পটুয়াখালী জেলা প্রমাসকের কার্যালয়ে অগ্নিকান্ড

বরিশাল প্রতিনিধি ॥ পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের নেজারত শাখার অনিয়ম,দূর্নীতির ও স্বেচ্ছাচারিতার মূল হোতা নাজির আশ্রাফ কোন অদৃশ্য ইসারায় এখনও বহাল তবিয়াতে রয়েছে এ প্রশ্ন এখন জেলা প্রশাসনের প্রতিটি দপ্তরে। ভূমি হুকুম দখল শাখায় অগ্নি সংযোগ,কর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে চাকুরি নিয়োগ বানিজ্য, এল আর ফান্ডের মোটাঙ্কের টাকা আত্মসাৎ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মসূচী মূলক চাঁদাবাজিসহ একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসন বিভাগ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেননি। এমনকি অগ্নি সংযোগের ঘটনায় জেলা প্রশাসন কর্তৃক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও গোয়েন্দা শাখা প্রতিবেদনকে উড়িয়ে দিয়ে আশ্রাফ তার কৃতকর্মকে বহাল রেখে বেপরোয়া গতিতে চলছেন। সব কিছুকে থোরাইকেয়ার মনে করে তার স্বেচ্ছাচারীতা যেন দিন দিন বেড়েই চলছে। জেলা প্রশাসনের প্রতিটি দপ্তরে একই প্রশ্ন নাজির আশ্রাফের আসলে খুটির জোর কোথায়?

জানা যায়,২০০৪ সালের জুন মাসে আশ্রাফ ভূমি হুকুম দখল শাখায় প্রধান সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। এরপরই আশ্রাফ জড়িয়ে পরে একাধিক দুর্নীতিতে। সংশ্লিষ্ট তৎকালিন উর্ধ্বতন মহলের সহযোগীতায় বিভিন্ন খাত থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করে কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক বনে যান আশ্রাফ। শহরে একাধিক পাকা ভবনসহ নামে বেনামে ব্যাংকে জমিয়েছেন বিপুল পরিমান অর্থ । এরপর ২০০৮ সালের ১লা এপ্রিল উর্ধ্বতন মহলের সহযোগীতায় জেলা প্রশাসনের নেজারত শাখার  ভারপ্রাপ্ত নাজির পদটি  লাভ করেন আশ্রাফ। ৯ এপ্রিল আশ্রাফের বহাল পদটি লাভ করেন মোঃ সাইদুর রহমান নামে জেলা প্রশাসনের আর এক  কর্মচারী। ঐ কর্মচারী যোগদানের পর থেকেই আশরাফের কাছে একাধিকবার কাগজপত্র বুঝিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন বলে জানা যায়। কিন্তু আশ্রাফ নানা তালবাহানা করে সদ্যযোগদান করা সাইদুর রহমানকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দেন। এর ফাকে আশ্রাফ ভূমি হুকুম দখল শাখার অনিয়ম দূর্নীতিসহ একাধিক কৃতকর্মকে ঢাকার জন্য নানা ফন্দি ফিকির করলেও বিষয়টি একাধিক কর্মচারীদের মাঝে প্রকাশ পায়।

আশ্রাফ একই সময়ে ভূমি হুকুম দখল শাখায় অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিল বলে নির্ভর যোগ্য সুত্র প্রকাশ করে। তার কৃতকর্মকে ঢাকার জন্য ঠিক ঐ মাসের ২০ তারিখ সকাল আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে আশ্রাফ ভূমি হুকুম দখল শাখায় তরল পর্দাথ দ্বারা অগ্নি সংযোগ ঘটিয়ে উধাও হয়ে যায়। পরদিন তার এক আত্মীয়র দ্বারা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বরাবরে একটি ছুটির আবেদন পাঠান। ভূমি হুকুম দখল শাখায় অগ্নি সংযোগের বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও একাধিক মহলে তোলপার সৃষ্টি হলে তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ ইউছুফ আলী মোল্লাকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট (যার স্মারক নং-অঃ জেঃ ম্যাঃ/পটুয়া-২০০৯-৩১-সি)একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলে আশ্রাফের অগ্নি সংযোগ ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি বেড়িয়ে আসে ঐ তদন্ত প্রতিবেদনে। কিন্তু আশ্রাফ তৎকালিন জেলা প্রশাসক মোঃ রিয়াজ আহমেদ’র স্নেহধন্য থাকায় জেলা প্রশাসক পরে চাকুরিতে সদ্য যোগদান করা সহকারী কমিশনার সাইফুল ইসলামকে দিয়ে তার মনপুত একটি প্রতিবেদন তৈরী করেন এবং আশ্রাফ উল্লেখিত ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি স¤পূর্ণ ধামাচাপা দিয়ে আশ্রাফকে বহাল তবিয়াতেই রাখেন। পরপর কয়েকদিনে অগ্নিকান্ডর ঘটনা ও আশ্রাফের অনিয়ম দূর্নীতির বিষয়টি একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হলে পটুয়াখালী গোয়েন্দা শাখাসহ একাধিক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নামেন উক্ত ঘটনার তদন্ত করতে। এরপর পটুয়াখালী গোয়েন্দা শাখার এসআই মোঃ শহিদুল ইসলাম সুত্রঃ  পটুয়া/ডিএসবি/৬০-৯৭/১১৩৮ তারিখ০৪-০৫-০৯ খ্রিঃ এবং ঢাকা স্বারক নং ৫৫৪/০৩-০৭/সাঃ তারিখ ০৮-০৪-০৯ এর একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন পটুয়াখালী পুলিশ সুপার বরাবরে। যে প্রতিবেদনে সুষ্পষ্ট আশ্রাফের দুর্নীতি ও অগ্নিকান্ড ঘটনায় জড়িত থাকায় বিষয়টি উল্লেখ করেন।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়,এলএ কেস নং-১৪/০২-০৩,এলএ কেস নং-০৬/০৪ এলএ কেস নং-০১/০৫এলএ কেস নং-০৭/০৪-০৫ সংযুক্ত মোট ১৩টি মামলার গুরুত্বপূর্ন রের্কড পুড়ে যায়। তিনি আরো উল্লেখ করেন তদন্ত প্রতিবেদন কালে উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে আশ্রাফ পলাতক ছিল।

এছারাও নাজির আশ্রাফ জেলা প্রশাসন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে নিয়োগ বানিজ্য, বিভিন্নখাত থেকে মোটা অংক চাঁদাবাজি এল আর ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করারও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আশ্রাফের  এ কর্মকান্ডে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন খোদ জেলা প্রশাসনেরই একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।  অচিরেই তার এ লাগামহীন চাঁদাবাজী অনিয়ম,দুর্নীতি  ও কর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে নিয়োগ বানিজ্য বন্ধে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের   হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সংশ্লিষ্ট মহল।