বরিশালে লাভজনক পেশা হিসেবে গড়ে উঠছে নার্সারি

শুভব্রত দত্ত, বরিশালঃ লাভজনক পেশা হিসেবে বরিশালে গড়ে উঠছে নার্সারি ব্যবসা। চলতে চলতে প্রায়ই আমাদের চোখ আটকে যায় বরিশাল নগরীর বান্ধ রোড রাস্তার পাশে সারি করে সাজিয়ে রাখা ফুল আর ফলের গাছের চারার দিকে। এসব গাছের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই মুগ্ধতা থেকেই বৃক্ষপ্রেমীরা নিজেদের বাড়ির আঙিনায় গাছ লাগিয়ে থাকেন। তবে শুধু আঙিনাতেই নয়, ঘরের বারান্দা, ছাদ, অফিস, স্কুল-কলেজের মাঠ আর রাস্তার ডিভাইডারে হরেক রকম ফুল-ফলের গাছ শোভা পায়।

নগরীর বৃক্ষপ্রেমীদের এই চাহিদা মেটাতে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার পাশে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট অনেক নার্সারি । এসব নার্সারির সাথে অনেকই যুক্ত। তারা নিজেদের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে নার্সারি ব্যবসাকে বেছে নিয়েছেন। নার্সারিকে জীবিকা হিসেবে নেওয়া রানা পাল বরিশাল বিএম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০২ এম.এ (মৃর্ত্তিকা বিজ্ঞান) পাশ করে বান্ধ রোডে ব্যাপ্টিশ মিশন স্কুল’র বিপরীতে মাত্র দশ থেকে পনের হাত জায়গায় নিজের নার্সারি গড়ে তুলেছেন।  স্বখের বসেই তিনি এ ব্যবসার সাথে জড়িত।

নার্সারী ব্যবসায়ী রানা পাল বলেন, ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা থাকলে যে কেউ এই ব্যবসায় আসতে পারেন। নার্সারি ছোট হলেও মাসে সব খরচ বাদে ভালোই লাভ থাকে । তিনি আরো বলেন অন্যান্য ব্যবসার চেয়ে এটি অনেক নিরাপদ এবং অল্প পুজিতে করা যায় বলে এ পেশা বেছে নিয়েছেন। অনেক মানুষ এখানে গাছ কিনতে আসেন। পরিচিত অনেক ক্রেতা আছেন যারা নিয়মিত গাছ নেন। আবার অর্ডার দিয়েও অনেকে গাছ কেনেন। স্বপ্ন রয়েছে ভবিষ্যতে বনসাই এ্যাসোসিয়শন,খামারবাড়ি বা জনসেবা মূলক কাজ করার। পর পর তিন বছর যাবৎ বরিশাল বিভাগীয় বৃক্ষ মেলায় ১ম স্থান হিসেবে পুরস্কার পেয়েছি। সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ কোনো সমস্যা করে কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, পরিবেশ ভালো রাখছি এ কারণে সবাই এটাকে সুদৃষ্টিতে দেখেন। রাস্তার র্পাশের এ জায়গাটি বরিশাল জেলা পরিষদ থেকে ভাড়া বা লিজ নেয়া।
এসব নার্সারিতে ভ্যারাটিজ ক্যাকটাস,বনসাই,অর্কিফার্ন,শোভা বর্ধন গাছ,ফুল, ফল, ঔষধি সব গাছ পাওয়া যায়। গাছ লাগানোর জন্য মাটির পাত্র, পোকা দমনের জন্য সারও পাওয়া যায় কিছু নার্সারিতে। শহরের জায়গাস্বল্পতার কথা মাথায় রেখেই তারা ছোট ছোট টবে বা পাত্রে গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করে দেন। ফলে ছাদে বা বারান্দায় সহজেই গাছ লাগানো যায়। যাদের নার্সারি একটু বড় তারা সরকারি-বেসরকারি অফিস সাজানোর দায়িত্বও পান।

ক্যাকটাস ভ্যালী পরিচর্যাকারী সুমন জানান, বিভিন্ন মেলার সময় বা অনুষ্ঠানে তার এখান থেকে গাছ ভাড়া করে নিয়ে যান আয়োজকরা।

কোন ধরনের গাছ বেশি বিক্রি হয় জানতে চাইলে সুমন বলেন, মূলত মৌসুম অনুযায়ী গাছ বিক্রি হয় । শীতকালে ফুল  আর বর্ষায় ফল বা অন্যান্য গাছ বেশি বিক্রি হয় । গোলাপ, বনসাই এবং ক্যাকটাস সারা বছরই বিক্রি হয় । এসব নার্সারিতে  ১০ টাকা  থেকে ২০ হাজার টাকার গাছ পাওয়া যায়। নার্সারির জন্য যেসব গাছ আনা হয় তার সরবরাহ আসে চট্টগ্রাম,সিরাজগঞ্জ, সাভার,গাজীপুর,ঢাকা এবং যশোর থেকে।

এ প্রসঙ্গে গাছ কিনতে আসা সুমাইয়া আক্তার বলেন, ফুটপাথে ময়লা-আবর্জনার চেয়ে ফুল গাছ থাকা অনেক ভালো। আর এখান থেকে সহজে ও কম দামে আমরা গাছ কিনতে পারছি।
নদী-খাল বাচাও আন্দোলন কমিটির যুম্ম সদস্য সচিব সুশান্ত ঘোষ’র মতে, নার্সারিগুলো একটুখানি সবুজের ছোঁয়া নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়। অন্যদিকে এর সাথে জড়িতরা জীবিকারও সুযোগ পাচ্ছে। নার্সারি ব্যবসাকে যদি আরো গুরুত্বের সাথে দেখা হয়  তাহলে অনেকে এ ব্যবসার মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ পাবেন।