে কাঁটাতারের বেড়া। কেউ বলছেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গার প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে চাচ্ছে। অনেকের ধারণা, বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই মিয়ানমারের এই সমরসজ্জা। বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে ব্যাপক সমর প্রস্তুতি চলছে। দীর্ঘমেয়াদি কোনো ল্য নিয়ে বেশ কয়েকটি স্থায়ী সামরিক স্থাপনা তৈরি করছে তারা। মিয়ানমারের এ সমরসজ্জার উদ্দেশ্য এখনো অস্পষ্ট। কারো কারো মতে, পরমাণু শক্তি অর্জন ও এ সম্পর্কিত গোপন স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিরাবলয় তৈরি করছে মিয়ানমার। আবার কেউ মনে করছেন, বাংলাদেশের সাথে বিতর্কিত সমুদ্রসীমার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে তারা। এত বড় বড় বিষয়ের খোঁজ রাখেন না যারা, সেসব সাধারণ মানুষের বিশ্বাস বাংলাদেশে চলে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমারে ফেরার পথ চিরতরে বন্ধ করাটাই আসল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের জন্য এর কোনোটিই উপোর নয়।

সেনাবাহিনীতে গড়ে তোলা হয়েছে নিউকিয়ার ব্যাটালিয়ন
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি মর্নিং হেরাল্ড সম্প্রতি সপ ত্যাগ করে অস্ট্রেলিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের দুই সামরিক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এক সংবাদ প্রকাশ করেছে। সাবেক সেনাকর্মকর্তা মোয়ে জোঁ জানিয়েছেন, বিদেশে গোপনে প্রশিণ পাওয়া সৈনিক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে সেনাবাহিনীতে গড়ে তোলা হয়েছে নিউকিয়ার ব্যাটালিয়ন। এর কার্যক্রম চলছে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের সেত পাহাড়ে। নোং লেইং পাহাড়ি এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে পরমাণু কমপ্লেক্স। মিয়ানমারের গোপন পারমাণবিক চুক্তি ও প্লুটোনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পে সহায়তা করছে উত্তর কোরিয়া। দণি মিয়ানমার হয়ে নৌপথে অতি গোপনে পারমাণবিক সরঞ্জাম আনা হচ্ছে। উত্তর কোরিয়ার একটি রহস্যজনক জাহাজ জুলাই মাসের প্রথম দিকে অজ্ঞাত বন্দরের উদ্দেশে ভারত মহাসাগরের দিকে যাত্রা করে। এক পর্যায়ে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ সেটি অনুসরণ করতে থাকায় জাহাজটি পাঁচ দিন পর আচমকা দিক পরিবর্তন করে উত্তর কোরিয়ার পথে ফিরতি যাত্রা করে। এ ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্রে প্রকাশ পাওয়া আগের তথ্যটির সমর্থন মিলেছে। রহস্যজনক জাহাজটি মিয়ানমারের জন্য পারমাণবিক সরঞ্জাম বহন করছিল বলেই ধারণা করা হয়।

উত্তর কোরিয়ার সহায়তায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টার অভিযোগ
খুব কম লোকই বিশ্বাস করে যে, সামরিক শাসনকবলিত হতদরিদ্র দেশ মিয়ানমার অদূর ভবিষ্যতে পরমাণু অস্ত্র নির্মাণ করবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এশিয়ার এ দেশটির প্রতি তাদের সন্দেহের তীর ছুড়ে দিয়েছেন। কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচিতে বিশ্বের দরিদ্রতম এ দেশটিকে সহায়তা করছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সম্প্রতি মিয়ানমারের উদ্দেশে উত্তর কোরিয়ার একটি জাহাজের যাত্রা, মিয়ানমারে বিশাল বিশাল সুড়ঙ্গ খননের ছবি ও দু’দেশের শীর্ষ পর্যায়ের একটি গোপন বৈঠক থেকে এ সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। সিরিয়ার সাথে মিয়ানমারের সহযোগিতামূলক সম্পর্ককেও সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। মিয়ানমারের মতো সিরিয়াও রুশদের দ্বারস্থ হয়েছিল। কিন্তু রুশরা দু’টি দেশকেই বিমুখ করেছে।
স্যাটেলাইটে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণ করে দণি কোরীয় গোয়েন্দা সংস্থা সন্দেহ করছে যে, গত জুলাই মাসের গোড়ার দিকে ‘কাং নাম-১’ নামে একটি উত্তর কোরীয় জাহাজ সন্দেহভাজন উপকরণ নিয়ে মিয়ানমারের পথে অগ্রসর হচ্ছিল। কিন্তু মার্কিন যুদ্ধজাহাজ বাধা দেয়ায় কোরীয় জাহাজটি তার গতিপথ পরিবর্তনে বাধ্য হয়। বাধা পেয়ে জাহাজটি স্বদেশে ফিরে আসে। ওয়াশিংটনের একটি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর সায়েন অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির সভাপতি ডেভিড অলব্রাইট বলেছেন, ‘সন্দেহজনক কোনো একটি ঘটনা ঘটছে। পরমাণু কর্মসূচিতে মিয়ানমারকে উত্তর কোরিয়া ক্রমবর্ধমান সহায়তা দান করছে বলে মনে করা হচ্ছে। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পরিস্থিতির প্রতি নজর রাখছি।’

রাখাইন রাজ্যে গড়ে তোলা হচ্ছে প্রতিরক্ষা বলয়
মিয়ানমারের অনেকেই এখন মনে করেন ভূগর্ভে পারমাণবিক বিস্ফোরণ কিংবা বিকল্প পারমাণবিক স্থাপনা তৈরি হচ্ছে রাখাইন রাজ্যে। আর এ জন্যই এর আশপাশের ২৬টি গ্রামের মানুষকে আশ্রয়হীন করা হয়েছে। এদের অনেকেই এখন বাংলাদেশে। মিয়ানমারের পারমাণবিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই বাংলাদেশের পাশে মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটে প্রতিরাবলয় গড়ে তোলা হচ্ছে বলে সে দেশের সচেতন অংশ ধারণা করছে। আগে থেকেই আন্দামান ও বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রসীমা পাহারায় এ অঞ্চলে তাদের শক্তিশালী নৌবাহিনীর অবস্থান রয়েছে। তার ওপর সাবমেরিন তৈরি কিংবা ঘাঁটি স্থাপনের দিকেও তারা অগ্রসর হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। রাখাইন রাজ্যে বিভিন্ন সামরিক স্থাপনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে দুর্গম পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে যুদ্ধবিমান ওঠানামার স্থায়ী ব্যবস্থা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি যেসব এয়ারস্ট্রিপ তৈরি করা হয়েছিল এত দিন তার অধিকাংশই ছিল অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত। এর সংখ্যা প্রায় এক ডজন। সাবেক আরাকান বর্তমান রাখাইনের এসব এয়ারস্ট্র্রিপের মধ্যে টেনডুয়ে, নাপলিত, টংগু এয়ার বেজকে মিয়ানমার বিমান বাহিনী আগেই ব্যবহার উপযোগী করে নিয়েছে। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর তীরের আকিয়াব অঞ্চলে আন, সামরি, তান্ডুয়ে এবং মইউ বা মউ নদীর পাশে মরাউকের পরিত্যক্ত চারটি সামরিক এয়ারস্ট্রিপ হস্তান্তর করা হয়েছে নৌবাহিনীর কাছে। নৌবাহিনী এগুলোকে তাদের নিজস্ব যুদ্ধ ও পরিবহন বিমানের জন্য ব্যবহার উপযোগী করে নেবে। গত বছর আকিয়াবের একটি স্থানীয় দৈনিকে খবরটি প্রকাশিত হলেও এখন পর্যন্ত এসব এয়ারস্ট্রিপের সংস্কার শুরু হয়নি। তবে নতুন করে কমপে আরো চারটিকে সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করছে মিয়ানমার।

বাংলাদেশের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে আধুনিক বিমান ঘাঁটি
বুচিডং শহরের ১৮ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমের লউ-এ ডং বিমান ঘাঁটিটি বিমান বাহিনীর নিজস্ব সুবিশাল আধুনিক বিমান ঘাঁটি হিসেবে তৈরি করছে তারা। আকাশপথে বাংলাদেশ সীমান্তের মাত্র ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটারের মধ্যেই এর অবস্থান। ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৮ থেকে ৯ কিলোমিটার চওড়া এ বিমান ঘাঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে কঠোর নিরাপত্তা ও নজরদারি নিশ্চিত করে। এর চার পাশে কমপে ২০টি দূরপাল্লার কামান বসিয়ে সার্বণিক পাহারা দেয়া হচ্ছে। কোনো বেসামরিক ব্যক্তিকে কাছাকাছি ঘেঁষতে দেয়া হয় না বলে পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। বর্তমানের আকিয়াব তথা সিটওয়ের বিমান ঘাঁটিটি লউ-এ ডং বিমান বন্দরসংলগ্ন এলাকায় স্থানান্তরিত হবে, নাকি দ্বিতীয় একটি বিমান ঘাঁটি হিসেবেই এটাকে রাখা হবে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ ছাড়াও বাংলাদেশের আরো কাছে নাইনচং এয়ারস্ট্রিপকেও সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ ছাড়াও পুরনো সেসনা ধরনের ুদ্র বিমান ওঠানামার উপযোগী সাহেববাজার ও দরগার বিল এয়ারস্ট্রিপকে বাড়িয়ে মিগ-২৯ এর মতো যুদ্ধজাহাজের ব্যবহার উপযোগী রানওয়ে তৈরির কাজ শুরু করা হয় গত শীতে। যদিও বর্ষার শুরুতেই প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার এ দু’টি সংস্কারকাজ থেমে গেছে। উখিয়া (কক্সবাজার) থানার ৪০ নম্বর সীমান্ত পিলার থেকে সোজা পূর্ব দিকে আকাশপথে মাত্র কয়েক মিনিটের দূরত্বে দরগার বিল এয়ারস্ট্রিপ।

আরো একটি বড় বিমান ঘাঁটি
বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছে আকিয়াব তথা (সাবেক আরাকান) বর্তমানের রাখাইন রাজ্যের সর্বপশ্চিমের বেসামরিক বিমান বন্দরটিকেও মিয়ানমার সম্প্রতি অন্যতম বড় বিমানবন্দর আকারে সম্প্রসারিত করেছে। বঙ্গোপসাগর তীরের এ সিটওয়ে বিমানবন্দরকে মিয়ানমারের অন্যতম বড় এয়ারফোর্স ঘাঁটি বলেও বিবেচনা করা হয়। যদিও সিটওয়ের কিয়াকপ্রু এবং থান্ডওয়েতে এয়ারফোর্স ঘাঁটির নিজস্ব দু’টি স্বতন্ত্র রানওয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফে মাছ বিক্রি করতে আসা আকিয়াবের একাধিক ব্যবসায়ী। এসব সংবাদ স¤প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিতও হয়েছে। জানা গেছে, এগুলোকে মিগ-২৯সহ অন্যান্য আধুনিক জঙ্গি ও বৃহদাকার বোমারু বিমান রাখা ও ওঠানামার উপযোগী করা হয়েছে গত বছর। সাথে বসানো হয়েছে সামরিক হেলিপ্যাড। শোনা যায়, সিটওয়ের এ বিমান ঘাঁটির অধীনে ২৪টি মিগ-২৯ জঙ্গি বিমান রয়েছে।
তা ছাড়াও সিটওয়ে বিমানবন্দরে এর মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে শক্তিশালী রাডার। একটি সূত্র দাবি করেছে, বাংলাদেশের কুমিল্লা কিংবা বরিশালের যেকোনো স্থান থেকে আকাশে কোনো বিমান উঠলেই মিয়ানমারের এ রাডারে ধরা পড়বে।

সমুদ্রে কর্তৃত্ব বিস্তারে রয়েছে বড় ধরনের প্রস্তুতি
বিমান বাহিনীর পাশাপাশি সমুদ্রে কর্তৃত্ব বিস্তারেও মিয়ানমারের বড় ধরনের প্রস্তুতির খবর প্রকাশিত হয়েছে। রাখাইন রাজ্যের মংডু ও বুচিডং থানাকে বিভক্ত করা মইউ নদীর মোহনায় আছে মিয়ানমার নৌবাহিনীর অন্যতম বড় ঘাঁটি। এখান থেকেই বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরের পশ্চিমাংশের টহল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সাথেই আছে নৌবাহিনীর নিজস্ব ডকইয়ার্ড। মইউ নদীর মোহনার গভীরতম স্থানকে এর মধ্যেই বিশেষভাবে সংরতি করা হয়েছে। এলাকাটিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে বয়া দিয়ে চিহ্নিত করা হয় গত জানুয়ারি মাসে। ডকইয়ার্ডকেও নাকি সেদিকে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। আর এসব আয়োজনকে আকিয়াব ও রেঙ্গুনের মানুষ সাবমেরিনের প্রস্তুতি বলে বিবেচনা করছে। কিন্তু স্থানীয় এ নেভাল ডকইয়ার্ডে সাবমেরিন তৈরির আয়োজন চলছে, নাকি পশ্চিমাঞ্চলীয় নৌবাহিনীর জন্য কেনা সাবমেরিনের ঘাঁটি গড়ে তোলা হচ্ছে সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।

মইউ মোহনার আয়োজনের নেপথ্যে পারমাণবিক প্রস্তুতির গন্ধ
সাবমেরিন ধারণার বাইরে কেউ কেউ আবার মইউ মোহনার আয়োজনের নেপথ্যে পারমাণবিক প্রস্তুতির গন্ধও পাচ্ছেন। বিশেষ করে স¤প্রতি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ পিছু নেয়ায় ভারত মহাসাগরমুখী উত্তর কোরিয়ার একটি রহস্যজনক জাহাজ ফিরে যাওয়ার পর এ ধারণার জন্ম নেয়। রহস্যজনক জাহাজটি মিয়ানমারের জন্য পারমাণবিক সরঞ্জাম বহন করছে বলে খবর প্রকাশ পাওয়ায় এবং নৌবাহিনীর মিইউ নৌঘাঁটিতে বাড়তি যেসব ব্যবস্থা করা হয়েছে সে প্রোপটেই এ ধারণা জোরালো হয়। নিরাপদে জাহাজ থেকে পারমাণবিক সরঞ্জাম খালাস করা ও এ কাজে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে সাবমেরিনের ব্যবহার হতেই পারে বলে তারা মনে করেন।

জনবসতি তুলে দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে টানেল
মিইউ নৌঘাঁটির পার্শ্ববর্তী ইয়াওয়ার্দি রেঞ্জে পাহাড়ের নিচে সুড়ঙ্গ (টানেল) তৈরি করা হচ্ছে। টানেলটি সামরিক কারণে নির্মাণ করা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। ২৬টি গ্রামের জনবসতি তুলে দিয়ে এ টানেল তৈরি করা হচ্ছে আরাকান সড়কের দৈর্ঘ্য কমিয়ে আনার ল্য সামনে রেখে। ২০০৪ সালে নাপাউলি থেকে টংগু পর্যন্ত পাহাড়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করে এবং কুলাডাইঙ্গা নদীতে সেতু বসিয়ে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পাহাড়ি রাস্তা কমিয়ে আনতে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শুরু হয়। কিন্তু টানেল তথা সুড়ঙ্গ তৈরির কাজে বিস্তর সময় নেয়া, তদারকিতে বিশেষ সামরিক টিমের তৎপরতার পাশাপাশি অতিমাত্রায় সতর্কতা অবলম্বনে সন্দেহ ক্রমেই ঘনীভূত হয়েছে। বিশেষ করে এর আগে মিয়ানমারের সামরিক সরকারবিরোধী প্রবাসীদের পরিচালিত নরওয়েভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল ‘ডেমোক্র্যাটিক ভয়েস অব বার্মা’ সংগৃহীত ও প্রচারিত নির্মীয়মাণ টানেলের ছবির অনুরূপ টানেল এ অঞ্চলে তৈরি হতে দেখে এ সন্দেহ দৃঢ় হচ্ছে। মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকা বড় ধরনের বোমা হামলা থেকে সুরতি করে উত্তর কোরিয়ার প্রকৌশলীদের প্রত্য তত্ত্বাবধানে বিশেষভাবে নির্মাণকাজের ছবিটি তারাও সন্দেহজনক হিসেবে প্রকাশ করেছিল।

মিয়ানমার একটি নাটকের সরঞ্জাম, যার স্ক্রিপ্ট রচিত হয়েছে ওয়াশিংটনে
মিয়ানমার আয়তনে প্রায় জর্জ ডব্লিউ বুশের টেক্সাসের সমান। মিয়ানমারের ট্রাজেডি হচ্ছে, এখানকার জনগণ একটি নাটকের পাত্রপাত্রী বা সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। যে নাটকের স্ক্রিপ্ট রচিত হয়েছে ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসি (এনইডি), জর্জ সরস ওপেন সোসাইটি ইনস্টিটিউট, ফ্রিডম হাউস ও জিন শার্পের আলবার্ট আইনস্টাইন ইনস্টিটিউট দ্বারা। এই আলবার্ট আইনস্টাইন ইনস্টিটিউট ইউএস ইন্টেলিজিন্সের একটি অ্যাসেট হিসেবে বিবেচিত। যেটি বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত বৈদেশিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে রক্তপাতহীন শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে।
ইউক্রেনের ‘অরেঞ্জ বিপ্লব’ কিংবা জর্জিয়ার ‘রোজ বিপ্লব’ এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার চার পাশের কৌশলগত বিরোধী দেশগুলোর অন্যান্য রঙ-বেরঙয়ের বিপ্লবের মতোই মিয়ানমারের ‘সাফ্রোন বিপ্লব’টি হচ্ছে ওয়াশিংটন-পরিচালিত শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের একটি অনুশীলন। বার্তা সংস্থা সিএনএন গত বছরের সেপ্টেম্বরের একটি ব্রডকাস্টে মিয়ানমারের বিােভগুলোতে এনইইডি’র সক্রিয় উপস্থিতির কথা উল্লেখ করেছে। এনইডি হচ্ছে ইউএস সরকারের অর্থায়নে চালিত একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানÑ যার কার্যকলাপ যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি ও উদ্দেশ্য সফল করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত। কোল্ড ওয়ারের সময় সিআইএ যা করত, এনইডি’র কাজ আজ অনুরূপ। মিয়ানমারের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে এনইডি, সরস ওপেন সোসাইটি ইনস্টিটিউটকে অর্থায়ন করে। ২০০৩ সালের ৩০ অক্টোবর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায়,‘ঞযব টহরঃবফ ঝঃধঃবং ধষংড় ংঁঢ়ঢ়ড়ৎঃং ড়ৎমধহরুধঃরড়হং ংঁপয ধং ঃযব ঘধঃরড়হধষ ঊহফড়সিবহঃ ভড়ৎ উবসড়পৎধপু, ঃযব ঙঢ়বহ ঝড়পরবঃু ওহংঃরঃঁঃব’ বাস্তবে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় সরকারবিরোধী সংগঠনের প্রধান নেতাদের নিযুক্ত করেছে ও প্রশতি করেছে। মিয়ানমারে কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্ট কম করে হলেও এনইডিকে বছরে ২.৫ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করেছে। যতটা জানা গেছে, শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের এই সাফ্রোন বিপ্লব অনেকাংশেই মিয়ানমারে সীমান্তবর্তী এলাকা থাইল্যান্ডের চাইং মাই থেকে পরিচালিত হয়েছে। কিছু কিছু েেত্র মিয়ানমারে বিপ্লবকে সংগঠিত করার কাজে যাওয়ার আগে কর্মীরা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে প্রশতি হয়েছে। এনইডি স্বীকার করেছে যে, তারা প্রধান বিরোধী মিডিয়া ‘নিউ এরা জার্নাল’, ‘ওৎৎধধিফফু’ ও ‘ডেমোক্র্যাটিক ভয়েস অব বার্মা রেডিও’-কে অর্থায়ন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন এত আগ্রহ
এসব আলোচনার পর একটি প্রশ্ন সবার মনেই উদ্রেক হতে পারে। মিয়ানমারের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের এত আগ্রহ কেন? গণতন্ত্র, ন্যায় ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র আন্তরিক বলেই মিয়ানমারের সামরিক শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন চায়Ñ এ ধারণা আমরা প্রথমেই বর্জন করতে পারি। ইরাক ও আফগানিস্তানের ঘটনাপ্রবাহের দিকে তাকালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রচারণার আড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য সব উদ্দেশ্য হাসিলের বিষয়টি পরিষ্কার হয়। তাহলে প্রশ্নটি হচ্ছে, কোন বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে এমন দূরবর্তী এলাকা মিয়ানমারের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনে এত উৎসাহিত করেছে? বিশ্বব্যাপী ‘ভূ-রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ’ প্রতিষ্ঠা এর উত্তর হতে পারে। এ েেত্র নিয়ন্ত্রণটি হচ্ছেÑ পারস্য উপসাগর থেকে দণি চীন সাগর পর্যন্ত কৌশলগত সমুদ্র পথটির নিয়ন্ত্রণ। আর মিয়ানমারের উপকূলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, পৃথিবীর অন্যতম প্রধান কৌশলগত সমুদ্রপথ ‘মালাক্কা প্রণালী’ তে নৌ-প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হয়। মালাক্কা প্রণালীটি হচ্ছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার অন্তর্বর্তী জাহাজ চলাচলের একটি সমুদ্র রুট বা পথ।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকেই সাম্ভাব্য সন্ত্রাসী আক্রমণ প্রতিহত করার ধুয়া তুলে পেন্টাগন ওই অঞ্চলে সামরিকীকরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার সর্বোত্তর পয়েন্ট ইধহফধ অপবয এ সুলতান ইস্কান্দার মুদা বিমান বাহিনী ঘাঁটি স্থাপন করেছে। মিয়ানমারসহ এ অঞ্চলের সরকারগুলো অবশ্য এখানে মার্কিন সামিরিকীকরণকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। মানচিত্রের দিকে এক পলক তাকালেই মিয়ানমারের কৌশলগত গুরুত্ব সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়।
ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারী মালাক্কা প্রণালী পারস্য উপসাগর ও চীন সাগরের মধ্যে ুদ্রতম সমুদ্র রুট। চীনের আমদানিকৃত তেলের ৮০ শতাংশের বেশি এই মালাক্কা প্রণালী দিয়ে তেলবাহী জাহাজ মারফত চীনে পৌঁছে। এর সরুতম অংশটি হচ্ছে সিঙ্গাপুর প্রণালীর ফিলিপস চ্যানেলÑ যা মাত্র ১.৫ মাইল প্রশস্ত। এই সরুতম চ্যানেলরিট পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম গড়ে ওঠা এনার্জি মার্কেট চীন ও জাপানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র পথ। এখান দিয়ে দৈনিক ১২ মিলিয়ন ব্যারেল তেল তেলবাহী জাহাজে করে পার হয়ে যায়। যদি প্রণালীটি বন্ধ হয়ে যায়, তবে পৃথিবীর অর্ধেক তেলবাহী জাহাজকে অনেক বেশি সমুদ্রপথ পাড়ি দিতে হবে। ফলে বিশ্বব্যাপী জলপথে পণ্য পরিবহনের খরচ অনেক গুণ বেড়ে যাবে। প্রতি বছর ৫০ হাজারেরও বেশি পণ্য ও তেলবাহী জাহাজ এই মালাক্কা প্রণালী দিয়ে যাতায়াত করে। মিয়ানমার থেকে ইন্দোনেশিয়ার ইধহফধ অপবয পর্যন্ত এলাকাটি দ্রুতই পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চোকপয়েন্ট হয়ে উঠছে। এই চোকপয়েন্টটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে চীনের এনার্জি সাপ্লাইকেও নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। তাই এ অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব বেইজিং হারিয়ে ফেলেনি। যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সাল নাগাদ মধ্যপ্রাচ্যে জ্বালানি তেলের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করলে চীন অনেক বেশি মিয়ানমারের দিকে ঝুঁকে পড়ে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ানমারের সাথে এ ঘনিষ্ঠতা মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট নয়। বরং এর সাথে এনার্জি ও সামরিক নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত।

বেইজিং মিয়ানমারকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছে
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিং মিয়ানমারকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছে। যার মধ্যে আছে ফাইটার, গ্রাউন্ড অ্যাটাক ও ট্রান্সপোর্ট, ট্যাঙ্ক, আরমার্ড মোটরযান, নৌবহর, এয়ার মিসাইল। চীন মিয়ানমারে পাকা রাস্তা, রেললাইন স্থাপন করে দিয়েছে ও বিনিময়ে মিয়ানমারে তাদের মিলিটারি ট্রুপসের প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে। ইন্ডিয়ান প্রতিরা সূত্র মতে, চীন মিয়ানমারের কোকো দ্বীপে একটি ইলেকট্রনিক নজরদারি কেন্দ্র স্থাপন করেছে ও ভারত মহাসাগরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একটি নৌঘাঁটি নির্মাণ করছে। প্রকৃতপ,ে মিয়ানমার হচ্ছে চীনের ভাষায় ‘মুক্তার মালা’। মালাক্কা প্রণালীতে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে মোকাবেলা করার জন্য কৌশলগতভাবে মিয়ানমারকে চীনের প্রয়োজন। উপরন্তু, মিয়ানমার, কী উপকূলবর্তী অংশÑ কী উপকূল দূরবর্তী অংশ, জ্বালানি-খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ।

শেষ কথা
মিয়ানমার আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে পাঁচ গুণ বড়। দেশটির উপকূলের দৈর্ঘ্যও বাংলাদেশ থেকে পাঁচ গুণ বড়। প্রায় ২ হাজার ৮৩২ কিলোমিটার। কিন্তু জনসংখ্যা বাংলাদেশের অর্ধেকেরও কম। বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে প্রায় ৬৩ কিলোমিটার জলসীমা। বাকি ২০৮ কিলোমিটারজুড়ে রয়েছে দুর্গম পাহাড়ি অরণ্য ও বিচ্ছিন্ন জনপদ। এর সবটাই প্রতিবেশী দেশটির সাবেক আরাকান তথা বর্তমানের রাখাইন রাজ্য। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে তমব্রুর যোগবইন্যা থেকে থানচির বড় মোদক পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা দুর্গম ও অনেকটাই অরতি। বর্তমানে মিয়ানমার যেভাবে সামরিক স্থাপনা সম্প্রসারণ শুরু করেছে তাতে বিষয়টিকে আর সীমান্ত রার আয়োজন বলে বিবেচনা করার অবকাশ নেই।

একনজরে টাটমাডো
শাখা : মিয়ানমার আর্মি, মিয়ানমার নেভি, মিয়ানমার এয়ার ফোর্স
সহযোগী শাখা : মিয়ানমার পুলিশ ফোর্স, মিয়ানমার ফ্রন্টিয়ার ফোর্স (নাসাকা)
আর্মড ফোর্সেস : ৪,৯২,০০০ জন
অ্যাকটিভ সৈন্য : ৪,৯২,০০০ জন
আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য : ৭২,০০০ জন
মোট সৈন্য : ৫,৬৪,২৫০ জন
বার্ষিক বাজেট : ৭.০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০০৫)
ব্যাটের ট্যাঙ্ক : ১৫০
এলটি ট্যাঙ্ক : ১০৫
এপিসি : ৩২৫
টুয়ার্ড আর্টিলারি : ২৭৮
মর্টার : ৮০
এ এ গান : ৪৬
কমব্যাট এয়ারক্র্যাফট : ১২৫
ফাইটার গ্র্যাউন্ড অ্যাটাক : ২২
ফাইটার : ৫৮
পরিবহন বিমান : ১৫
হেলিকপ্টার : ৬৬
করভেটস : ৪
মিসাইল : ১১
টর্পেডো : ১৩
ইনসোর রিভারইন : ৪৭
ল্যান্ডিং ক্র্যাফট : ১১

সূত্র : মিলিটারি ব্যালান্স, উইকিপিডিয়া, ওয়েবসাইট

Source : www.pavelmostafiz.blogspot.com