কমপিউটার সায়েন্স পড়বো, কি পড়বো না?

জাকারিয়া স্বপন, প্রিয় ডটকমঃ আজ অনেক দিন পর আবার বুয়েটে গিয়েছিলাম। আসলে আমার নিজের ডিপার্টমেন্ট "কমপিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনীয়ারিং" (সিএসই)-তে গিয়েছিলাম। নতুন শিক্ষা বর্ষে ভর্তির ফলাফল দিয়েছে। আগামীকাল তাদের "বিভাগ" নির্বাচনের দিন। সেই উপলক্ষ্যে সিএসই'র শেষ বর্ষের ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম দেড়শ জন ছাত্রছাত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে ওরা আমাকেও দাওয়াত দিয়েছিল। মূল উদ্দেশ্য হলো, নতুন এই ছেলেমেয়েরা কোন সাবজেক্ট পড়বে, সেই বিষয়ে কিছুটা গাইড করা।

ওরা আগামী ৩ দিন ধরে বিভিন্ন "বিভাগ" নির্বাচন করবে। আমার এই লেখার উদ্দেশ্য হলো ওই তরুন ছাত্রছাত্রীদের জন্য, তাদের চিন্তাগুলোকে একটু গুছিয়ে দেয়ার জন্য। অন্যদের এই লেখাটি না পড়াই ভালো। কারণ, শুধুমাত্র ওদের চিন্তাকে সাহায্য করার জন্য আমি আমার ব্যক্তিগত কিছু তথ্য ওদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি (যা অনেকের কাছে ভালো লাগবে না)। এবং পাশাপাশি একই কারণে লেখাটি আমি "তুমি" সম্ভোধনেও লিখছি।

সকালে এতো বেশি মন খারাপ ছিল যে, বুঝতে পারছিলাম না বিকেলে এই অনুষ্ঠানটিতে যেতে পারবো কি না। দুপুরের পর মনে হলো, না এটা আমার দায়িত্ব – আমাকে যেতেই হবে। গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়লাম রিক্সায়। নিজেকে আবিষ্কার করলাম সেই সময়টাতে, যখন আমি বুয়েটে ভর্তি হবো বলে একটা ফাইল হাতে ঘুরঘুরি করতাম। নিজের চেহারাটা মনে করার চেষ্টা করলাম – নাহ, পারলাম না। অনেকটা সময় পার হয়ে গিয়েছে। ওই সময়ে আমি দেখতে খুবই টিংটিং-এ ছিলাম। আমার আজকের অবয়বের সাথে কোনও মিল নেই। কিন্তু আমার চোখে ফুটে উঠলো, অনেকগুলো তাজা মুখ – যারা ভবিষ্যতের দুয়ারে পা রাখতে যাচ্ছে। ওরা আজ রাতেই সিদ্ধান্ত নেবে – কোন ডিপার্টমেন্টে পড়বে। এটাই তার জীবনের গতিকে ঠিক করে দেবে। আজ থেকে এক যুগ পরে, তুমি কী করবে সেটা নির্ধারিত হয়ে যাবে। রিক্সায় বসে বসে ভাবছিলাম, কী বলবো তোমাদেরকে। আমি কি তোমাদেরকে সিএসই পড়তে বলবো? নাকি ইলেক্ট্রিকাল? নাকি মেকানিক্যাল নাকি সিভিল?

এ রাস্তা, ও রাস্তা করে রিক্সাটি যখন "ঢাকা কলেজ"-এর সামনে এলো, তখন রিক্সাটি ঠিক গেটের সামনে এসে কিছুটা থামলো। মিরপুর সড়কের এই অংশে রিক্সা চলাচলের জন্য সরু একটা বাই-রোড করে দেয়া হয়েছে। রিক্সাগুলোকে লাইন দিয়ে চলতে হয়। সামনেই নিউ মার্কেট – অনেক ভিড়। তাই রিক্সা থেমে থেমে যাচ্ছে। ঢাকা কলেজের গেটে এসে আমার বুকটা হু হু করে উঠলো। আমার জীবনে সবচে ভালো দুটি বছর কেটেছে এই কলেজে, এই কলেজের হোস্টেলে। এই গেট দিয়ে কত গিয়েছি, কত স্মৃতি – সব কিছু এক সাথে এসে গলার কাছে জমা হয়েছে যেন।

ঢাকা কলেজে এইচ.এস.সি পড়াটা ছিল আমার জীবনের সবচে ভালো সিদ্ধান্ত। এই কলেজে না পড়লে, আমি আজকের এই আমি হতাম না। এই কলেজে না পড়লে, আমি জীবনের এতোগুলো ভালো বন্ধু পেতাম না। জীবনকে উল্টে-পাল্টে দেখার মতো সুযোগ পেতাম না। এই কলেজের গন্ডি পেরিয়ে যখন বুয়েটের চত্তরে ঢুকতে যাবো – তখন কোথায় পড়বো, কোন বিভাগে পড়বো – সেটা নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল। সেই ঢাকা কলেজের গেটটিকে আজকে কেমন যেন মলিন দেখালো। ঠিক আগের মতো টগবগে যুবক মনে হলো না কলেজটিকে। হয়তো ওর সামনের অবয়বটি মলিন করে ফেলেছ অতিরিক্ত ময়লা, ট্রাফিক, ফেরিওয়ালা আর সীমাহীন মানুষ। আমাদের সময় এই গেটের সামনে গাছের চারা বিক্রি হতো, ফুলের টব বিক্রি হতো। অল্প কিছু মানুষ বিকেলে সেখান থেকে সবুজ গাছ কিনে নিয়ে যেতেন। কেমন একটা পরিষ্কার তকতকে ব্যাপার ছিল। আমরা সকালের নাস্তার জন্য পাউরুটি আর কলা কিনে গল্প করতে করতে বিকেলে হোস্টেলে ফিরতাম। কেমন একটা মায়াবি ব্যাপার ছিল। কিন্তু কেন জানিনা, সেই জায়গাটিকে অনেক বেশি রুক্ষ মনে হলো আজ।

নিউ মার্কেটের ট্রাফিক জ্যাম ছাড়িয়ে যখন পলাশীর মোড়ে সিএসই বিভাগের নতুন ভবনে প্রবেশ করলাম, তখন ঘড়ির কাঁটা চারটা ছুইছুই করছে। রিক্সা থেকে নামতেই দু'জন ছাত্র আমাকে স্বাগত জানালো। আমি জানতে চাইলাম, "কেউ এসেছে কি না?" তারা জানালো, অনেকেই এসে গেছে। তারপর তৃতীয় আরেকজন ছাত্র আমাকে সেমিনার রুমে নিয়ে গেলো – সেখানে গিয়ে দেখি পুরো হল ভর্তি মানুষ। বুয়েটে চান্স পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা তাদের পরিবারসহ এসেছে।

অনেকেই হয়তো জানে, তারা কোন বিষয়টি নির্বাচন করবে। তারপরেও হয়তো এসেছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি নেয়ার আগে আরেকবার শুনে নিতে – বিভাগের শিক্ষকরা কী বলেন, তাদের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা কী বলেন। তাদের সাথে দীর্ঘ তিন ঘন্টার মতো সময় কাটালাম। সেই লম্বা সময় থেকে কিছু কথা আমি আবারো লিখে দিচ্ছি তাদের জন্য, যারা আসতে পারেনি এবং আগামী কয়েকদিন ধরে এই বিভিন্ন বিভাগ নির্বাচনের চক্করের ভেতর দিয়ে যেতে থাকবে।

তোমাদের অনেকের মতো, এইচএসসি পাশ করার পর আমারও মাথা ঘুরছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো একটি সুপার প্রতিযোগিতামূলক সিস্টেমের ভেতর দিয়ে যেতে গিয়ে মাথা না ঘুরিয়ে উপায় আছে বলে আমি মনে করি না। আমি নিশ্চিত, তোমাদেরও একই অবস্থা। এমনিতেই ডাক্তারি পড়বে, নাকি প্রকৌশল, নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় – এগুলো নিয়ে তো একটা টেনশন থাকেই; তার উপর আবার এসে যুক্ত হয় বুয়েটের কোন ডিপার্টমেন্টে পড়বে সেই প্রশ্ন। যেদিন আমার বুয়েটের ফলাফল বের হয়ে গেলো, তখন আমার হাতে নীচের অপশনগুলো ছিল –

ক). চীনে ফুল স্কলারশীপ (তখন ভিসা নেয়া হয়ে গেছে, টিকিট কাটা বাকি)
খ). বুয়েটের ইঞ্জিনীয়ারিং (মেধা তালিকায় এমন জায়গায় যেকোনও বিভাগ পাবো)
গ). বুয়েটের স্থাপত্য বিদ্যা (ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকার উপরের দিকে)
ঘ). ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ এবং
ঙ). ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগ।

আমার তো তখন মাথায় হাত। কোনটা রেখে কোনটা ছাড়ি। বুয়েট তখন মাত্র কমিপউটার বিজ্ঞানে আন্ডারগ্রাজুয়েটে ছাত্র নিচ্ছে – একদম নতুন ডিপার্টমেন্ট। আমরাই হবো প্রথম গিনিপিগ। এর বিপরীতে হাত ছানি দিচ্ছে আর্কিটেকচার বিভাগ, যে ভবনটি দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। আরেক দিকে টানছে ঐতিহাসিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস- অর্থনীতি বিভাগ, নইলে ফার্মেসী!

এর কিছু দিন আগেই ডঃ আবদুল্লাহ-আল-মূতি শরফুদ্দিন স‌্যারের একটি লেখা "যন্ত্র দানবেরা আসছে" পড়ে মাথায় রোবট আর নানান ধরনের অদ্ভুৎ স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। স্যারের সেই লেখা আমার উপর ভীষণ দাগ কেটে গেলো। তোমরা এখন ইন্টারনেট চিনে গেছো, সব তথ্য হাতের কাছে। আমাদের তখন ই-মেইল পর্যন্ত ছিল না, ব্রাউজিং তো অনেক দূরের কথা। বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে কিংবা আমেরিকায় আই.এস.ডি দিয়ে ডায়াল-আপ করে হাতে গোণা কয়েকজন শিক্ষক আমেরিকা অনলাইন ব্যবহার করতেন শুনেছিলাম। তাই নির্ভর করতে হয়েছিল, একান্তই নিজের ইচ্ছের উপর।

আমারও তোমাদের মতো একটা দিন ফর্ম পূরণ করতে হলো – আমি চোখ-কান বন্ধ করে "সিএসই" দিয়ে ময়মনসিংহ চলে গেলাম। এবং আজ এতোটা বছর পর আমার মনে হয়, আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কেন, সেই কারণগুলোই বলছি। তাতে হয়তো তোমাদেরও সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।

১. আমি কখনই কাউকে বিশেষ কোনও সাবজেক্ট পড়তে পরামর্শ দেই না। এটা আমার চরিত্রে নেই। আমি সব সময় যে কথাটা বলি, এটা আজও ওই অনুষ্ঠানে বলেছি – আবারও বলছি, তোমার যা পড়তে ভালো লাগে, তুমি যা উপভোগ করবে – তুমি সেটাই পড়ো। আমি শুধু বলতে পারি, আমি কেন সিএসই পড়েছি। আমি কখনই বলতে পারবো না, সিএসই ভালো নাকি ইলেক্ট্রিকাল ভালো; আমি বলতে পারবো না সিভিল ইঞ্জিনীয়ারিং পড়া ভালো নাকি আর্কিটেকচার পড়া ভালো। আমি শুধু একটা কথাই বলতে পারি – জীবনটা তোমার। তুমি যেটা পড়ে আনন্দ পাবে, যে কাজ করে আনন্দ পাবে – সেটাই পড়ো।

আমি আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে বলতে পারি – সিএসই-তে পড়াটা ছিল আমার জীবনের আনন্দতম মূহুর্ত। সে কী যে আনন্দ! এমনও সময় গিয়েছে, সারাটা রাত ল্যাবে কাটিয়ে চোখ মুছতে মুছতে হলে ফিরেছি। আনন্দ ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না।

২. বেশির ভাগ মানুষেরই একটা প্রশ্ন থাকে – এটার চাকরীর বাজার কেমন! লেখাপড়ার সাথে চাকরীর একটা সম্পর্ক আছে বটে। কিন্তু সেটা একটা গড়পড়তা প্রশ্ন। ১৬ কোটি মানুষের দেশ থেকে বেছে বেছে সবচে সেরা ছাত্রছাত্রীরা এখানে পড়তে এসেছে। এরা যদি চাকরী কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ – সেটা ভেবে বিষয় নির্বাচন করে, এর থেকে দুঃখের আর কিছু হতে পারে না। আমি বিশ্বাস করি, তোমরা অনেক ভালো; তোমরা যে বিষয়ই নাও না কেন – চাকরীর কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এই গ্রহে বিভিন্ন রকমের এক্সপার্টিজ প্রয়োজন রয়েছে। চাকরী তুমি একটা পাবেই। তার চেয়ে বড় কথা হলো – সেই চাকরী তুমি উপভোগ করছো কি না। যদি সকাল বিকাল অফিসকে গালি দিয়ে একটা চাকরি তুমি করো, তার থেকে জেলখানায় থাকাটা আমার কাছে অনেক বেশি শ্রেয়।

৩. অনেকেরই বেতন নিয়ে একটা চিন্তা থাকে – কোন প্রফেশনে বেতন বেশি। কমপিউটার বিজ্ঞানের লোকরা বেশি টাকা পায়, নাকি ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনীয়ারিং-এর লোকরা বেশি টাকা পায়। এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর আমি সাধারণত দেই না। আমি তাদের দিকে করুনার চোখে তাকিয়ে থাকি। নিজের সামনে এমন লোভী একটা মানুষকে দেখতে আমার ভালো লাগে না। আমি লোভী মানুষদের ঘৃণা করি।

একটা মানুষের প্রফেশন হলো তার সারা জীবনের সঙ্গী। প্রফেশন হলো, তার জীবন। যাকে নিয়ে সারাটা জীবন কাটাতে হবে – সেটা কিভাবে বেতন দিয়ে নির্বাচিত হতে পারে – আমি জানিনা।

৪. আমার সারা জীবনের স্বপ্ন ছিল, আমি সিলিকন ‌ভ্যালীতে কাজ করবো। আমি দেখতে চাই, তারা কিভাবে কাজ করে। সেজন্য আমি আমেরিকার আর কোনও শহরের দিকে তাকাইনি। আমি আমেরিকায় থাকার জন্য আমেরিকা যাইনি। আমি সিলিকন ভ্যালীতে কাজ করার জন্য আমেরিকা গিয়েছিলাম। সিলিকন ভ্যালী যদি আন্দামানে হতো, আমি তাহলে আন্দামান যেতাম। একজন চিত্রশিল্পী যেমন ফ্রান্সে যান, একজন তথ্য প্রযুক্তির মানুষের বেলায় সেটা হলো সিলিকন ভ্যালী।

সিলিকন ভ্যালী হলো তথ্য প্রযুক্তির মক্কা। যে ওখানে যায়নি, সে বুঝতেই পারবে না, ঠিক কী মিস করেছে। পণ্য এবং প্রযুক্তি তৈরী হয় ওখানে; আর সারা দুনিয়ার মানুষ সেটা ব্যবহার করে। তোমাদের যদি সিলিকন ভ্যালীতে কাজ করার ইচ্ছে থাকে, তাহলে অবশ্যই কমিপউটার বিজ্ঞান/ইঞ্জিনীয়ারিং পড়তে হবে। এবং যত আগে সেখানে যাবে, ততই তোমার জন্য মঙ্গল।

৫. কারো যদি এন্টারপ্রেনর হওয়ার ইচ্ছে থাকে, তাহলে অবশ্যই কমপিউটার বিজ্ঞান। বাংলাদেশের মানুষের অনেক দিনের একটা ট্রাডিশন হলো, সরকারী চাকুরী করা। এটা মূলত এসেছে ব্রিটিশদের গোলামী করার পর থেকে। তখন ব্রিটিশদের অফিসে সরকারী চাকুরী মানে বিশাল ব্যাপার। দরীদ্র এই জনগোষ্ঠির জন্য সেটা ছিল চরম পাওয়া। এখন সেই ধ্যান-ধারনার অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। তবে, আরেকটি ধারনা এখনও রয়ে গিয়েছে। আমরা সবাই মনে মনে একজন বিজ্ঞানী হতে চাই। কিন্তু বাংলাদেশে প্রকৃত অর্থে কোনও বিজ্ঞানী নেই। আর প্রযুক্তিখাতে বিজ্ঞানী হওয়া আরো বেশি কঠিন। কারণ, বিজ্ঞানী হতে, গবেষণা করতে যে পরিমান রিসোর্স প্রয়োজন আমাদের দেশ সেটা দিতে পারে না। যদি তোমরা এই ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী হতে চাও, তাহলে সেটা ভালো করে ভেবে নিও। সেটা খুবই একটা দূর্গম পথ। এমনকি ভালো একজন এন্টারপ্রেনর হওটাও ভিষণ কঠিন কাজ। স্টিভ জবসের জীবনী পড়লেই বিষয়টা বুঝতে পারবে। স্টিভ জবস বিজ্ঞানী ছিলেন না, তিনি একজন এন্টারপ্রেনর ছিলেন।

তবে, প্রতিদিন নতুন নতুন বিষয় নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগলে কমপিউটার বিজ্ঞান। নতুন সমস্যা এবং তার সমাধান নিয়ে কাজ করতে চাইলে অবশ্যই কমপিউটার বিজ্ঞান। এই পৃথিবীতে কমপিউটার বিজ্ঞান হলো একটি বিষয়, যেখানে প্রতিদিন নতুন ঘটনা ঘটছে। আর কোনও ক্ষেত্রে এতো দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে না। আজ থেকে ১০ বছর পর এই গ্রহের চেহারা কী হবে, আমরা কল্পনাও করতে পারছি না।

৬. তোমাদের অনেকের কাছেই মনে হতে পারে, কমপিউটার বিজ্ঞান মানেই হলো একগাদা প্রোগ্রামিং। তা কিন্তু নয়। সবাই তো আর সফটওয়্যার ইঞ্জিনীয়ার হয় না। আর তুমি একবার সফটওয়্যার ইঞ্জিনীয়ার হলেই যে সারাটা জীবন প্রোগ্রামিং নিয়েই থাকতে হবে, সেটাও কিন্তু নয়। এই এলাকাটা অনেক বিশাল। এখানেও নিজের পছন্দের মতো জায়গা বেছে নেয়া যেতে পারে। তাই পুরো দৃস্টি শুধু মাত্র প্রোগ্রামিং-এর দিকে দিয়ে রেখো না। এই রকম টানেল ভিশন ভালো নয়।

৭. বিগত এক দশকে বাংলাদেশেও সফটওয়্যার শিল্পের অনেক সুযোগ তৈরী হয়েছে। এবং আমার ধারনা, আগামী দশ বছরে এর ব্যাপক উন্নতি হবে। আসলে আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশকে যদি একটি প্রায়-উন্নত দেশে পরিনত হতে হয়, তাহলে দুটো বিষয়ই সেটা করতে পারে – একটি হলো কৃষি, আর দ্বিতীয়টি হলো তথ্য প্রযুক্তি। আমি অন্য বিষয়গুলোকে ছোট করছি না। আমি বলতে চাইছি, এই দুটো ক্ষেত্রে বিশাল আকারের এ্যাফার্ট দিলে, দেশের চেহারা পাল্টে যাবে। অন্য কোনও ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব বলে আপাতভাবে মনে হচ্ছে না। আমি দেখতে পাচ্ছি, আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশে অনেক তরুন এন্টারপ্রেনর তৈরী হবে। যারা আজকে কমপিউটার বিজ্ঞান পড়বে, তারাই হবে আগামী দিনের এন্টারপ্রেনর।

সবশেষে আমাকে যদি বলো, আমি কেন এটা পড়েছি – এক কথায় উত্তর হলো, "আই জাস্ট লাভ ইট।" আমি আমার প্রতিটি দিন উপভোগ করি। একটি দিনের জন্যেও, একটা মুহুর্তের জন্যেও আমার কখনই মনে হয়নি, আমি অন্য বিষয় কেন পড়িনি!

আমি এটা পড়েছি বলে, তোমাদের কারো এটা পড়তে হবে – কখনই সেটা করো না। তুমি তোমার আনন্দের জায়গাটা বেছে নাও। তুমি যখন পাশ করে প্রতিষ্ঠিত হবে, তখন যদি বেঁচে থাকি, আমাকে এসে একদিন বলে যেও, এই সিদ্ধান্তের কারণে তোমার জীবন কতটা অর্থবহ হয়েছে; তোমার বেঁচে থাকাটা কতটা আনন্দময় হয়েছে। আমি চাই, তোমরা আনন্দের সাথে বেঁচে থাক। এই গ্রহে তুমি দ্বিতীয় বার আসার সুযোগ পাবে না। এটা হলো ওয়ান ওয়ে জার্নি। একবার ভিন্ন পথে চলে গেলে, সেখান থেকে ট্র্যাক পরিবর্তন করাটা খুবই কঠিন। তুমি যা আনন্দের সাথে করবে বলে মনে করছো, যে কাজ দিন-রাত বিনা প্রশ্নে করতে পারবে বলে মনে করছো – সেটাই বেছে নিও।

তোমাদের জন্য থাকলো অনেক শুভ কামনা।