গৌরনদীর চাঞ্চল্যকর শিক্ষক ফরিদ হত্যাকান্ডের প্রকৃত খুনী ৩৫দিন পর শ্রীমঙ্গলে গ্রেফতার

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বরিশালে গৌরনদী উপজেলার চাঞ্চল্যকর প্রাইমারি শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দার হত্যাকান্ডের দীর্ঘ ৩৫ দিন পর মূল খুনীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের গোদা বাজার এলাকায় আত্মগোপনে থাকা খুনী আবুল কালাম ওরফে কালু সরদারকে বুধবার রাতে পুলিশ গ্রেফতার করে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাকে গৌরনদী থানায় আনা হয়। থানা অভ্যন্তরে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ, নিহতের স্বজন, সংবাদকর্মী ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতে গ্রেফতারকৃত খুনী কালু সরদার শিক্ষক হত্যাকান্ডের কথা অকপটে স্বীকার করেছে।

খুনী কালুর ভাষ্যমতে, ঘটনার দিন ২২ (সেপ্টেম্বর) ধারালো ছুরি দিয়ে শিক্ষক ফরিদকে আঘাত করে হত্যা করেছি। এরপর ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বাগানে লুকিয়ে ছিলাম। এলাকার মধ্যে ৫দিন আত্মগোপনে থাকার পর এলাকা ত্যাগ করেছি। গত ৮দিন পূর্বে পিঙ্গলাকাঠীর বাসিন্দা বর্তমানে শ্রীমঙ্গলের গোদা বাজার এলাকায় বসবাসকারী আলাম সরদারের ভাড়া বাসায় আমি আত্মগোপন করেছিলাম।

গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম’র জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থানার গোদা বাজার এলাকা থেকে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের সহায়তায় বুধবার সন্ধ্যায় খুনী কালু সরদারকে (২৭) গ্রেফতার করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান জানান, খুনী আবুল কালাম ওরফে কালু সরদার দক্ষিণ পিঙ্গলাকাঠী গ্রামের আব্দুল খালেক সরদারের পুত্র।

এদিকে শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দারের হত্যার প্রকৃত খুনী গ্রেফতারের সংবাদ মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পরলে খুনী কালুকে একনজর দেখার জন্য আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত থানা কম্পাউন্ড এলাকায় বিভিন্ন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, নিহতের স্বজনেরা ও স্থানীয় লোকজন ভীড় করেন। এ সময় খুনী কালুর ওপর চড়াও হয়ে তাকে মারধরের জন্য নিহতের স্বজনেরা উদ্বত্ত হলে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে। পরবর্তীতে ওইসব শিক্ষক নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় সংবাদকর্মী, উপস্থিত লোকজন ও নিহতের পরিবারের সম্মুখে খুনী কালু একাই এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কড়াপুলিশ পাহারায় খুনী কালুকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার জন্য বরিশাল আদালতে প্রেরন করা হয়।

চাঞ্চল্যকর এ মামলার বাদি ও নিহত শিক্ষকের বড়ভাই স্কুল শিক্ষক শাহ জালাল জমাদ্দার থানা কম্পাউন্ড এলাকায় বসে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও হত্যাকান্ডের প্রকৃত খুনীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তিনি দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে তার ভাইয়ের হত্যাকারীকে ফাঁসি দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

উল্লেখ্য, গত ২২ সেপ্টেম্বর গৌরনদী উপজেলার পিঙ্গলাকাঠী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ও চাঁদশী গ্রামের মৃত মোকসেদ আলী জমাদ্দারের পুত্র ফরিদ জমাদ্দার (২৮) স্কুলে যাওয়ার পথিমধ্যে পিঙ্গলাকাঠীর কর্মকার বাড়ির নির্জনস্থানে পৌঁছলে স্থানীয় যুবদল ক্যাডার কালু সরদার ছুরিকাঘাত করে শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দারকে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের পর পরই খুনী কালু সরদার এলাকা থেকে আত্মগোপন করে। এদিকে হত্যার ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি বিশেষ মহলের ইঙ্গিতে নিহতের ভাই স্কুল শিক্ষক শাহ জালাল জমাদ্দার বাদি হয়ে গৌরনদী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার প্রধান আসামি করা হয় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ নয়ন শরীফ ও সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি মোঃ কাজল হাওলাদারসহ ৫জনকে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে মোবাইল ফোনের কল লিষ্টের সূত্রধরে পুলিশ হত্যার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করে প্রকৃত খুনী যুবদল ক্যাডার কালুকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।

পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকার এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে কালু সরদারের দীর্ঘদিন থেকে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিলো। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে তাদের সম্পর্কের ফাঁটল ধরে। প্রবাসীর শিশু পুত্র পিঙ্গলাকাঠী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেনীতে পড়াশুনা করতো। শিশুপুত্রকে নিয়ে প্রবাসীর স্ত্রী স্কুলে যাতায়াতের সুবাধে তার সাথে মেধাবী শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দারের পরিচয় হয়। একপর্যায়ে প্রবাসীর বাড়িতে শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দার যাতায়াতের সুবাধে তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এতে যুবদল ক্যাডার কালু ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দারকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। পুলিশ আরো জানায়, নিহত শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দার ও প্রবাসীর স্ত্রীর ফোন কললিষ্টের সূত্র ধরেই তাদের সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। পরবর্তীতে খুনী কালুর ফোন কললিষ্টের সূত্র ধরে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর একটি সূত্র জানায়, এর আগেও কালু একই এলাকার আরেক গৃহবধূর সাথে পরকীয়ার সর্ম্পক গড়ে তোলে। একপর্যায়ে ওই বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে গৃহবধূর স্বামী তাকে ত্যাগ করেন।