দোয়েল কি টেলিটক হবে ?

মোস্তফা জব্বারঃ আমরা এখন জানি যে, দোয়েল বাংলাদেশে তৈরি ল্যাপটপ নয়, বাংলাদেশে সংযোজিত ল্যাপটপ। এর সব যন্ত্রাংশ চীন থেকে আমদানি করা এবং টঙ্গীতে অবস্থিত টেলিফোন শিল্প সংস্থায় এটি সংযোজিত হয়েছে। দোয়েল ল্যাপটপ সংযোজন করেছে সরকারের টিএ্যান্ডটি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ টেলিফোন শিল্প সংস্থা। এক সময়ে এটি ফিঙ্ড ফোন সেট বানাতো। তবে ফিঙ্ড ফোনের দুর্দশার সঙ্গে সঙ্গে ওদের ফোন প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে। বিশাল অবকাঠামো নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন বা এই জাতীয় কোন ডিজিটাল ডিভাইস তৈরি করার প্রকল্প গ্রহণ করবে এটাই স্বাভাবিক। সেই সূত্র ধরেই ল্যাপটপ প্রকল্পের সূচনা। তবে যতদূর জানা যায়, তাদের ল্যাপটপ প্রকল্পটি বেশ পুরনো। অনেক দিন আগেই এর সূচনা হয়। শুরুতে এটি পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) প্রকল্প ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় এটি এখন পিপিপিতে নেই। অরিজিনালি পিপিপি মডেলে শুরু করা প্রকল্পটি এতদিনে সরকারের নিজস্ব প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। পিপিপির উদ্যোক্তারা প্রতারণা ও দায়িত্বহীনতার অভিযোগে অভিযুক্ত।

গোড়া থেকেই দোয়েল তৈরি করার প্রকল্পটি খুব স্মুথলি চলেনি। শুরু থেকেই এতে নানা সঙ্কট তৈরি হতে থাকে। বিশেষ করে পিপিপির উদ্যোক্তারা একে তাদের নিজস্ব স্বার্থে ব্যবহার করে সরকারকে ঠকানোর চেষ্টা করায় এটি বিপন্ন হয়ে পড়ে। দৈনিক সমকাল পত্রিকার ১৫ অক্টোবর ২০১১ সংখ্যার ২০ পাতায় এই বিষয়ে একটি খবর ছাপা হয়েছে। খবরটির শিরোনামটিই ভয়াবহ খারাপ অবস্থার সঙ্কেত প্রদান করে। খবরটির শিরোনাম ছিল : "সরকারি ল্যাপটপ তৈরিতে বেসরকারি লুটপাট।" খবরের প্রথম অনুচ্ছেদটি হলো : "সরকারি ব্যবস্থাপনায় দোয়েল ল্যাপটপ-নেটবুক তৈরিতে রীতিমতো হরিলুট চলছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সহায়তায় বেসরকারী একটি কোম্পানি লুটে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। নামকাওয়াসত্মে মূলধন দিয়েই ল্যাপটপ কোম্পানির ৩৫ শতাংশের মালিকানাও বাগিয়ে নিয়েছে বেসরকারি কোম্পানি ২এম টেকনোলজিস লিমিটেড। ক্যাপিটাল গুডস সরবরাহের নামে কোম্পানিটি টেবিল চেয়ার আর জেনারেটরের মতো পণ্য মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করেছে বলে দেখিয়েছে। বাসত্মবে এসব পণ্যের মধ্যে পুরনো ও ব্যবহৃত পণ্যের ছড়াছড়ি।" এমন ভয়ঙ্কর খবর যদি কোন একটি প্রকল্প সম্পর্কে সত্য হয় তবে সেই প্রকল্পটির মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো যে কতটা কঠিন সেটি সবাই অনুভব করতে পারেন।
খবরটিতে অভিযোগ করা হয় যে, আমদানি করা পণ্যের দাম তিন-সাড়ে তিনগুণ দেখানো হয়েছে। ২এমকে টিএ্যান্ডটি মন্ত্রণালয়ের এক পদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয়র প্রতিষ্ঠান বলে উলেস্নখ করা হয়েছে। খবরে টেলিফোন শিল্প সংস্থার প্রধান নির্বাহীকেও ওই কর্মকর্তার আত্মীয় বলে উলেস্নখ করা হয়। খবরে বলা হয়, তিনি নাকি এখন এই কোম্পানির ১৭ শতাংশেরও মালিক। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে এই কর্মকর্তা বিগত সরকারের আমলে চারদলীয় জোটের খেদমতকারী হিসেবে নিজেকে ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠা করলেও এই সরকারের আমলে তার রূপ পাল্টাতে সৰম হন এবং মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের সুনজরে পড়েন। খবরের ভয়াবহ অংশটি হলো, কোন বিনিয়োগ না করে টিএফটির শেয়ার পাওয়া এবং বিনিয়োগের নামে ২এম-এর প্রতারণা। খবরটির একটু সুসংবাদ হলো যে, টিএ্যান্ডটি মন্ত্রী কিছু অনিয়ম শুনেছেন বলে স্বীকার করেছেন এবং এসব অনিয়মের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। এই নিবন্ধ লেখার সময় পর্যনত্ম (২৮ অক্টোবর) টিএ্যান্ডটি মন্ত্রণালয় প্রকাশিত খবরের কোন প্রতিবাদ করেনি। ফলে খুব সহজেই অনুভব করা যায় যে, খবরটির সত্যতা আছে। খবর প্রকাশের পর অনেক দিন অতিবাহিত হয়েছে এবং আমরা আশা করি বিষয়টির প্রতি সংশিস্নষ্ট মন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টি পড়েছে এবং তিনি এ বিষয়ে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। যদি তা নাও হয়ে থাকে তবে প্রকল্পটিকে সফল করার জন্য তিনি সচেষ্ট হবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

দোয়েলের চারটি মডেল : দোয়েলের ওয়েবসাইট, দৈনিক ডেইলি স্টারের খবর, টেশিসের ব্রসিউর এবং সরাসরি ল্যাপটপগুলো দেখে আমরা যেসব তথ্য পেয়েছি তাতে দোয়েলের চারটি মডেল বিরাজ করে। মডেলগুলো হলো ২১০২, ০৭০৩, ২৬০৩ এবং ১৬১২। এসব সংখ্যা অর্থবহ। সবকটি আমাদের জাতীয় জীবনের গুরম্নত্বপূর্ণ দিনকে স্মরণ করে। ২১০২ আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনকে স্মরণ করায়। ০৭০৩ জাতির জনকের ঐতিহাসিক ভাষণকে স্মরণ করায়। ২৬০৩ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ১৬১২ আমাদের বিজয় দিবস। তবে দোয়েল ল্যাপটপের জন্য এসব তারিখ নির্ধারণ করা কি একেবারেই জরম্নরী ছিল কিনা সেটি উপলব্ধি করা কঠিন। কোন একটি পণ্যের মডেলেও এসব তারিখকে যুক্ত করা কি বুদ্ধিমানের কাজ? বিশেষ করে ভাষা আন্দোলনের তারিখের মডেলে যদি বাংলা ভাষাই না থাকে তবে এর নামাকরণ মোটেই সঙ্গত নয়।

২১০২ মডেলটি ভাষা আন্দোলনের প্রতীক হলেও এতে বাংলা ভাষা নেই। এর ওএস বাংলাবিহীন এন্ড্রয়েড বা উইন্ডোজ সিই। ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করে এন্ড্রয়েডের জন্য প্রণীত একটি বাংলা সফটওয়্যার পাওয়া গেছে, যার নাম মায়াবী। এটি ডাউনলোড করে দেখা গেছে যে সেটি কাজ করে না। অন্যদিকে এই মডেলটিতে উইন্ডোজ সিই ইনস্টল করা যায়। উইন্ডোজ সিইর জন্যও কোন বাংলা সফটওয়্যারেরও সন্ধান পাওয়া যায়নি। এটি ভায়া ৮০০ মেগাহার্টজ গতির প্রসেসরে চলে। এতে ১৬ জিবি স্ট্যাটিক মেমোরি ও ৫১২ এমবি র্যাম আছে। এতে কোন হার্ডডিস্ক নেই। এর পর্দার আকার ১০ ইঞ্চি। এর দাম দশ হাজার টাকা। এতে আমাদের চেনা জানা এ্যাপিস্নকেশনগুলো চলবে না। কি বিবেচনায় একুশের সাথে এই মডেলটিকে যুক্ত করা হলো সেটি আমি অনত্মত বুঝি না। বাংলাবিহীন একটি মডেলের সঙ্গে একুশে ফেব্রম্নয়ারি যুক্ত করে আমরা কি ভাষা শহীদদের মর্যাদা বাড়ালাম, না কমালাম?

দোয়েল ল্যাপটপের সবচেয়ে ভাল মডেলটি ০৭০৩। এতে এটম প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। ১ জিবি ডিডিআর৩ মেমোরি রয়েছে। হার্ডডিস্ক রয়েছে ২৫০ জিবি। দাম এবং কনফিগারেশন হিসেবে এটি দোয়েলের সেরা মডেল। এতে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা সম্ভব। আমি নিজে বিজয় ল্যাপটপের এমন একটি মডেল ব্যবহার করি। ইন্টারনেটে যোগাযোগ, লেখালেখি, গ্রাফিঙ্ ডিজাইন এবং মাল্টিমিডিয়ার কাজে এটি ব্যবহার করতে কোন সমস্যা হয় না। হাইএন্ড গ্রাফিঙ্ মাল্টিমিডিয়া বা থ্রিডি গেমস খেলার জন্য এটি হয়ত সুবিধার নয়। কিন্তু সাধারণভাবে সব কাজ করার জন্য এটি যথেষ্ট। এর দামও তুলনামূলকভাবে কম। ১৩৫০০ টাকা। তবে এর ব্যাটারি ৩ সেল না হয়ে ৬ সেল হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল।

২৬০৩ মডেলটির ১২.১ ইঞ্চি পর্দার। এতে ২ জিবি র্যাম ও ৩২০ জিবি হার্ডডিস্ক রয়েছে। এর প্রসেসরও এটম। এতেও লিনাঙ্ বা উইন্ডোজ ব্যবহার করা যাবে। এই মডেলটিতে বস্নুটুথ রয়েছে। এটির দাম ২০ হাজার টাকা। আমরা এর যে স্পেসিফিকেশন দেখেছি তাতে মনে হচ্ছে যে, এই মডেলটিকে বাজারে প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে। বাজার ঘুরে আমরা দেখেছি, চীন থেকে আমদানি করা এ ধরনের ল্যাপটপের দাম এর চাইতে অনেক বেশি নয়। ফলে বেসরকারী খাতের সঙ্গে এই মডেলটিক প্রতিযোগিতা করতে হবে। এর দাম কিছুটা কমানো প্রয়োজন বলে আমার মনে হয়েছে।

দোয়েলের হাইএ্যান্ড মডেলটি হলো ১৬১২। এটির প্রসেসর পেনটিয়াম। এর পর্দা ১৪ ইঞ্চি। এতে ডিভিডি রাইটার রয়েছে। এর সুযোগ-সুবিধা ২৬০৩-এর মতোই। তবে দাম ২৬ হাজার ৫শ' টাকা। বাজারের সঙ্গে তুলনা করলে এই মডেলটির মূল্য কিছুটা কম বলে মনে হচ্ছে। এ ধরনের ল্যাপটপ আরও তিন-চার হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়।

সব মডেল দেখার পর এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে, দোয়েলের সব মডেল সমভাবে জনপ্রিয় হবে না। একেবারে প্রাথমিক মডেল ২১০২ সম্পর্কে প্রচুর প্রশ্ন রয়েছে। থাকাটাই স্বাভাবিক। এটিতে যেহেতু পরিচিত অপারেটিং সিস্টেম নেই সেহেতু সবারই জানার বিষয় এটি দিয়ে কিভাবে কি কি কাজ করা যাবে। তবে অন্য মডেলগুলো সম্পর্কে এমন জটিল প্রশ্ন বিরাজ করে না। এতে টেশিসের দেয়া উবুন্টু ফেলে দিয়ে উইন্ডোজ ইনস্টল করা যায় বলে ব্যবহারকারীর তেমন দুশ্চিনত্মা নেই।

আমরা মনে করি বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির ইতিহাসের মাইলফলক এই ঘটনাটি দেশের কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ব্যবসার ৰেত্রে একটি বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। আমরা দোয়েল আত্মপ্রকাশের পর পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে তথ্যপ্রযুক্তি জগতে কতগুলো প্রভাব চিহ্নিত করেছি।

ক. এখনও সরকারের উপর আস্থা : দোয়েল একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান তৈরি করার পরও মানুষের ব্যাপক আগ্রহ থাকায় এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, সরকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা এখনও পুরোপুরি উঠে যায়নি। মানুষ মনে করে যে, সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এখনও ভালও কিছু আশা করা যায়। মানুষের এই আস্থাটি সরকারের জন্য সুখকর।

খ. কম দামী নেটবুকের বাজার : বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির বাজারে কম দামের নেটবুকের একটি বিশাল বাজার রয়েছে। বিশেষ করে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মাঝে একটি ল্যাপটপ সাধারণ মানুষের ব্যাপক আগ্রহের বস্তুতে পরিণত হয়েছে।

এমন একটি অবস্থায় দোয়েল প্রকল্পটিকে রৰা করা খুবই জরম্নরী। এজন্য কিছু কার্যকর পদৰেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রথমত এই প্রকল্পটিকে মন্ত্রণালয়ের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে বের করে একটি বাণিজ্যিক প্রকল্প হিসেবে স্বাধীনভাবে পরিচালনা করতে হবে। মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক পুঁজি সরবরাহ করতে পারে। তবে সেই পুঁজি যেন এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারকে ফেরত দেয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের উচিত নয় এই প্রতিষ্ঠানটিকে সাবসিডি দিয়ে পরিচালনা করা। আর দশটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে রূপানত্মর করাও এর লৰ্য হওয়া উচিত নয়। সরকার এই প্রতিষ্ঠানের পণ্য ক্রয় করলেও এর মূল লৰ্য হওয়া উচিত বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়া। সরকার এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে বাণিজ্যিক মূল্যে ল্যাপটপ কিনে সাবসিডি দিয়ে স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতরণ করতে পারে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটিকে সরাসরি সাবসিডি দেবার কোন প্রয়োজন নেই। প্রতিষ্ঠানটি যাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার বাইরে দুর্নীতিমুক্তভাবে পরিচালিত হয় এবং কোন মহলই যাতে এখান থেকে আর্থিকভাবে লুটপাট করার ফায়দা নিতে না পারে সেদিকে লৰ্য রাখতে হবে।

যদি এই প্রতিষ্ঠানটিকে বাণিজ্যিকভাবে সফল হতে হয় তবে সেই সফলতার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য এর উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, বাজারজাতকরণ, গ্রাহক সেবা ইত্যাদিকে পরিকল্পিতভাবে দৰ ও লাগসই করতে হবে। ১১ অক্টোবর এই পণ্যের উদ্বোধন করার পর ২৮ অক্টোবর পর্যনত্ম এটি বাজারে না ছাড়ার মতো ঘটনা কোনভাবেই এই প্রকল্পকে বাণিজ্যিকভাবে সফল করতে পারে না। টেশিসের গুদামে পণ্যের সত্মূপ জমা রেখে তার বিক্রির নেটওয়ার্ক গড়ে না তোলা, এর গ্রাহক সেবার কোন ব্যবস্থা না করা এবং এর গুণগত মান যাচাই না করা মোটেই একটি সফল প্রতিষ্ঠানের কাজ হতে পারে না।

দ্বিতীয়ত টেশিসকে এই পণ্যের হার্ডওয়্যার উৎপাদনেই মনোযোগ দিতে হবে। কারণ এর সঙ্গে কোন অপারেটিং সিস্টেম দিতে হবে বা কোন লাইসেন্স দিতে হবে সেটি ভাবতে হলে এই পণ্যের মূল্য বাড়বে। টেশিস শুধু হার্ডওয়্যার উৎপাদন করে বাজারজাত করতে পারে। ব্যবহারকারী তার পছন্দমতো অপারেটিং সিস্টেম বা এ্যাপিস্নকেশন প্রোগ্রাম বাছাই করে নেবে। এতে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ইচ্ছা বাসত্মবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করে বাজার চাহিদা দেখতে হবে। বাজারে প্রচলিত নয় এমন কীবোর্ড বা ওএস বা এ্যাপিস্নকেশন এই পণ্যের সঙ্গে বান্ডল করার কোন যুক্তি নেই। আমি লৰ্য করেছি যে, টেশিস ওএস ও কীবোর্ড বিষয়ে তার পণ্য বাজারে ছাড়ার জন্য এমন কিছু কাজ করছে যা তার করার দরকার নেই। এখানে এটি মনে রাখা দরকার যে, ব্যবসা মানে বাজার চাহিদা পূরণ করা। কোনটি ভাল আর কোনটি মন্দ, কোনটি ল্যাপটপে থাকবে আর কোনটি থাকবে না তার সিদ্ধানত্ম বাজার চাহিদার ভিত্তিতে নিতে হবে। আমি নিজে কোন একটি বিশেষ কীবোর্ড বা অপারেটিং সিস্টেম পছন্দ করতে পারি। আমি কোন একটি ওএস বা কীবোর্ড প্রচলনের জন্য লড়াই করতে পারি, আন্দোলন করতে পারি_কিন্তু সেটি আমার পণ্যের বাজারজাতকরণের ৰেত্রে প্রয়োগ করা ঠিক হবে না। আমার নিজের একটি দৃষ্টানত্ম দিতে পারি। আমি আমার নিজের ক্যারিয়ার মেকিন্টোস কম্পিউটার দিয়ে শুরম্ন করেছিলাম। আমি এখনও মনে করি, মেকিন্টোস দুনিয়ার সেরা কম্পিউটার। কিন্তু আমি যখন পণ্য তৈরি করি তখন লৰ্য করি যে, উইন্ডোজ দুনিয়ার শতকারা ৯০ ভাগ মানুষ ব্যবহার করে। আমার মেকিন্টোস পণ্য যদি একজনে কেনে, তবে শতকরা ৯৯ জন কেনে উইন্ডোজ পণ্য। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আমি যদি কেবল মেকিন্টোসের পণ্য তৈরি ও বাজারজাত করি বা ব্যবহারকারীকে যদি কেবল মেকিন্টোস পণ্য ব্যবহার করতে বাধ্য করতে চাই তবে সেটি আমার অব্যবসায়ীসুলভ আচরণ হবে।

তৃতীয়ত দোয়েলের চারটি মডেল বাজারে রাখলে এর সব বাণিজ্যিক সফলতা পাওয়া যাবে না। ২১০২ মডেলটি কারিগরি দিক থেকে সফল হবে না। একে সফল করতে হলে এর জন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে। টেশিস এখন পর্যনত্ম এই মডেলের জন্য কোন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পারেনি। অন্যদিকে ২৬০৩ মডেলটির মূল্য তূলনামূলকভাবে বেশি। এর দাম আরও কমাতে হবে।

উপসংহারে এই মনত্মব্যটি করা যায় যে, এখন পর্যনত্ম নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়ে দোয়েল তার আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছে। কিন্তু দোয়েল টিকে থাকার জন্য যেসব উদ্যোগ নেয়া দরকার তার অভাব রয়েছে। টেলিটক যেসব কারণে মার খেয়েছে সেই কারণগুলো দোয়েলের মাঝেও বিরাজ করে। দোয়েল উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও বাণিজ্যিক প্রসারে এখনও সঠিক সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়নি। যে উপায়ে দোয়েলেকে খাঁচায় বন্দী করে রাখা হয়েছে সেটি একে মেরে ফেলার মতো। আমরা আশা করব, দোয়েল আরেকটি টেলিটক হবে না। দোয়েল যেন মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেলে আকাশে বাতাসে ওড়ে বেড়াতে পারে সেই পথে চলতে হবে।