বরিশালের ২৬ ডায়গনষ্টিক ও ৪টি ক্লিনিকের রেজিষ্ট্রেশন নেই

শাহীন হাসান, বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বরিশালের ৯টি উপজেলায় ৫৩টি ক্লিনিক ও ডায়গনষ্টিক সেন্টার চলছে অবৈধভাবে। সরকারি নিয়মনীতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বছরের পর বছর চলছে এই ক্লিনিক ও ডায়গনষ্টিকগুলো। নেপথ্যে রয়েছে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য পরিচালক অফিসের কতিপয় দুর্নীনিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সূত্রে জানা যায়, বরিশাল জেলায় ৮টি ক্লিনিক ও ৪৫টি ডায়গনষ্টিক সেন্টার রয়েছে। ৪টি ক্লিনিক ও ১৯টি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের রেজিষ্ট্রেশন রয়েছে। বাকি ২৬টি ডায়গনষ্টিক ও ৪টি ক্লিনিকের কোন রেজিষ্ট্রেশনই নেই। এক বছর পরেই লাইসেন্সের নবায়ন করার সরকারি নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর থেকে এ বছর পর্যন্ত ক্লিনিক ও ডায়গনষ্টিকগুলোর লাইসেন্স হালনাগাদ নেই। এক কথায় নিয়ম অনুযায়ী সবগুলোই চলছে অবৈধভাবে।

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১ বছর পর বা প্রয়োজন অনুযায়ী উপজেলার ক্লিনিক ও ডায়গনষ্টিকগুলো পরিদর্শনে যাওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালী থেকে নির্দেশিত ২২টি মূল শর্তের ভিত্তিতে পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে দেখা যায়, ২০ জানুয়ারি গৌরনদীর ভুরঘাটায় ২০ শয্যা বিশিষ্ট আল-আরব মেডিকেল সেন্টার পরিদর্শনে গেলে মাত্র ৬টি শর্তের উপস্থিতি দেখা যায়। এই উপজেলায় সরেজমিনে দেখা যায়, প্রত্যেকটি ক্লিনিক ও ডায়গনষ্টিকের ২/১ টার সনদ ছাড়া বাকিগুলোর কোন সনদ নেই। ক্লিনিক ও ডায়গনষ্টিকের রেজিষ্ট্রেশন পেতে হলে পরিবেশ সনদ, ফায়ার সার্ভিস সনদ, কর্পোরেশন সনদ, সিভিল সার্জন অফিস ক্লিয়ারেন্স এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালীর অনুমতিসহ কমপক্ষে ৫টি সনদ দরকার। সিভিল সার্জন অফিসের যোগসাজশে মালিকরা নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করেই বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

৯টি উপজেলার রেজিষ্ট্রেশনবিহীন ক্লিনিক ও ডায়গনষ্টিকগুলো হলো আগৈলঝাড়ায় জান্নাত ডায়গনষ্টিক সেন্টার, শারমিন ডায়গনষ্টিক সেন্টার, আগৈলঝাড়া প্যাথলজী, গ্রামীণ প্যাথলজী, ফেয়ার ডায়গনষ্টিক সেন্টার, কমিউনিটি স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন কেন্দ্র, আলোশিখা কাঠিরা চক্ষু ক্লিনিক, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রজেক্ট, বিএম মেটারনিটি হাসপাতাল, লাবিব ডায়গনষ্টিক সেন্টার, মৌরী ডায়গনষ্টিক সেন্টার, ডক্টরস ক্লিনিক ও ডায়গনষ্টিক সেন্টার, শাপলা ক্লিনিক ও ডায়গনষ্টিক সেন্টার, সোনার বাংলা ডায়গনষ্টিক সেন্টার, রোজ ডায়গনষ্টিক সেন্টার, স্বর্ণা ডায়গনষ্টিক সেন্টার, আঁখি ডায়গনষ্টিক সেন্টার, আল-আরব ক্লিনিক, আল-আরব ডায়গনষ্টিক সেন্টার, আশা ডায়গনষ্টিক সেন্টার, সান ডায়গনষ্টিক সেন্টার, শাপলা এক্সরে ক্লিনিক, ডাক্তার মোস্তাফিজ ডায়াবেটিজ হাসপাতাল ও ডায়গনষ্টিক সেন্টার, পপুলার ডায়গনষ্টিক সেন্টার, মা-মনি ডায়গনষ্টিক সেন্টার, পলি ডায়গনষ্টিক সেন্টার, শারমিন ক্লিনিক, শেফা ডায়গনষ্টিক সেন্টার, নিরাময় ডায়গনষ্টিক সেন্টার, বনানী ডায়গনষ্টিক সেন্টার, অশোকাঠী প্যাথলজী, মুলাদী ফেয়ার ক্লিনিক ও ডায়গনষ্টিক সেন্টার, প্রিতম ডায়গনষ্টিক সেন্টার, হিজলা উপজেলার সান এক্সরে এন্ড প্যাথলজী সেন্টার, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার আল-হেরা এক্সরে এন্ড প্যাথলজী, পিপলস ডায়গনষ্টিক সেন্টার, বাবুগঞ্জের গ্রীন লাইফ ডায়গনষ্টিক সেন্টার, নির্ণয় প্যাথলজী ও এক্সরে সেন্টার, বানারীপাড়ায় ইউনাইটেড সেবা সনদ নার্সিং হোম, মনোয়ারা ডায়গনষ্টিক সেন্টার, নিউ বনানী প্যাথলজী, ইউনাইটেড ডায়গনষ্টিক সেন্টার, দি পপুলার ডায়গনষ্টিক সেন্টার, মেডিএইড, উজিরপুর দি মর্ডান ডায়গনষ্টিক সেন্টার, সরফুদ্দিন আহম্মেদ মাতৃমঙ্গল হাসপাতাল, ডিজিটাল ডায়গনষ্টিক সেন্টার, গ্রামীণ ক্লিনিক এন্ড ডায়গনষ্টিক সেন্টার, বাকেরগঞ্জ উপজেলায় পলি ক্লিনিক ও ডায়গনষ্টিক সেন্টার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ক্লিনিক মালিকরা বলেন, বরিশাল সিভিল সার্জন অফিসের দুর্নীতির কারণে আমরা রেজিষ্ট্রেশন পাই না। অনেক সময় ফাইল থেকে মূল কপি গায়েব করে ফেলে। এভাবে তারা আমাদের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্য করে থাকে। সরকারি সকল শর্তাবলী মেনে নিয়ে ক্লিনিক ও ডায়গনষ্টিক পরিচালনা করেন না কেন এই প্রশ্নের কোন সদুত্তর মেলেনি। সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান বলেন, শীঘ্রই জেলার সকল ক্লিনিক এবং ডায়গনষ্টিক সেন্টারগুলো পরিদর্শনে যাবেন।