ফায়েল খায়েরের ঋণে ভাগ্য পরিবর্তন পারুল বেগমের

উম্মে রুম্মান, বরিশাল ॥ পিরোজপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ নামাজপুরে পারুল বেগমের পরিবার। দুর্বিসহ জীবন কেটে তাদের সংসারে ফিরে এসেছে আর্থিক সচ্ছলতা। এক সময় মানুষের বাড়ীতে কানিজ ফাতেমার স্বামী সোবহান হাওলাদার দিন মজুরের কাজ করত। যেদিন কাজে যেত না বা কাজ পেত না সেদিন স্বামী ও ৮ সন্তানদের নিয়ে অনাহারে অর্ধহারে থাকতে হত। বাড়ীতে কিছু করার জন্য প্রতিবেশী ও বিত্তবানদের কাছে সাহায্য চেয়েও পাননি পারুল বেগম। তাদের সাহায্যের জন্য কেউ হাত বাড়িয়ে দেননি। জীবন থেমে থাকে না। তাদের পরিবারে যখন দূর্দিন চলছিল তখন তারা সিদ্ধান্ত নেয় কিছু একটা করার। অবশেষে তিনি সন্ধান পান ইসলামিক ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের (আই,ডি,বি) অর্থায়নে পরিচালিত ফায়েল খায়ের প্রোগ্রামের অধীনে মুসলিম এইড-র সুদমুক্ত ঋণের। ঘুরে যায় পারূল বেগমের ভাগ্যের চাকা। পারুল বেগম ২০০৯ সালের মে মাসের শেষ সপ্তাহে  মুসলিম এইডের সদস্য হন এবং প্রথমে ২০ হাজার টাকা লোন নিয়ে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সামান্য জমির উপর পানের বরজ শুরু করেন। পানের বরজের কাজের ফাকে দিনমজুরের কাজ করে মুসলিম এইডের কিস্তি পরিশোধ করে। এভাবে সাত মাস চলে যায়। এরই মধ্যে পানের ফসল উঠতে শুরু করে। তা বিক্রি করে পাওনাদারদের ধার দেনা ও কিস্তি পরিশোধ করে ঋণমুক্ত হন পারুল বেগমের পরিবার। ২০১০ সালের ফেব্রয়ারী মাসে পারুল বেগম মুসলিম এইড থেকে দ্বিতীয় বারে ২০ হাজার টাকা নিয়ে অন্যের জমির উপর পানের বরজ শুরু করে। এখন সে দুইটি পানের বরজের মালিক যা মোট ৩৩ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। এরপর সে আরো দুইবারে ৪০ হাজার টাকা নেয় যা দিয়ে তার স্বামী ছোট একটা ব্যবসা শুরু করেন। সে এখন নিজেই কাজে অন্য লোক খাটায়।কিস্তি দিতে সমস্যা হয় না । অথচ একটা সময় সামান্য কিছু টাকার জন্য হন্য হয়ে ঘুরতে হয়েছে মানুষের দারে দারে। পারুল বেগম জানান কোন রকম প্রকৃতিক দূর্যোগ না আসলে বছর শেষে ভাল একটা অর্থ সঞ্চয় করতে পারব বলে মনে করছি। আর আমার যা কিছু অর্জন , যা সঞ্চয় সব কিছু সম্ভব হয়েছে মুসলিম এইডের সুদ মুক্ত লোনের কারনে কেণনা এখন কার সময়ে সম্পূর্ন সুদ মুক্ত লোন এটা আমার কল্পনাতেও ছিল না।  মুসলিম এইড বাংলাদেশ পিরোজপুর সদর শাখার ব্যবস্থাপক জোবায়ের সিদ্দিক জানান পিরোজপুর সদরের ৬টি ইউনিয়নে ৫৫টি গ্রাম সংগঠনের মাধ্যমে ১৫২৯ টি পরিবারের মাঝে ৭১,২৬৩,০০০ /- (সাত কোটি বারো লক্ষ তেষট্রি হাজার) টাকা সুদ মুক্ত ঋণ বিতরণ করেছে। পারুল বেগমের মত এখন অনেক পরিবারেরই অভাব দূরীভূত হয়েছে। আবার অনেকে মুসলিম এইড-র সুদমুক্ত ঋণ গ্রহণ করে হাঁস পালন , পোল্ট্রি ফার্ম, ক্ষুদ্র ব্যবসা, কলার বাগান ইত্যাদির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন। মুসলিম এইড-র সুদমুক্ত ঋণ এর পাশাপাশি দূর্যোগ, স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা, বাল্য বিবাহ ,যৌতুক, ইভটিজিং ইত্যাদি সামাজিক সচেতনামূলক আলোচনা করে  থাকে।