ঝালকাঠিতে বোরো বীজের কৃত্রিম সংকট

আহমেদ আবু জাফর, ঝালকাঠি ॥ বোরো মৌসুমকে কেন্দ্র করে কৃষি বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ডিলারদের সিন্ডিকেটে  বীজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। সংকট সৃষ্টি হওয়ায় সরকার নির্ধারিত রেটের বীজ ধান অধিক দামে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অথচ জেলা কৃষি অধিদপ্তরের বীজ সংকটের কথা উড়িয়ে দিয়ে কোন সংকট নেই বলে জানান।

কৃষকরা বলছে বিএডিসি গুদাম থেকে বাড়তি দামে সামান্য বীজ বিক্রি করে ডিলারদের দেয়া হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ,  ডিলারদের কাছে বাড়তি দামে সরকারি বীজ পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষকরা জমিতে বীজ ফেলতে না পারায় শত শত হেক্টর জমির বীজতলা খালি পড়ে আছে।

স্থানীয় বিএডিসি গুদাম, বাসন্ডা, বাউকাঠি, মানপাশা, নবগ্রাম, পোনাবালিয়াসহ বিনয়কাঠির কৃষকদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া মেলে। দেখাগেছে ৪৭ জাতের বীজ না পাওয়ায় হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কৃষকরা গুদাম, বীজ ডিলার ও বিক্রেতাদের কাছে। এদিকে বীজতলা শুকিয়ে যাচ্ছে। অনুপায় হয়ে অধিক দামে বরিশাল থেকে বীজ এনে কিছু কৃষক বীজ রোপনতলায় বীজ বুনছে।

ঝালকাঠি বিএডিসির বীজ গুদাম কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় চেয়ার টেবিল রয়েছে কিন্তু কোন লোক নেই। কিছুক্ষন পর একজন এমএলএসএস পরিচয়ে তার নাম জানালেন সৈয়দ আবুল হোসেন। তিনি জানান এখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তা শারমিন জাহান বরিশালেই থাকেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবুল হোসেন সেদিনের মত প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন। তাই তাকেই কৃষকদের সাথে লেনদেন সহ সব কাজ করতে হয়।

৪৭ জাতের বোরো বীজ নিতে আসেন নথুল্লাবাদের কৃষক রতন আলী হাওলাদার, নলছিটির নাচনমহলের কৃষক আলাউদ্দিন খলিফাসহ অনেকেই। তারা জানালেন একাধিকবার এখানে এলেও বীজ ধান পাননি তারা। ২৮ ও ২৯ জাতের বীজ থাকলেও ভাল ফলন জাতের ৪৭ জাতের বীজ এখানে নেই।

এ ব্যাপারে বীজাগারের এমএলএসএস আবুল হোসেন জানান, চলতি বছর ৪৭ জাতের বোরো বীজ মাত্র ৭ টন বরাদ্দ ছিলো। চাহিদা ছিল ৫০ টনের উপর। যা আসার সাথে সাথে শেষ হয়ে গেছে। এ জাতের ফলন ভাল ও চাল মোটা হওয়ায় চাহিদা বেশী।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাযায়, গত বছর এ জেলায় ৮ হাজার ৯৪৯ হেক্টরে বোরো আবাদ হয়েছে। চলতি বছরে ৯ হাজার ৯৫৪ হেক্টরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা  নির্ধারন করা হয়েছে। এব্যাপারে ঝালকাঠি বেঙ্গল ষ্টোরের বীজ ডিলার রফিক সাংবাদিকদের জানান, গত বছর ৪৭ জাতের পরীক্ষামূলক বোরো আবাদ ভালো হওয়ায় এবার কৃষি বিভাগের বিএডিসির মাধ্যমে বেশী বীজ না আনার কারন জানানেই। আমরা খুব সামান্য বরাদ্দ পাওয়ায় তা শেষ হওয়ায় এর বিকল্প হিসেবে বোরো ভিত্তি-৮ জাত বিক্রি করছি।

কৃষকরা আরো জানান, কৃষি বিভাগ ও ডিলারদের একটি অসাধু  সিন্ডিকেট কৌশলে এ বীজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে আমাদের কাছ থেকে অবৈধ ভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এব্যাপারে কোন মনিটরিং নেই। ঝালকাঠি কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মজিবুল হক মিয়া বলেন, গত বছর ৪৭ জাতের বোরো আবাদ পরীক্ষামূলক ভাবে ভাল ফলন হওয়ায় আগামী বছর বেশী বীজ সংগ্রহ করা হবে। তবে বীজের কোন সংকট নেই। কারন ৪৭ না পেলে ২৯ নিয়ে আবাদ করবে কৃষকরা। কিন্তু চলতি বছরের জন্য বিএডিসির কাছে বেশী বরাদ্দ চাওয়া হয়নি কেন তার কোন সদুত্তোর উপ-পরিচালক দিতে পারেননি। তিনি বলেন বিএডিসির কাছে চাহিদানুপাতে বীজ পাওয়া যায়না। অতিরিক্ত মূল্যে বীজ বিক্রয় করছে বলে কোন অভিযোগ পাইনি বলে তিনি জানান।