গৌরনদীতে সিডরের রাতে জন্ম – নানির কাছে কষ্টে আছে তুফান

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ নানি সানু বেগমের (৪২) কাছেই বড় হচ্ছে সিডরের রাতে জন্ম নেয়া শিশু পুত্র তুফান। সানু বেগম অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে যা পায় তা দিয়েই কোন এতমতে তারা খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন। সিডরের চার বছর অতিবাহিত হলেও আজো ভাগ্য বদলায়নি তাদের। তুফানের জন্মের পূর্বেই তার বাবা নিজাম গাজীর দ্বিতীয় বিয়ে করে প্রথম স্ত্রী সালমার কোন খোঁজ খবর রাখেন না। গত আট মাস পূর্বে শিশুপুত্র তুফানকে তার নানির কাছে রেখে অন্যত্র বিয়ে বসেছেন সালমা বেগম (২৩)। অভাবের সংসারে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেখানেই এখন বড় হচ্ছে চার বছরের শিশু তুফান।

আজ মঙ্গলবার তুফানদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। সিডরের চার বছরেও ভাগ্য বদলায়নি তাদের। এখনো ভাঙ্গাচুরা খুঁপরি ঘরে অর্থভাবে ঘরের বেড়া দিতে না পারায় ঘরের চারিপার্শ্বে কাপর টাঙ্গিয়ে তার মধ্যেই বসবাস করছেন তারা। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার উত্তর চাঁদশী গ্রামের মৃত সেকান্দার আলীর স্ত্রী সানু বেগম জানান, ঘূর্ণিঝড় সিডরের রাতে যখন তাদের জীর্ণ কুটিরটি উড়িয়ে নিয়ে যায় ঠিক তখনই তার মেয়ে ছালমার প্রসব বেদনা শুরু হয়। যখন চারিদিকে শুধু বাঁচাও বাঁচাও বলে ডাকচিৎকার চলছে, সে সময়ই খোলা আকাশের নিচে ছালমার একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। সিডরের রাতে জন্মগ্রহন করায় প্রতিবেশীরা সালমার শিশু পুত্রের নাম রেখেছেন তুফান।

তিনি বলেন, অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে ছালমাকে বিয়ে দিয়েছিলাম একই গ্রামের নিজাম গাজীর সাথে। বিয়ের সময় নিজামের দাবি অনুযায়ি ১০ হাজার টাকা যৌতুকও দেয়া হয়েছিলো। বিয়ের পর নিজাম পূর্ণরায় ২০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে। তার দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় নিজাম ছালমাকে তার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। সে সময় ছালমা তিনমাসের অন্তঃস্বত্তা। ছালমাকে তাড়িয়ে দিয়ে নিজাম দ্বিতীয় বিয়ে করে। এরপর থেকে নিজাম আর ছালমার কোন খোঁজ খবর রাখে না। গত আটমাস পূর্বে সালমাকে দ্বিতীয় বিয়ে দেয়া হয়। সেই থেকে সালমার শিশুপুত্র তুফান তার কাছেই থাকছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রলয়ঙ্করী সিডরের চারবছর পেড়িয়ে গেলেও অর্থভাবে ছালমাদের জীর্ণ কুটিরটি এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। কোন একমতে জীর্ণ কুটিরের চারিপার্শ্বে কাপর টাঙ্গিয়ে বসবাস করছেন তারা। একটি ঘরের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েও কোন সুফল মেলেনি।