ভারতমাতার” আগ্রাসনে বাংলাদেশ, প্রথম আলোর চাতুর্যময় “বাংলাদেশ” বিকৃতি

দুরন্ত মশাল: আমাদের বাংলাদেশে অনেক ছোট ছোট ঘটনা তেমন একটা গুরুত্ব পায়না। এই ছোট ছোট ঘটনা গুলিই একসময় বৃহৎ ঘটনা রূপে আবির্ভূত হয়। আসুননা কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া একটি ছোট ঘটনা আলোচনা করি। তবে একটা জিনিস, যাদের চোখ আছে, কিন্তু চোখের সত্যিকারের দৃষ্টি নেই তারা বাকিটুকু না পড়লেও চলবে।

আপনারা দেখতে পাচ্ছেন ছবিতে বাংলাদেশ এর মানচিত্রকে পরিস্কারভাবে বিকৃত করা হয়েছে। কেউ হয়ত মনে করতে পারেন যে এটা একটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। আসলে ব্যাপারটি তা নয়।

অন্যকথায় বলা যায়, “প্রথমআলো” বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে একটি গোপন বার্তা পৌছিয়ে দিতে চেয়েছে। একটি জাতীয় দৈনিক এর ব্যনার এ এধরনের বিকৃতি আইসবার্গ এর লুকিয়ে থাকা ৯০% আয়তন এর কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। উল্লেখ্য, আইসবার্গ এর মোট আয়তনের মাত্র ১০% আমরা দেখতে পাই, আর বাকি ৯০% ই লুকিয়ে থাকে পানির নিচে। সময় এর পরিক্রমায় আমাদের দেশে ও চোখের অন্তরালে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও আগ্রাসী "চানক্য ভারত" এর দাসদের সুবিশাল আইসবার্গ তৈরী হয়েছে, যার মাত্র ১০% আমরা দেখতে পাই। প্রথম আলোর এই বিকৃতি ও জাতীয় জীবনের অন্যান্য বিপর্যয়(যেমন- বি. ডি.আর সদরদপ্তরে হত্যাকান্ড) সবই একই সুত্রে গাথা। সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে, আমরা এই চর,দাস, দালালদের মাত্র ১০% ই দেখতে পাই। লুকিয়ে থাকা ৯০% দালালদের কাজগুলি আমরা সরাসরি দেখতে পাইনা, কিন্তু তাদের কাজের ফলাফল গুলি আমরা দেখি জাতীয় ও আর্থসামাজিক জীবনে বিপর্যয় হিসেবে।

প্রকৃত পক্ষে, বাংলাদেশ চড়িয়ে আছে ভারত এর গোয়েন্দা সংস্থা 'র' এর ১ লাখের ও অনেক বেশি এজেন্ট। এই বিস্তার কতটুকু ভয়াবহ তা চিন্তা করলেও পিলে চমকে উঠে। মন্ত্রিসভার সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,সাধারণ শিক্ষক, সামরিক অফিসার, বাংলাদেশের সব গোয়েন্দা সংস্থা, বুদ্দিজীবী, সাংবাদিক,মিডিয়াকর্মী,সাহিত্যিক, সঙ্গীত শিল্পী, রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক কর্মী, সাধারণ সরকারী কর্মকর্তা, সচিব, আইন রক্ষাকারী সকল বাহিনী, সাধারণ ছাত্র, ছাত্র নেতা, শ্রমিক, রিক্সাওয়ালা, বাদাম বিক্রেতা, হোটেল বয় সহ আরো অজানা ক্ষেত্রে চড়িয়ে আছে এজেন্ট, অর্থের বিনিময়ে তথ্যদাতারা। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র' এর পাশাপাশি আরো সক্রিয় আছে সি, আই, এ; মোসাদ সহ আরো কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা।

যাইহোক, প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আসলে একটি সার্বিক পর্যালোচনা ছাড়া কোনো কিছুরই গভীরতা বোঝা সম্ভব নয়। প্রথম আলো'র ব্যনার এ একটি স্কেচ দিয়ে বাংলাদেশ এর মানচিত্রের একটি অংশ ঢেকে দেয়া হয়েছে। আমরা স্কেচটি দেখতে পাচ্ছি পরিস্কার ভাবে। এটি একটি নারীর মুখ। এই নারীটি হচ্ছে "ভারতমাতা"। বাংলাদেশের মত একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের জাতীয় পত্রিকায় "ভারতমাতার" উদ্দেশ্য ও পরিপূর্ণ প্রতীক প্রকাশ সম্ভব নয়, তাই "প্রথমআলো" এর প্রকাশ ঘটিয়েছে আংশিক ও ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে।

এবার আসুন জেনে নেই "ভারতমাতা" কে ও কি তার উদ্দেশ্য।

ভারতমাতা কি অথবা কে?

ভারতমাতা হচ্ছে একটি নারীমূর্তি যাকে অংকন করা হয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশের ভৌগলিক মানচিত্রের উপর ভিত্তি করে। আপনারা নিচের মানচিত্রগুলোর দিকে তাকান। ভারতের পুরো ভূখন্ডটিকেই একটা নারীর মত মনে হচ্ছে। ব্যাপারটা এমন যে, একটি নারী পশ্চিমমুখী হয়ে দাড়িয়ে আছে এবং তার শাড়ির একটা অংশ পিছনের দিকে ঝুলানো যেমনটি ঝুলে থাকে রাজকীয় পোশাকগুলোর। শাড়ির এই পিছনের দিকের ঝুলানো অংশে ভারতের মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মনিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, অরুনাচল প্রদেশগুলো অবস্থিত। কিন্তু আপনারা ভালো করে খেয়াল করলে দেখবেন যে, মানচিত্রে কল্পনা করা নারীটির পিছনের দিকের ঝুলানো অংশটা বেমানান ও কাটা মনে হচ্ছে। বুঝতে পেরেছেন তো বেমানান অংশ কোনটি? এই বেমানান অংশেই অবস্থিত আপনার এবং আমার প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

 

 

 

 

 

পেছনের ইতিহাস

"ভারতমাতা" মুভমেন্ট এর সূচনা হয়েছে উনিশ শতকের শেষ দিকে। ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দুদের দেশপ্রেম কে চিত্রায়িত করতে গিয়ে "ভারতমাতা" নামের কল্পিত নারীটিকে রূপ দেয়া হয়। হিন্দুদের অন্যান্য পূজার মত "ভারতমাতা" নামের এই কল্পিত মূর্তিটির ও পূজা করা হয় ভারতের প্রদেশসমূহে।

 

 

 

 

১৮৭৩ সালে সর্বপ্রথম কিরণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় "ভারতমাতা" নামে নাটক বানান। তারপর থেকে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে "ভারতমাতার" পূজা হিন্দুদের একটি সামাজিক রীতি হয়ে পড়ে। ১৯৩৬ সালে শিব প্রসাদ গুপ্ত "ভারতমাতা" নামে বেনারস এ একটি মন্দির নির্মান করেন যা উদ্ধোধন করেন ভারতের মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। মন্দিরটি সম্পর্কে ভারতের মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী বলেন-

"Mahatma Gandhi said, "I hope this temple, which will serve as a cosmopolitan platform for people of all religions, castes, and creeds including Harijans, will go a great way in promoting religious unity, peace, and love in the country."

ভারতের মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী "for people of all religions" বলে তৎকালীন মুসলমানদের প্রতি চরম বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছিলেন। মুসলমানদের দেশপ্রেমে কিভাবে একটি মন্দির কে প্রতিক করা যায়? পরবর্তী সময়ে "ভারতমাতার" বন্দনা ভারতীয় হিন্দুদের মধ্যে আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

যাইহোক, সমস্যাটা বাধে ১৯৪৭ সালের পর।ঐতিহাসিক "দ্বি-জাতি তত্ত্বের" ভিত্তিতে জন্ম হয় দুইটি দেশের, "ভারত" ও "পাকিস্তান"। এখানে একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয় যে, ১৯৪৭ সালেই তৎকালীন "পূর্ববাংলা"(আজকের বাংলাদেশ) একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার কথা ছিল। এপ্রসঙ্গে ইতিহাসের ছাত্র ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বৃহত্তম ১১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল তার "অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা" বইয়ে উল্লেখ করেন- “তবে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে তাড়া খাওয়া বাঙালী আত্মরক্ষার স্বার্থে ’৭১-এর সেই দূর্যোগপূর্ণ দিনগুলোতে ভারতের বুকেই নির্দ্বিধায় ঠাঁই নিয়েছিল এবং ঠাঁই সেথায় পেয়েছিলও।এই ঠাঁই লাভের পেছনে উভয় পক্ষেরই স্বার্থ জড়িত ছিল। স্বার্থ ছাড়া কখনো সন্ধি হয় না। বাঙালীর স্বার্থ ছীল ভারতের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে দেশ মুক্ত করা, আর ভারতের স্বার্থ ছিল দেশ মুক্ত করার নামে তার চিহ্নিত এবং প্রমাণিত শত্রু পাকিস্তানকে দ্বিখন্ডিত করার মধ্য দিয়ে শত্রুপক্ষকে স্থায়ীভাবে দুর্বল করে রাখা এবং মুক্ত বাংলাদেশের উপর প্রাথমিকভাবে খবরদারী করে পরবর্তীতেও সময় সুযোগমত ভারতের সাথে একীভূত করে নেয়া। এটাকে কেবল তাদের স্বার্থ হিসেবে চিহ্নিত করলে ভুল হবে, বরং এটা ছিল তাদের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন।

১৯৪৭ সনের দেশ বিভক্তির সময় বঙ্গ-ভঙ্গের ইচ্ছা ভারতীয় কংগ্রেসী নেতৃবৃন্দের মধ্যে মোটেও ছিল না। তাঁরা সমগ্র বাংলাকেই পেতে চেয়েছিলেন ভারতের সঙ্গে, কিন্তু মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ চেয়েছিলেন ‘বাংলাকে’ একটু পূর্ণ স্বাধীন দেশ হিসেবে দেখতে যা হবে কমনওয়েলখভুক্ত একটি স্বাধীন রাজ্য। শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবরাও ছিলেন ঐ ধরনের স্বাধীন বাংলা রাজ্যের পক্ষে। কিন্তু বাধ সাধলেন কিছু কংগ্রেসী নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে শ্রী প্যাটেল বাবু এবং দেশ বিভক্তির একান্ত শেষ মুহূর্তে অজানা কারণে অবশেষে পূর্ব বাংলা পশ্চিম বাংলা থেকে বিভক্ত হয়ে নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে শামিল হয়ে পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
“(“মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রকৃত অবস্থা”, “অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা”)

১৯৪৭ সালে যে মহান উদ্দেশ্য নিয়ে মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল, সে উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। ক্রমান্নয়ে সৃষ্টি হয় জাতিগত বৈষম্যের। আমরা ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠির বৈষম্য থেকে মুক্ত হই এবং অর্জন করি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ মুহুর্তে ও পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের পরপরই স্বাধীন হওয়া নতুন বাংলাদেশ ভূখন্ডকে ভারতের সাথে একীভূত করার ভারতীয় নীলনকশা মহান আল্লাহর ইচ্ছায় ব্যর্থ হয়।মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণনা থেকে ভারতীয় বাহিনীর লুটতরাজ ও ভয়াবহ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে পরিস্কারভাবে জানা যায়। তখন ভারতের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলেও ভারত বসে থাকেনি। স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে ভারতের গোলামে পরিনত করার ও পরবর্তীতে ভারতের সাথে একীভূত করার নীলনকশা সম্পন্ন করা হয়। বাংলাদেশে ভারতীয় দালালদের অপতৎপরতা আমাদের কারোরই অজানা নয়। বিষয়টি সংক্ষেপে আলোচনা এককথায় অসম্ভব।

যাইহোক, ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ ভাগ হওয়ার সময় ভারত চেয়েছিলো "পূর্ববাংলা"(আজকের বাংলাদেশ) কে ভারতের প্রদেশ হিসেবে পেতে। কিন্তু তাদের সেই দূরাশা পূরণ হয়নি। কিন্তু ভারত বসে থাকেনি, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই তারা বাংলাদেশ কে ভারতের প্রদেশ এ পরিনত করার অতৃপ্ত বাসনা পূরণ করার জন্য অধিক উদ্যম সহকারে প্রচেষ্টা চালাতে থাকে।

ভারতমাতার উদ্দেশ্য

"ভারতমাতা" কি এবং এর পেছনের ইতিহাস কি এটা আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি। ভারতীয়রা ভারতমাতাকে বুকে নিয়ে ঘুমাক, আমাদের তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা তখনি যখন তারা আমাদের মা ও মাতৃভূমি বাংলাদেশ কে তাদের ভারতমাতার অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ বলে মনে করে। বাংলাদেশকে ভারতের সাথে একীভূত করে ভারতমাতার শাড়ির আচলের ভৌগোলিক পরিপূর্ণতা আনয়নের বিকৃত মানসিকতা চাপা থাকেনি। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি ব্যাপারটার গভীরতা বুঝতে পারি আমার নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ছোট অথচ গুরত্বপূর্ণ একটি ঘটনার মাধ্যমে।

 

একটি ছোট ঘটনা

মানুষের সাথে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বকর বকর করার অভ্যাস আমার বরাবরই ছিল এবং আছে। যাইহোক, বছর খানেক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি রুম এ একজন

 

ইন্ডিয়ান স্টুডেন্ট এর সাথে দেখা হয়ে গেল। হালকা পরিচয় পর্বের (নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সাবজেক্ট এ অধ্যয়নরত) পরেই আমি স্বভাব অনুযায়ী খোশগল্পে মেতে উঠি। আমি যেচে গিয়ে কথা বলার জন্যই হয়ত ছেলেটি প্রথমে আমার জাতীয়তা জানতে চায়নি। কিন্তু স্টুডেন্টটি ইন্ডিয়ান একথা জানার সাথে সাথেই আমার কথার ফুলঝুরি শুরু হয়ে যায়। তার দেশের ব্যাপারে আমার আগ্রহ দেখে সেও গল্প করতে থাকে। আমি বললাম, তোমাদের দেশতো আই টি তে অনেক এগিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। আলোচনায় উঠে আসলো ইন্ডিয়ান ইকোনমি। কথা গড়ালো, কথা উঠলো তার প্রদেশের ব্যাপারে। সামনেই খোলা ছিল তার ল্যাপটপ। আমিও ইতোমধ্যে আমার ল্যাপটপ খুলে তার পাশে বসলাম। সে বলল, সে "মহারাষ্ট্র" প্রদেশ থেকে এসেছে। জানতে চাইলাম, এটা ইন্ডিয়ার পশ্চিমে নাকি দক্ষিন এ। সে প্রদেশটাকে সহজভাবে দেখানোর জন্য সামনে রাখা ল্যাপটপ এ গুগল সার্চে ইন্ডিয়ান ম্যাপ সার্চ দিল। সার্চে ম্যাপ আসলো, সে তার প্রদেশ দেখালো এবং তার প্রদেশ সম্পর্কে বলল। হঠাৎ করে সে আমাকে মজা করে ও কুইজ ধরার মত করে বলল, আচ্ছা তুমি ইন্ডিয়ার ম্যাপ দেখে অন্যরকম কোনো কিছু কি ফীল করতে পারছ? আমি মিনিট খানেক চেষ্টা করে দেখলাম, কিন্তু পারলাম না। সে আবার বলল চেষ্টা করে দেখতে, কিন্তু বিশেষ কোনো কিছু ম্যাপ থেকে খুঁজে পেলাম না। আমার অপারগতা দেখে অবশেষে সে আমাকে বলতে লাগলো, তুমি যদি ভালো করে খেয়াল করে দেখো তাহলে দেখবে পুরো ইন্ডিয়ার ম্যাপ টাকেই একটা নারীর মত মনে হচ্ছে। সে বলার পর আমার কাছে নারীমূর্তির অবয়বের বিষয়টা পানির মত পরিষ্কার হয়ে গেল। দেশে থাকতে "ভারতমাতা" শব্দটি শুনেছিলাম, জেনেছিলাম ওরা ইন্ডিয়াকে ভালবাসার নিদর্শন রূপে "ভারতমাতার" পূজা করে। কিন্তু "ভারতমাতার" নারীমূর্তিটিকে যে তারা সরাসরি ভৌগোলিক মানচিত্রের সাথে জুড়ে দিয়েছে তা এই প্রথম বুঝতে পারলাম। সে বলতে লাগলো, এই নারীমূর্তিটি হচ্ছে ভারতমাতা এবং ভারতমাতা তাদের কাছে অনেক পবিত্র। তবে একটা সমস্যা হচ্ছে, তাদের এই "ভারতমাতার" মূর্তিটি সম্পূর্ণ নয়। সে বাংলাদেশ অংশে আঙ্গুল দিয়ে বলল, "বাংলাদেশ অংশটির কারণে ভারতমাতার শাড়ির আচল কাটা গেছে, যেদিন বাংলাদেশ এর অংশটি ভারতের অন্তরভুক্ত হবে, সেদিন ই "ভারতমাতার" নারীমূর্তি সম্পন্ন হবে"। তার এই কথাটি আমার মধ্যে যেন এটম বম্ব ফাটালো। বহু কষ্টে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া আটকালাম। সে মানচিত্রের দিকে তাকিয়ে বলেই যাচ্ছিল, কিন্তু তখন আমার চোখের দিকে তাকালে সে আমার ক্রোধটুকু বুঝতে পারত। আমি বললাম, থ্যান্কস, আমার ক্লাস আছে,আমি যাচ্ছি। সে আমার মুখের দিকে তাকালো এবং আমার চেহারার অস্বাভাবিকতাটুকু বুঝতে পারল। ততক্ষণে আমার ব্যাগ গুছানো শেষ। ছেলেটা বুদ্ধিমান ছিল, আমার কাছে জানতে চাইল আমার দেশ কোথায়? বলতে ইচ্ছে হলো তোর কল্পিত "ভারতমাতার" শাড়ির আচল পূর্ণ করার বিকৃত মানসিকতার শিকার "বাংলাদেশ" অংশে। কিন্তু সেটা মুখ দিয়ে আসলোনা, "বাংলাদেশ" বলেই কাধে ব্যাগটা ঝুলিয়ে ওই স্টাডি রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। আমি ইচ্ছে করলে তাৎক্ষণিকভাবে তার কথার প্রতিবাদ করতে পারতাম। কিন্তু এই সজ্ঞান বিকৃতির পিছনে সময় অপচয় করা নিরর্থক মনে হলো। আসলেই যাদের কাছে নিজেদের সজ্ঞান মানসিক বিকৃতিই স্বাভাবিক, তাদেরকে বিকৃতির প্রকৃতি বুঝানো অসম্ভব।

তবে "ভারত" তুমি একটা কথা মনে রেখো, আমরা কারো দয়ায় স্বাধীনতা পাইনি। স্বাধীনতা পেয়েছি আমাদের ত্যাগ-তিতিক্ষায়, মহান আল্লাহ'র ইচ্ছায়। এই "বাংলাদেশের" রয়েছে কোটি মুসলিম জনতা। তুমি বাংলাদেশকে "সিকিম" ভেবোনা। তুমি যদি বাংলাদেশের বুকে পা রাখতে চাও, তবে মনে রেখো "বাংলাদেশের স্বাধীনতার" অতন্দ্র প্রহরী লাখো মশাল তোমার পা কে পুড়িয়ে কয়লা করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। তোমার পারমানবিক বোমা তোমাকে রক্ষা করতে পারবেনা, যেমন পারেনি ভিয়েতনাম ও ইরাক এ আমেরিকান হায়েনাদের রক্ষা করতে। আর তুমিতো সেদিনকার "ভারত", বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত মানুষের দেশ। সুতরাং, নিজের চরকায় তেল দাও, সেটাই সর্বোত্তম পন্থা।

 

Please download

অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা মেজর (অব.) এম. এ. জলিল

http://www.mediafire.com/?y4a947pd5xlohpp

 

"ভারতমাতার" আগ্রাসনে বাংলাদেশ ও “প্রথম আলোর” চাতুর্যময় "বাংলাদেশ" বিকৃতি

http://www.mediafire.com/?g7cw5jknwkda51v

 

[Source: http://www.sonarbangladesh.com/blog/dmoshal/16089 ]

 

"বঙ্গবন্ধু" উপাধীর ইতিবৃত্তঃঐতিহাসিক ৭দফা ও স্বাধীনতা নিয়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ভাবনা

http://www.sonarbangladesh.com/blog/nazmul86/16109

 

{jathumbnail off}