বরিশাল বিএনপির গ্রুপিং আচরণে ক্ষুব্ধ হাই কমান্ড

শাহীন হাসান, বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সংঘাত আর সংঘাতের রাজনীতি; অস্থির হয়ে উঠেছে বরিশাল বিএনপি। ক্ষমতাসীন দলের থেকে এখানকার রাজনীতিতে বিএনপিই বেশি শক্তিশালী। যা দমিয়ে রাখতে ব্যর্থ এখানকার পুলিশ প্রশাসনও। সরোয়ার আর কামাল পন্থিদের এই অন্তর্দ্বন্দ্ব বছরের পর বছর ধরে বেপরোয়াভাবে চলতে থাকলেও কিছুই করার নেই এখানকার এক সময়কার বাঘা সাংসদ সরোয়ারের। সর্বশেষ গত ২০ নভেম্বর তারেক জিয়ার জন্মবার্ষিকীতে বরিশাল কলেজ ছাত্রদলের দুই গ্র“পের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা-মামলা সাংসদ সরোয়ার সহ খোদ দলের হাই কমান্ডকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্য এসআই হাবিবুর রহমান সরোয়ার ও কামাল পন্থিদের ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেন। যা দলীয় হাই কমান্ডকেও ভাবিয়ে তুলেছে। অবশ্য রাজনৈতিক হিসেব বলছে ভিন্ন কথা। যত বেশি গ্রূপিং ততবেশী সংগঠন শক্তিশালী। দলীয় কোন কর্মসূচি পালনে এখানকার সাংসদ সরোয়ার পন্থীরা এবং বরিশাল জেলা সভাপতি কামাল পন্থিরা সর্বদাই পৃথক-পৃথক কর্মসূচি পালন করায় নেতীবাচক দৃষ্টিতে সরোয়ার-কামালের এই বিভাজনকে দেখা হলেও প্রকৃত অর্থে এতে সংগঠন হচ্ছে শক্তিশালী।

সাংসদ সরোয়ারের একনায়কতন্ত্র মানতে নারাজ বিএনপির এই দলটি দীর্ঘদিন যাবৎ পৃথক-পৃথক কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে নিজেদের অজান্তেই তাদের দলকে পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ শক্তিশালী করে তুলেছে। সেক্ষেত্রে যুক্তি সরোয়ার বনাম কামাল পন্থীরা গ্রুপ ভারী করতে প্রতিদিন তাদের কর্মীদের খোঁজ-খবর নিচ্ছে। তবে প্রবলেম একটাই এখানকার বিএনপির দুটি গ্র“পই আক্রমণাত্মক। বিএনপিই মারে বিএনপিকে। যা বসে বসে দেখছে ক্ষমতাসীন দল। বদনাম হচ্ছে প্রশাসনের। দুই গ্র“পের এ প্রতিযোগিতায় প্রতিটি প্রোগ্রামে কর্মীদের অংশগ্রহণ বর্তমান বরিশাল বিএনপিতে যেন বাধ্যতামূলক।

জানা গেছে, সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০০৩ সালে বিএনপিতে দুটি গ্রুপের আবির্ভাব ঘটে। মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও মেয়র আহসান হাবীব কামাল এবং জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবায়েদুল হক চাঁন দলীয় সিদ্ধান্তকে অমান্য করে মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় তাদেরকে সে সময় দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছুদিন আগে এবায়েদুল হক চাঁনের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয় হাইকমান্ড। ২০০৯ সালের জুন মাসের ১ম সপ্তাহে আহসান হাবীব কামালের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়া হয়। কামালের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পর ফের বিএনপিতে প্রকাশ্য গ্রুপিং রাজনীতির সূচনা ঘটে।

সরোয়ার-কামাল গ্র“পের মধ্যকার কোন্দলে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্ম দিয়েছে। উভয় গ্রুপে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। একই বছরের ১৫ জুন মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে বরিশালে আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে বিএনপির হাইকমান্ড। বিশেষ করে মহানগর আহবায়ক কমিটি গঠনের শুরু থেকেই এখানে দলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব আরো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এরপর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে থাকে। আস্তে আস্তে আস্থাভাজন সমর্থকরা কামালের ঘরোয়া রাজনীতি থেকে দূরত্বে অবস্থান করে। গত বছরের অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে এক বৈঠকে প্রকাশ্যেই এমপি সরোয়ার শিবিরে ভিড়ে যান জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মনোয়ার হোসেন জিপু। একই সঙ্গে সরোয়ার শিবিরে ভিড়েছেন বরিশাল কোতোয়ালী থানার সভাপতি শেখ আবদুর রহিম, সাবেক সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান আজিজুল হক আক্কাস। যদিও রহিম আক্কাস এক সময়ে সরোয়ার গ্র“পেরই সমর্থক ছিলেন। মাঝখানে দলীয় পদ বঞ্চিত হয়ে সরোয়ারের গন্ডি থেকে বের হয়ে কামালের রাজনীতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন। এরও আগে কামালের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসেছেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাড. আলী হায়দার বাবুল। সর্বশেষ তার গ্র“পে যোগ দেন বিএনপির তৃতীয় শক্তি হিসেবে পরিচিত এবায়েদুল হক চাঁন।

ওদিকে একনায়কতন্ত্র ধরে রাখার নেশায় বিভোর সাংসদ সরোয়ার। যে কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুতে তার কর্মীদের দিয়ে জেলা কমিটি বতিলের দাবি জানিয়ে কামাল-শিরিনের বিরুদ্ধে মিছিল-মিটিং-সমাবেশ করছেন। তাদের এহেন আচরণে অতিষ্ঠ দলের হাইকমান্ডও। যে কারণে কোরবানি ঈদের পরে তাদের গ্র“পকে নিয়ে দলের মহাসচিব আপোষ বৈঠক বসাবেন বলে আশ্বাস দেন। সাংসদ সরোয়ারের নামে কথা রয়েছে নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য এমন কিছুই নেই যা করতে পারেন না এই নেতা। যার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি তার কর্মীদের হাতে কেন্দ্রীয় বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান রাজনকে কুপিয়ে আহত করার মাধ্যমে। সে ঘটনায় সাসংদ সরোয়ার সহ তার কয়েক কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়। যদিও পরে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রাজন ঘোষণা দিয়েছিলেন মামলাটি প্রত্যাহার করার। কিন্তু কেন সে মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে তার রহস্য এখনও বরিশালবাসীর কাছে অস্পষ্ট।