একাত্তরের এইদিনে পানপট্টির যুদ্ধে পটুয়াখালীর বিজয় সূচিত হয়

উম্মে রুমান, বরিশাল ॥  আজ ১৮ নভেম্বর, একাত্তরের এইদিনে মুক্তিযুদ্ধে পটুয়াখালীর বিজয় সূচিত হয় পানপট্টির সম্মুখ যুদ্ধে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক বাহিনীর যুদ্ধ চলে প্রায় ৮ ঘণ্টা। এই যুদ্ধে হতাহত হয় বেশ কয়েকজন পাকসেনা ও রাজাকার-আলবদর। অবস্থা বেগতিক বুঝে পলায়ন করে তাদের দোসর শান্তি কমিটির সদস্য ও দালালরা। বিজয়ীর বেশে মুক্তিযোদ্ধারা গলাচিপার পানপট্টির মুক্তাঞ্চলে উত্তোলন করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর একমাস ছিল পটুয়াখালী জেলা মুক্তাঞ্চল। এ সময় সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে বর্তমান মহিলা কলেজে স্থাপন করা মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। জুবিলী স্কুল মাঠে চলে মুক্তিযোদ্ধাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ।  একাত্তরের ২৬ এপ্রিল পাকবাহিনী পটুয়াখালী শহর ও আশপাশের এলাকায় বিমান হামলা চালায়। পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় প্রশিক্ষণরত মুক্তিযোদ্ধারা। তারা  ছত্রীসেনা নামিয়ে ঐদিন দখল করে নেয় জেলা সদর ও পরে একে একে থানা এলাকাগুলো। ৯ নং সেক্টরের আওতায় পটুয়াখালী-বরগুনা নিয়ে গঠিত সাব-সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হন ক্যাপ্টেন মেহেদী আলী ইমাম। এই সাব-সেক্টরের অধীনে পটুয়াখালী ও গলাচিপা থানা নিয়ে গঠিত সদর অঞ্চলের দায়িত্ব দেয়া হয় কমান্ডার নূরুল হুদা ও সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হাবিবুর রহমান শওকতের উপর। নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি গ্রুপ আসে গলাচিপা এলাকায়। তারা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ক্যাম্প স্থাপন করেন গলাচিপা থানা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে পানপট্টি কমিউনিটি সেন্টারে।

১৮ নভেম্বর ’৭১, সকাল ৬টা। ক্যাম্পে খবর আসে মেজর ইয়ামিনের নেতৃত্বে পাক-হানাদারদের একটি বাহিনী এগিয়ে আসছে পানপট্টির দিকে। মুহূর্তের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেন। ৮টার দিকে হানাদাররা আওতার মধ্যে এসে গেলে গর্জে ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতিয়ার। সম্মুখ যুদ্ধ চলে প্রায় ৮ ঘণ্টা। ঐ এলাকার জনতা মুক্তিযোদ্ধদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। তারা জয়বাংলা ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে এলাকা। অবস্থা বেগতিক বুঝে হানাদাররা তাদের সহযোদ্ধাদের লাশ ফেলে বিকাল ৪টার দিকে পালিয়ে যায়। বিজয় অর্জিত হয় পানপট্টির যুদ্ধে। জেলার প্রথম মুক্তাঞ্চল পানপট্টিতে মুক্তিযোদ্ধারা উত্তোলন করে বাংলাদেশের  মানচিত্রখচিত পতাকা। মুক্তিযুদ্ধের সেই বিজয় গাঁথাকে স্মরণীয় করে রাখতে অদ্যাবধি সেখানে নেয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা হয়ে পড়ছে এই গৌরবের ইতিহাস।