গৌরনদী যুবদলের অভ্যন্তরীন কোন্দল এখন চরম পর্যায়ে

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলা যুবদলের পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে যুবদলের দু’ গ্রুপের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকারে ধারন করেছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে তৃনমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। যুবদলের মধ্যে গ্র“পিং সৃষ্টি ও সংঘর্ষের জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও গৌরনদী উপজেলা কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান ও কেন্দ্রীয় বিএনপি কার্যনির্বাহী সদস্য ও বরিশাল সদর উত্তর জেলা বিএনপি সাধারন সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানের সমর্থকরা একে অপরকে দায়ী করেছেন।

দলীয় সুত্রে জানা গেছে, গত ৫ অক্টোবর বরিশাল সদর উত্তর যুবদলের সভাপতি কবির উদ্দিন আফসারী ও সাধারন সম্পাদক বদিউজ্জান মিন্টু যৌথ স্বাক্ষরে কেন্দ্রীয় বিএনপি কার্যনির্বাহী সদস্য ও বরিশাল সদর উত্তর জেলা বিএনপি সাধারন সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানের সমর্থক মাসুদ হাসান মিটুকে গৌরনদী উপজেলা যুবদলের আহবায়ক ও জাকির হোসেন শরীফকে পৌর যুবদলের আহবায়ক করে যুবদলের আহবায়ক কমিটি ঘোষনা করা হয়। এর দুইদিন পর বরিশাল সদর উত্তর যুবদলের সভাপতি কবির উদ্দিন আফসারীর একক স্বাক্ষরে শফিকুর রহমান শরীফ স্বপনকে সভাপতি ও রফিক চোকদারকে সাধারন সস্পাদক করে গৌরনদী উপজেলা এবং নান্না খানকে সভাপতি ও জামাল হাওলাদারকে সাধারন সম্পাদক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পৌর যুবদলের কমিটি ঘোষনা করা হয়। পাল্টা পাল্টি কমিটি গঠন নিয়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। উভয় গ্রুপ পাল্টা পাল্টি সাংবাদিক সম্মেলনসহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। আকন কুদ্দুসুর রহমানের সমর্থক ও বাটাজোর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি হুমায়ুন কবির রিপন, সাধারন সম্পাদক আজাদ রহমানসহ একাধিক নেতাকর্মীরা জানান, এর জের ধরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও গৌরনদী উপজেলা কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান উপজেলা বিএনপি ও যুবদলের ১৫/২০ জন নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে কয়েকটি মটরসাইকেল যোগে গত ৯ অক্টোবর সকালে গৌরনদীর মাহিলাড়া বাসষ্ট্যান্ডে ঈদুল আযাহার শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যায়। সেখানে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বরিশাল সদর উত্তর জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানের সমর্থক যুবদলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের তোপেড় মুখে পড়েন। ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সোবাহান বাটাজোর বন্দরে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়ে কুদ্দুস সমর্থক নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সোবাহানকে গালাগাল শুরু করলে সোবাহানের সমর্থকরা প্রতিবাদ করে। এ নিয়ে উভয় গ্র“পের মধ্যে বাকবিতন্ডা বাধে। এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমানের সমর্থকরা সোবহান সমর্থক যুবদল নেতা তাজেলকে মারধর করে। এর জের ধরে কুদ্দুস সমর্থক যুবদল নেতা রিপন রাঢ়ী, মোশারফ,  আজাদ মৃধা, জুয়েল, খোকন, মোকছেদের সাথে সোবাহন সমর্থক যুবদল নেতা জাকির হোসেন, আলমগীর মোল্লার মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৫ নেতাকর্মী আহত হয়। ঘটনার পর পরই বাটাজোর ইউনিয়ন যুবদলের প্রায় পাঁচ শত নেতাকর্মী ওই বন্দরে জড়ো হয়ে সংঘর্ষের ঘটনার জন্য ইঞ্জিনিযার সোবহানকে দায়ী করে সোবহান ও তার সহযোগীদেরকে ধাওয়া করে। এ সময় সোবহান তার সহযোগীদের নিয়ে স্থানীয় বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদে আশ্রয় নেন। যুবদলের বিক্ষুদ্ধ নেতা কর্মীরা তখন ওই বন্দর এলাকায় মিছিল বের করে সোবাহানকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষনা করে।

উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউজ্জামান মিন্টু বলেন, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান নিজে আগৈলঝাড়া উপজেলার বাসিন্ধা হওয়া সত্বেও জেলার কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করে গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি হয়েছেন। এ কারনে গৌরনদী উপজেলা বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের একটি অংশ তার ওপর ভীষন ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। গৌরনদী যুবদলের কমিটি গঠন নিয়ে আব্দুস সোবাহানের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছেন স্থানীয় যুবদলের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা কর্মীরা। উপজেলা যুবদলের একাংশের আহবায়ক মাসুদ হাসান মিটু বলেন,  ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া বা তারেক জিয়ার অনুসারী নয়, দলের ভেতরে শুধুমাত্র তার নিজের অনুসারী বলে পরিচিত এবং সব চাইতে অযোগ্য ও স্বার্থবাদী বলে চিহ্নিত কর্মীদেরকে যুবদলের গুরুত্বপূর্ন পদ পদবী দিয়ে যুব দলের নেতা বানিয়েছেন। তার দাবি এ কারনেই দলীয় কর্মকান্ড চালাতে গিয়ে সোবাহান একের পর এক প্রতিরোধের মুখে পড়ছেন।

কেন্দ্রীয় বিএনপি কার্যনির্বাহী সদস্য ও বরিশাল সদর উত্তর জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, যতদিন পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহানের রাজনৈতিক বোধদ্বয় না হবে তত দিন পর্যন্ত তিনি গৌরনদী-আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে পরতে থাকবেন। সোবাহানকে অবোধ রাজনৈতিক নেতা আখ্যা দিয়ে তিনি আরো বলেন, সোবাহান বিএনপির দুর্গ বলে পরিচিত গৌরনদীর দলীয় নেতা কর্মীদের অনুভুতিই বোঝেন না। এ কারনে তিনি আগৈলঝাড়া উপজেলার বাসিন্দা হয়েও গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদটি আকড়ে ধরে আছেন। যতদিন তিনি এ পদটি আকড়ে থাকবেন এবং দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা কর্মীদের অনুভুতি না বুঝবেন ততদিনই তিনি দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা কর্মিদের দ্বারা একের পর এক প্রতিরোধের সম্মুখিন হবেন।

অপর কেন্দ্রীয় বিএনপি কার্যনির্বাহী সদস্য ও গৌরনদী উপজেলা পিএনপি’র  সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান বলেন, সম্প্রতি গুটিকয়েক বিপদগামী নেতাকর্মী মিথ্যা ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করছে। স্থানীয় নেতা কর্মীরা এর প্রতিবাদে গৌরনদী বিএনপির কার্যালয়ে এক প্রতিবাদ সভাও করেছেন। তিনি আরো বলেন দলের মধ্যে একদল বিপথগামী নেতাকর্মী বিভেদ সৃষ্টি করে রেখেছে তবে আমার কাছে সবাই সমান। আমি তাদেরকে উদাত্ত আহবান জানাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করা ও গনতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে এখন নিজেদের ভুল বুঝাবুঝির সময় না। সকলকে ঐক্যবদ্বভাবে কাজ করতে হবে।