পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে অপহরণ

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥  মির্জাগঞ্জ উপজেলার কিছমত রামপুর  গ্রামের ১৫ বছরের কন্যা সোনিয়া আক্তারকে একই গ্রামের বখাটে যুবক মোঃ নুরুল ইসলাম ও তার দলবলসহ জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে বিয়ের চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার রাতে মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের কিছমত রামপুর গ্রামে। সোনিয়ার পরিবারের লোকজন ও গ্রামবাসীর প্রচেষ্টায় তাকে তার খালাতো ভাইয়ের বাড়ী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে গতকাল শুক্রবার মির্জাগঞ্জ থানায় সোনিয়ার বাবা মোঃ হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে ৮জনকে আসামী করে নারী নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে।

সোনিয়ার পরিবার ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, কিছমত রামপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ১৫ বছরের কন্যা মোসাঃ সোনিয়া আক্তারকে একই গ্রামের মোঃ সোহরাব খানের বখাটে পূত্র নুরুল ইসলাম (২৫) তার খালাতো ভাই লোকমান, রেজাউল, হবিনুর, সোহেল, নিজাম, হানিফ সিকদারসহ ৭/৮ জনের একটি দল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আনুমানিক ৭টার দিকে তাকে জোরপূর্বক বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে যায়। ঘটনার পরপরই সোনিয়ার পরিবার ও গ্রামবাসীর প্রচেষ্টায় নুরুল ইসলামের খালাতো ভাই লোকমানের বাড়ী থেকে তাকে উদ্ধার করে বাড়ী নিয়ে আসে। এর একঘন্টা পর রাত ৮টার দিকে পুনঃরায় নুরুল ইসলাম সদলবলে ১০/ ১২ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জোরপূর্বক সোনিয়াকে তুলে নেয়ার চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে  কাঠালতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস,আই মোঃ আজিমুল ইসলাম ও এ,এস,আই মোঃ আনিসুর রহমান ঘটনাস্থলে পৌছলে তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এস,আই আজিমুল ইসলাম জানান ঘটনার সততা পেয়েছি অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

সোনিয়ার বাবা ঢাকায় ট্যাক্সিক্যাব চালক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, তার ৫ মেয়ে ও ১ ছেলের মধ্যে সোনিয়া ২য়। অভাবের তাড়নায় সোনিয়াকে ৫ম শ্রেণীর পর আর  পড়া লেখা করাতে পারেননি। তিনি বলেন,  বছর দেড়েক পূর্বে একই গ্রামের সোহরাব খানের ছেলে নুরুল ইসলাম ও তার পরিবার থেকে সোনিয়াকে বিয়ে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয় এবং জোর পূর্বক তুলে নেয়ার জন্য ভয় ভীতি দেখায়। কিন্তু তখন অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে সোনিয়া এবং আমরা কেউই এ বিয়েতে রাজি ছিলাম না। অব্যাহত চাপের মুখে এ ব্যাপারে নুরুল ইসলামের  আত্মীয় -স্বজন ও আমরা একটি বৈঠকে বসি এ খবরে সোনিয়া আক্তার ঘরের আড়কাঠের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ঘটনা টের পেয়ে আমরা সোনিয়াকে উদ্ধার করে মুমুর্ষু অবস্থায় বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই এবং দীর্ঘ একমাস চিকিৎসার সে সুস্থ হয়।

এ ঘটনার পর গ্রামের মোঃ মালেক হাওলাদার, নুর মোহাম্মদ তালুকদার, লাভলু কাজীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিলে  একটি শালিশ বৈঠকে সিদ্ধান্ত দেয়া হয় যতদিন পর্যন্ত সোনিয়ার বিয়ের বয়স না হবে ততদিন আর কোন রকম হয়রানি করা হবে না এবং এ ব্যাপারে  নুরুল ইসলাম ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত দেয়া হয়। এরপর সোনিয়াকে ঢাকায় নিয়ে রাখি। কোরবানির ছুটিতে সোনিয়া বাড়ীতে বেড়াতে এলে তাকে বিয়ে দেয়ার জন্য পুনঃরায় আমাকে হুমকী ধামকি দিতে থাকে এবং গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সোনিয়াকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ের চেষ্টা চালায়। আমি পুলিশ এবং গ্রামবাসীর প্রচেষ্টায় তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই।

এ ব্যাপারে মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আখতার মোর্শেদ জানান, সোনিয়াকে অপহরণ করে জোরপূর্বক বিয়ে করার দায়ে ৮জনকে আসামী করে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে এবং আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।